সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী বিরতিকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম ফুটবলারদের ওমরা পালন ধর্ষণের বিচারে শরয়ি আইন থাকলে, কোন শিশু আর ধর্ষিত হতো না: উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় ঈদে নতুন নোট বিতরণ স্থগিত ধর্ষণ এবং নারীর পরিচয় নিয়ে অবমাননায় ১৫১ আলেমের বিবৃতি ১০ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম ত্রাণ বন্ধের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল তারাবিতে ফাইভ জি স্পিডে তেলাওয়াত করবেন না: আজহারী ‘আলেমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা জিহাদ নয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

পৃথিবীর পথে পথে (৩)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী তাকী উসমানী। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বিভাগের সাবেক প্রধান বিচারপতি। জাগতিক ও ধর্মীয় দু’শিক্ষায় শিক্ষিত বিদগ্ধ পণ্ডিত। ঘুরেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এশিয়া থেকে ইউরোপ। হিমালয় পাদদেশ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখেছেন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অসংখ্য নিদর্শন। নিরীক্ষণের আঁতশী কাঁচের নিচে রেখে দেখেছেন সময়ের চঞ্চল প্রবাহ। আওয়ার ইসলামের পাঠকবর্গের জন্যে তার সেই ভ্রমণকাহিনী অনুবাদ করেছেন  নন্দিত অনুবাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ আল ফারুক। এখন থেকে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে শায়খ তাকী উসমানীর  ভ্রমণ কাহিনী।

বাগদাদের জন্মকথা

আমাদের রুম ছিলো হোটেলের দশম তলায়। এখান থেকে আমরা বাগদাদের অর্ধেক এলাকার ওপর অনায়াসে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম। দৃষ্টির সীমা জুড়ে বিস্তৃত ইতস্তত আলোকরশ্মি কেমন যেনো মাটির ওপর তারা ভরা আকাশের দৃশ্য তৈরি করেছে। সময়টি ছিলো মাঝরাত। বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিলাম শরীর।

কিন্তু মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো বাগদাদের বর্ণিল ইতিহাসের বিক্ষিপ্ত পাতাগুলো। এই ভুখণ্ড মুসলমানদের উত্থান ও পতনের কত দৃশ্যই না দেখেছে? জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সে কী বিশাল মহীরুহ এই মাটিতে জন্ম নিয়েছে? ভাষা ও সাহিত্যের কত যে আসর সেজেছে এই মাটির ওপর? খোদাভীরুতা ও সত্যিকার নিষ্ঠার কী অনুপম দৃষ্টান্ত এখানে স্থাপিত হয়েছে? আজকের পৃথিবীতেও এই মাটিতে আমাদের উজ্জ্বল ইতিহাসের কত সূর্য ও চন্দ্র এখনো পূর্ণমাত্রায় আলো বিলিয়ে চলেছেন? আল্লাহু আকবার!

মুসলমানরা প্রথম যখন ইরাক জয় করেন, তখন বাগদাদ উল্লেখযোগ্য কোনো শহর হিসেবে পরিগণিত হতো না। কিসরার শাসনামলে এটি ছিলো দজলার পশ্চিম পাড়ের একটি ক্ষুদ্র জনপদ মাত্র। কথিত আছে, সে সময়কার ইরান সম্রাট তার এক মূর্তিপূজারী চাকরকে এ এলাকা জায়গীর রূপে দান করেছিলেন। সেই চাকরের উপাস্য মূর্তিটির নাম ছিলো ‘বাগ’। সে কারণে সে এই এলাকার নাম রেখেছিলো ‘বাগদাদ’ (বাগ মূর্তির দান)। যার কারণে অনেক আলেম শহরটিকে বাগদাদ নামে ডাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না।

হযরত উমর রা. এর যুগে কুফা ও বসরার মতো নগরীগুলো আবাদ করা হয়। কিন্তু এ এলাকাটি পূর্বের মতো পড়ে ছিলো। আব্বাসি শাসনামলে খলিফা মানসূর কুফা ও হিরা; এই দুই নগরীর মাঝখানে ‘হাশিমিয়া’ নামে একটি নগরের গোড়াপত্তন করেছিলেন। কিন্তু রাবনীদের বিদ্রোহের কারণে তার সেই পরিকল্পনা সাফল্যের মুখ দেখে নি। ওদিকে কুফার লোকদের রাষ্ট্রদ্রোহের কথা সকলই কম-বেশি জানেন। এ কারণে সেখানে রাজধানী স্থাপন করতে তার মন সায় দেয়নি। অগত্যা তিনি কুফা থেকে মূসেল পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা চষে বেড়ান। সবশেষে দজলার পাড়ের এই জায়গাটি তার মনোপূত হয়। তিনি তখন মন্তব্য করেন যে, এই জায়গাটির এক দিকে দজলা আছে। এখান থেকে আমাদের ও চীনের মাঝখানে কোনো কিছু আড়াল হবে না। অন্য দিকে ফোরাত আছে। এর মাধ্যমে আমরা সিরিয়াসহ আশপাশের অঞ্চলের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারবো। [ইবনু কুতাইবা বিরচিত ‘আল মা’আরিফ’ গ্রন্থের ভূমিকা]

সিদ্ধান্ত অনুসারে খলিফা মানসূরের সৈন্যদল দজলার পশ্চিম পাড়ে ছাউনি ফেললো। ১৪০ হিজরিতে তার তত্ত্ববধানে বাগদাদ নগরীর নির্মাণ কাজ শেষ হলো। বাদশাহ নিজেই নগরীটির নাম রেখেছিলেন ‘মদিনাতুস সালাম’। কেননা যেমনটি পূর্বে জানিয়েছি যে, বাগদাদ নামের মাঝে শিরকের গন্ধ রয়েছে।

Bagdad

আশ্চর্যের বিষয় হলো, কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এই মদিনাতুস সালাম বিভিন্ন খলিফাদের রাজধানী ছিলো; অথচ তাদের কারোই এই নগরীতে ইনতিকাল হয়নি। শুধু হারুনুর রশীদের ছেলে আমীনের ব্যাপারে জনশ্রুতি রয়েছে যে, তাকে এই বাগদাদে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে খতিবে বাগদাদ রহ.-এর মন্তব্য হলো, মূলত তার হত্যাও এই বাগদাদে সংঘটিত হয়নি। বরং সে দজলা নদীতে নৌবিহার করার এক পর্যায়ে শহর থেকে বেশ দূরে চলে যায়। সেখানেই সে গ্রেফতার হওয়ার পর নিহত হয়। [তারিখে বাগদাদ : ১/৬৯]

ধীরে ধীরে বাগদাদ নগরী মুসলমানদের শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এমন দ্বিতীয় নগরী আর নেই। প্রাকৃতিক আবারিত সৌন্দর্য, দূরদর্শী পরিকল্পিত বিন্যাস ও সুব্যাবস্থাপনা আর সভ্যতা ও আভিজাত্যের বিচারে এই বাগদাদ নগরীটি এতোটাই চিত্তাকর্ষক ছিলো যে, ইমাম শাফেয়ী রহ.এর মতো একজন খোদাভীরু ফকীহ ও বুযুর্গও একবার তাঁর শিষ্য ইউনুস ইবনে আবদুল আ’লাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কি বাগদাদ দেখেছো? সে উত্তর দিলো, না; দেখিনি। তখন ইমাম শাফেয়ী রহ. বললেন, তাহলে তো তুমি পৃথিবীই দেখো নি। [আল খতিব : ১/৪]

বর্তমানে বাগদাদ নগরী দজলা নদীর দু’পারেই ছড়িয়ে গেছে। প্রথমদিকে খলিফা মানসূর শহরটিকে স্থাপন করেছিলেন দজলার পূব পাড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে তার ছেলে মাহ্দী শহরটির পশ্চিম পাড়ে ছাউনি ফেলেছিলেন। ধীরে ধীরে এই অংশটিও শহরের অংশ হয়ে যায়। পূবের অংশটিকে বলা হতো ‘কারখ’। আর পশ্চিমের অংশটির নাম হয়ে যায় ‘রেসাফা’। এই দুই অংশকে আজও সেই নামেই পরিচয় দেয়া হয়। মূলত এই ভৌগলিক পরিচয়ের সূত্র ধরেই আমাদের ইতিহাসের অনেক কালজয়ী ব্যক্তিত্বকে ‘কারখী’ ও ‘রেসাফী’ নামে স্মরণ করা হয় ।

-এআরকে

পূর্বের পর্ব : পৃথিবীর পথে পথে (২)পৃথিবীর পথে পথে

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ