শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি : ভিপি নুর আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.) কে যেমন দেখেছি মাত্র ৯ মাসে কোরআনের হাফেজা হলেন ৬ বছরের সাফিয়্যা ভারতীয় চক্রান্তের প্রতিবাদে সাভারে হেফাজতের বিক্ষোভ সমাবেশে জনতার ঢল বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সাদপন্থিদের বর্বর হামলার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সাহসী কণ্ঠ ছিলেন হেলাল হাফিজ: ড. ইউনূস কবি হেলাল হাফিজের ইন্তেকাল সরকারের প্রতি যে আহ্বান জানালেন মির্জা ফখরুল মাহফিলে যেতে না পেরে হেলিকপ্টারের ৪ লাখ টাকা ফেরত দিলেন মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী মুসলিম সমাজে অমুসলিমদের ধর্ম পালনে বাধা নেই: বায়তুল মোকাররমের খতিব

কওমি সনদের স্বীকৃতি: আমাদের লাভ ও ক্ষতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 

Mahfuzul_hak

মুফতি মাহফূযুল হক

প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে স্বীকৃতি ও নিয়ন্ত্রণ দুটি ভিন্ন বিষয়। যেমন, আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সরকারি স্বীকৃতি আছে। প্রেসিডেন্ট পদাধিকার বলে সেগুলোর চ্যান্সেলার হোন। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা, সিলেবাস ও কারিকুলামের উপর সরকার বা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি আসছে। কওমির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আসছে না। নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই স্বীকৃতি অসম্ভ, অবাস্তাব কোন কিছু নয়।

নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য আসে বেতন-ভাতার সাথে। যেহেতু বেতন-ভাতা, বাজেট কোন কিছুই সরকার থেকে নেয়া হবে না সেহেতু অযাচিত নিয়ন্ত্রণের পথ সরকারের জন্য বন্ধ থাকছে। জন্মলগ্ন থেকে নিয়ে বিগত দেড় শতাধিক বছর কওমি মাদরাসা যেভাবে চলেছে স্বীকৃতি নেয়ার পরে আগামী দিনেও সেভাবেই চলবে। সরাসরি জনগণের অনুদান ও আর্থিক সহযোগিতাই হবে কওমি মাদরাসার সকল ব্যয়ের একমাত্র তহবিল।

যেহেতু কওমি মাদরাসা একটি বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা। সেহেতু কওমীর স্বীকৃতি হয়েগেলে যে কোন সরকারি, বেসরকারি চাকরির দোয়ার খোলে যাবে, তা ভাবার কোন সুযোগ নেই। কেননা, মেডিকেলে পড়াশোনা করে ব্যাংকে কর্ম করা যায় না। প্রকৌশলে লেখাপড়া করে চিকিৎসক পদে চাকরি করা যায় না। তাই কওমির স্বীকৃতি হয়ে গেলেও অবাধ কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে ভাবা কা আশা করাও অযৌক্তিক, অবস্তাব ও অসম্ভব।

তবে স্বীকৃতির সবচেয়ে বড় সুফল হলো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মর্যাদা। স্বীকৃতি না থাকায় কওমীর সর্বোচ্চ স্তর শেষ করার পরেও সমাজ ও রাষ্ট্রের কাগজে সে অশিক্ষিত। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য যদি শিক্ষার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় তবে কওমিতে পড়াশোনা করা সমাজ সেবক একজন যোগ্য ব্যাক্তির  নির্বাচনে প্রার্থী পদে দাঁড়ানোর যোগ্যতাও থাকবে না। সময়ের পরিবর্তনের অনেক ব্যবসা বাণিজ্যের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য শিক্ষার শর্ত আরোপ হবে। তখন কওমীতে পড়ুয়ারা স্বাধীন ব্যবসা করার আইনগত অধিকার বঞ্চিত হবে। স্বীকৃতি নাথাকায় আপনি দাওরা পাশ করে ন্যাশনাল আইডি করতে গেলে ফরমে শিক্ষার কলামে আপনাকে অশিক্ষিত লিখতে হবে। এটা সামাজিক একটি অসম্মান। এর থেকে মুক্তির একটাই উপায় কওমীর সরকারি স্বীকৃতি।

চারটি ব্যাংক পূর্ণাঙ্গভাবে এবং অনেকগুলো ব্যাংক শাখাগত ভাবে ইসলামের নামে জনগণকে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। অথচ সে সকল ব্যাংকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যারা কাজ করছে তাদের জীবনের ব্যাকগ্রাউন্ড ইসলামি শিক্ষা নয়। তাই তারা ফিল্ডে ইসলামি ব্যাংকিং নীতির কোন তোয়াক্কা না করে জনগণকে প্রতারিত করছে

শিশুকালে কওমি মাদরাসায় পড়তে আসা ছাত্রদের বিরাট এক অংশ দাওরা পর্যন্ত পোঁছতে পারে না। বিভিন্ন স্তর থেকে এরা ঝড়ে পড়ে। এ ঝড়ে পড়া ছেলেদের কেউ যদি সমাজের প্রন্তিক কোন চাকরিও করতে যায় পারে না। কারণ তার কোন সনদ নেই। অথচ তার বয়সের স্কুলের একটা ছেলে পঞ্চম বা অষ্টম পাশ সনদ দিয়ে নিজের পছন্দ মতো ছোটখাট চাকরি করতে পারে। যে ছেলেরা আমাদের কাছে পড়তে এসে ৫ বছর, আট বছর পড়ার পর আর্থসামাজিক চাপে, পারিবারিক সমসস্যায় ঝড়ে পড়ল স্বীকৃতি ওদের পথ খোলে দিবে।

কওমি স্বীকৃতির দ্বারা চাকরির বাজারে অবাধ সুযোগ সৃষ্টি না হলেও, এমন বিশেষ কিছু স্থানে কর্মের দরজা খোলবে, যেগুলোতে আমাদের কওমি শিক্ষিতদের অবশ্যই প্রবেশ করা দরকার। আর সে সকল সেক্টরে প্রবেশ করার প্রয়োজনীয়তা যতটা না ব্যক্তির রুটি রুজির স্বার্থে, তার চেয়ে অনেক বেশি দরকার দ্বীনের স্বার্থে

আজকে চারটি ব্যাংক পূর্ণাঙ্গভাবে এবং অনেকগুলো ব্যাংক শাখাগত ভাবে ইসলামের নামে জনগণকে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। অথচ সে সকল ব্যাংকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যারা কাজ করছে তাদের জীবনের ব্যাকগ্রাউন্ড ইসলামি শিক্ষা নয়। তাই তারা ফিল্ডে ইসলামি ব্যাংকিং নীতির কোন তোয়াক্কা না করে জনগণকে প্রতারিত করছে। জনগণ ইসলামের নামে সুদ গ্রহণ করছে। অথচ এখানে কওমী মেধাবীরা প্রবেশ করলে ইসলামী ব্যাংকিং নীতি ফিল্ডে কার্যকর হবে। জনগণ প্রতারিত হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।

নিয়ন্ত্রণের ভয়ে স্বীকৃতি হারানো হবে বোকামি। কেননা, নিয়ন্ত্রণকে ফিরাতে হবে গায়ের জোরে। আর এর জন্য প্রয়োজন নিজেদের ঐক্য। যদি আমরা অনৈক্যের কারণে দুর্বল থাকি তাহলে সরকার যে কোন সময় যে কোন আইন করে আমাদে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। আমরা দুর্বল থাকলে স্বীকৃতি না নিলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে

দেশের সাধারণ শিক্ষার মূলধারার সিলেবাসে যতটুকুই ইসলাম আছে, ধর্ম শিক্ষা আছে তা যদি যোগ্য ইসলামি ব্যক্তিদের দ্বারা পাঠদান করানো হতো তবে দেশের আপামর জনসাধারণ খুব সহজেই ইসলাম সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ ধারণা ও জ্ঞান পেত। কওমির ফুযালারা ইসলামি শিক্ষা দানের জন্য অন্য অনেকের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য হওয়া সত্বেও শুধু সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় তা হচ্ছে না। ফলে অন্য বিষয়ের শিক্ষকরা ইসলাম শিখাতে যেয়ে যা হচ্ছে তা ভাষায় বলার নয়। তাই বলব, দেশের আগামী দিনের কোটি কোটি শিশুকে সাধারণ শিক্ষা ধারায় সঠিক ভাবে ইসলাম শিখানোর জন্য কওমী স্বীকৃতির কোন বিকল্প নেই।

সরকারি স্বীকৃতি থাকলে মেধা, প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার বলে আজকের গণমাধ্যমের নীতি নির্ধারণী স্তরে প্রবেশের পথ কওমিদের জন্য খোলে যাবে। আর গণমাধ্যমে ইসলাম পন্থীদের প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা আশাকরি, বলে বুঝানোর কোন দরকার নেই।

কওমির সরকারি স্বীকৃতি থাকলে আগ্রহী তরুণরা কিছুটা বাড়তি মেহনতের মাধ্যমে এলএলবি কোর্স করে আইন-আদালতে বিচরণ করতে পারবে। সময়ের ব্যবধানে বেরিয়ে আসবে অনেক প্রতিভাবান ইসলামপন্থী আইনজীবি। সময়ের সাথে লড়াই করার জন্য নিজেদের আইনজীবির কোন বিকল্প নেই।

আর এসব কিছুর সাথেই জড়িত রয়েছে এ ভূখন্ডের মুসলমানদের আগামী ভবিষ্যত। ইসলামের ভবিষ্যত।

সর্বশেষে বলব, নিয়ন্ত্রণের ভয়ে স্বীকৃতি হারানো হবে বোকামি। কেননা, নিয়ন্ত্রণকে ফিরাতে হবে গায়ের জোরে। আর এর জন্য প্রয়োজন নিজেদের ঐক্য। যদি আমরা অনৈক্যের কারণে দুর্বল থাকি তাহলে সরকার যে কোন সময় যে কোন আইন করে আমাদে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। আমরা দুর্বল থাকলে স্বীকৃতি না নিলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। আর আমরা সবল থাকলে স্বীকৃতি নিলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তাই আসুন ভীত না হয়ে, সবল হই। স্বীকৃতি নেই। আমাদের জন্য না হলেও দ্বীনের স্বার্থে, মুসলমানদের স্বার্থে আমরা স্বীকৃতি নেই।

লেখক: আলেম ও কলামিস্ট

কওমি স্বীকৃতি; আল্লামা শফীর নেতৃত্বে গণভবন যাচ্ছেন ৩০০ আলেম

শাইখুল হাদীস রহ. এর হাতে কওমি সনদের স্বীকৃতির পতাকা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ