মাওলানা মাহমুদ হাসান সিরাজী
প্রিন্সিপাল, মাদরাসা ওসমান ইবনে আফফান রা.
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর দরবারে হাজারো শুকরিয়া। অবশেষে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করলাম। আমরা আমাদের স্বীকৃতি অর্জন করলাম।
এটা আমাদের অধিকার ছিল। এটা আমাদের প্রাপ্য ছিল। এর জন্য আমাদের মুরুব্বীদের নির্দেশে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। মাঠে ময়দানে মুরুব্বীদের সাথে আমরা অবস্থান গ্রহণ করে ছিলাম। মুরুব্বীরা ছিলেন আমাদের রাহবার। আমরা ছিলাম তাদের পথ চলার অনুসারী।
ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে মুরুব্বীদের ত্যাগ ও কোরবানির কথা আমরা ভুলে যাই নি। মুরুব্বীরা যা করেছেন তা ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই করেছেন। এ ব্যাপারে তারা অনেক দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের বিচক্ষণতার বিষয়টি জাতি উপলব্দি করতে পেরেছে।
স্বীকৃতি এটা দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। স্বীূকৃতির ব্যাপারে আমাদের মাঝে কোনো মতবিরোধ ছিল না। স্বীকৃতি হোক এটা আমাদের সকলেরই চাওয়া ছিল।
তবে আমাদের অনেক ওলামায়ে কেরাম যেহেতু কোনা না কোনো ভাবে বি এন পি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, বরং কেউ কেউ তো ক্ষমতারও অংশিদার ছিলেন তাই তারা মনে করতে পারেন স্বীকৃতির এই পক্রিয়াটা বি এন পির হাত দিয়ে আসলে হয়তো আমরা ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য অনেক ক্ষতি থেকে বেচে থাকতে পারতাম। কারণ আমরা অনেকে বিএনপিকে নিজেদের সমমনা মনে করে থাকি। আর এ মনে করার পেছনে অনেক যৌক্তিকতাও রয়েছে।
পক্ষান্তরে সামগ্রিক ভাবে আওয়ামী লীগ অনেকটা রাম আর বাম নির্ভর হওয়াতে তাদের অনেকেই ইসলামবিদ্বেষী ভূমিকায় আবির্ভূত হয়। ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় তাদের দ্বারা মোটা দাগে ইসলামের কিছুটা ক্ষতি হয়ে যায়। কিছু কিছু জায়গায় তাদের কারো কারো হাত আলেম ওলামাদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। ফলে পরিস্থিতির কারণে তারা অনেকের ইসলাম ও মুসলমানদের ইস্যুতে আস্থাহীন হয়ে পড়েন। এখানে তারা আস্থাহীন হয়ে পড়াটা অযৌক্তিক ও নয়। অনেক যুক্তিই রয়েছে।
এরপরও স্বীকৃতি ইস্যুতে আমাদের বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও চিন্তাশীল ওলামায়ে কেরাম যে সব শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তাতে আপাতত ভয়ের তেমন কিছু দেখছি না।
তাছাড়া বাহ্যিকভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে যেভাবে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন তা সত্যিই বিরল। তিনি নিজে নতজানু হয়ে, দোয়ার সময় হজরতের মাইক ঠিক করে দিয়ে ও আরো নানান সেবা যত্ন করে যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
কিন্তু এরপরও তাদের যদি কোনো প্রকার দূরভিসন্ধি থেকে থাকে অথবা এটা যদি তাদের পাতানো কোনো ফাঁদ হয় তাহলে কি আমরা সম্মেলিতভাবে তা প্রতিহত করতে পারবো না? তাদের পাতানো ফাঁদ বা প্রতারণা বুঝার মত মেধা কি আমাদের নেই?
আমি তো এ স্বীকৃতিকে আমাদের যুগের জন্য আরেক হুদাইবিয়ার সন্ধি মনে করি।
স্বীকৃতির এ সিঁড়িটাকে ব্যবহার করে আমাদের ছেলেরা আরো অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারবে।
হুদাইবিয়ার সন্ধি কি মুসলমানদের জন্য মক্কা বিজয়ের সহায়ক হয়নি। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কি ইসলামের আরো ব্যাপকতা লাভ হয় নি? মুসলমানদের কাম্মিয়াত ও কাইফিয়াত বৃদ্ধি পায় নি?
তাহলে আমাদের ছেলেরা কেন পারবে না এ স্বীকৃতি নিয়ে ইসলামকে আরো এগিয়ে দিতে? এ স্বীকৃতির পেছনে কি একদল মুখলিছ, তাহাজ্জুদগোজার, বিচক্ষণ আলেমের চোখের পানি আর ঘামের পানি নেই?
পরিশেষে এ স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করি। তার নিকট আমরা আশা করি ভবিষ্যৎতেও তিনি আলেমদের ও ইসলামের প্রতি এমন আন্তরিকা দেখাতে সক্ষম হবেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে নিয়ে উচ্চমূল পর্যন্ত আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার একটা জায়গা করে দিবেন।
স্বীকৃতির উচ্ছ্বাস বনাম বিকৃতির শঙ্কা
প্যাঁচার ছবি মঙ্গলের নয় অমঙ্গলের প্রতীক