শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কওমি স্বীকৃতি ও তথাকথিত সুন্নিদের প্রতিবাদ; একটি পোস্টমর্টেম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাজী হামদুল্লাহ

তথাকথিত সুন্নি সমাজ কওমি মাদরাসাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারের প্রতি বাষ্পীয় হুশিয়ারী উচ্চারণ করে ১৭ ও ১৮ তারিখ মানববন্ধন করার কথাও বলেছে তারা। তাদের এই প্রতিবাদের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে মিডিয়াহীন সংবাদ সম্মেলনে।

১/ কওমিরা উগ্রপন্থী ও জঙ্গিবাদী।
২/ কওমিরা সরকারের আনুগত্য করেনি।
৩/ স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণায় জাতি স্তম্ভিত।

* তাদের সংবাদ সম্মেলনের নিউজ পড়ে এ তিনটি কারণের চেয়ে বেশি আর কিছু পাইনি। চিন্তা করে দেখুন, কতো বড় বাটপারের দল এরা! গত কয়েকদিন আগে বাম ঘরানার একটি অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের উপ-পুলিশ কমিশনারকে পেয়েছিলাম। সেখানে তার স্পষ্ট বক্তব্য ছিলো, 'দেশের কোন জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডেই কওমি মাদরাসার সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি।' খোঁজ নিলে দেখা যায়, ভার্সিটি বা বখাটে তরুণরাই এসব কাজে জড়িত।গুলশান হামলা ও শোলাকিয়ার হামলা সেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে।

এ ছাড়া নিকট এবং দূরবর্তি ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, দেশে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বেধর্মীদের চেয়েও তথাকথিত সুন্নিরা তথা মাজারপূজারী বিদআতীরাই অধিক জড়িত। গত কয়েকদিন আগে সিলেটের ঘটনা এর জলন্ত প্রমাণ।

তারা বলেছে, উগ্রবাদীদেরকে সরকার পুরুস্কৃত করেছে। তাহলে নিশ্চয়ই এ সরকারের মাথা খারাপ বা সরকারও উগ্রবাদী কিংবা উগ্রবাদীদের সহযোগী! তাহলে এতোদিন এই উগ্রপন্থী সরকারের গোলামী কেন করেছেন? আপনারাও কি উগ্রপন্থী, আইমিন জঙ্গিবাদী?

* তাদের দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিলো, কওমিরা সরকারের অনুগত নয়। সরকারের আনুগত্য বলতে তারা কী বোঝাতে চায়? রাষ্ট্রের সঠিক-ভুল যে কোন সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে? তাহলে আমরা বলবো সুন্নিরাই সরকারের আনুগত্যশীল নয়। কারণ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কওমি মাদরাসাকে সনদ দেয়া হবে, কিন্তু তারা তা মানতে চাইছে না।

যদি তাদের এই সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ সরকারের আনুগত্যে অন্তরায় না হয়, তাহলে ধর্মীয় স্বার্থে কওমি মাদরাসার অবস্থান কেন আনুগত্যের অন্তরায় হবে?

তারা যে কারণে, যে যুক্তিতে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে কওমি মাদরাসাও একই যুক্তিতে প্রতিবাদ করেছে। সুতরাং স্বাধীনতার (গণতান্ত্রিক) অধিকার নিয়ে সরকার বিরোধী; তা বলার কোন অবকাশ নেই।

দেশের আইনের প্রতি কারা অধিক শ্রদ্ধাশীল তা আশা করি সরকারকে বোঝাতে হবে না। সরকার খুব অবগত কারা আয়কর ছাড়াই কোটি টাকার অবৈধ মাজারী ব্যবসা করে। সারা বছর ক্লাসে না থেকেও বছর শেষে কিছু টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট সুন্নি মাদরাসাতেই মেলে, সেটা আর সরকারকে বোঝাতে হবে না। সুতরাং এখান থেকেও বোঝা যায় কারা আনুগত্যশীল।

ভালোভাবে যাচাই করলে একটি বিষয় খুব পরিস্কার হয়, কওমি মাদরাসা সরকারের ওই কাজগুলোরই প্রতিবাদ করেছে, যেগুলো ইসলাম এবং মুসলামানদের জন্য ক্ষতিকর। মুসলমানদের অধিকার আদায়ের জন্যই কওমিদের যতো সংগ্রাম যতো সরকার বিরোধী অবস্থান। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন মুসলমান হিসেবে, কওমির আন্দোলন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনও বটে। এর বাস্তব প্রমাণ ক'দিন আগে গণভবনে পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র কওমিরাই গ্রীকদেবীর মূর্তি সরানোর দাবী করে আসছিলো। পরে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, এই মূর্তি স্থাপন একটি হাস্যকর বিষয়। এটা সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

এখান থেকেও স্পষ্ট হয়, কওমির আন্দোলন-সংগ্রামে কারো আনুগত্যতার প্রশ্ন অমূলক। যাদের আন্দোলন মুসলমান; চাই সে প্রধানমন্ত্রী হোক বা পথের ফকীর, সবার ধর্মীয় অধিকার আদায়ের জন্য।এ ক্ষেত্রে ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে কারো অনুগত হবার প্রশ্নই আসে না। এটা কওমিদের কাজ নয় বরং নামধারী সুন্নিরা এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশে।

* তাদের আরেকটি অভিযোগ হলো, এই স্বীকৃতি প্রদানে জাতি স্তম্ভিত। কথাটা একেবারেই মিথ্যা এবং ফোলানো-ফাঁপানো। জাতি নয় বরং জাতির একাংশ তথা মাজারপূজারী সুন্নিরা স্তম্ভিত। কওমি বিদ্বেষী ও ইসলাম বিরোধিরা তম্ভিত।

দেশের কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে আছে কওমি মাদরাসা। মানুষের মনের গহীনে জড়িয়ে আছে কওমির প্রতি ভালোবাসা। এর কোন প্রমাণ দিতে হবে না, সবার সামনে তা উন্মুক্ত।

সুতরাং এসব তথাকথিত সুন্নিদের ধোঁকায় সরকার আর পড়বে না, এটাই আমাদের বিশ্বাস। জাতিও তাদের থেকে সতর্ক থাকুক; এটাই কামনা।

কাজী হামদুল্লাহ
হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম

কওমি সনদের স্বীকৃতি বাতিলে সুন্নী জামাতের কর্মসূচি ঘোষণা

ইসলামকে সম্মানিত করতে কওমি সনদের স্বীকৃতি আর তাতেই গাত্রদাহ: হানিফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ