শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্থ করতেই জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

taqi usmaniআওয়ার ইসলাম : হামদ ও সালাতের পর, শ্রদ্ধেয় ড. সালিহ আলে উসমান আলেশ শায়খ হাফিযাহুল্লাহ, শ্রদ্ধেয় শায়খ সালিহ আবু তালিব হাফিযাহুল্লাহ, শ্রদ্ধেয় কায়িদে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মাওলানা ফজলুর রহমান হাফিযাহুল্লাহ, মহামান্য উলামায়ে কেরাম, সম্মানিত উপস্থিতি!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি তায়ালা ওয়া বারাকাতুহু

আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই অভিবাদন জানাচ্ছি আমার প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় উভয় শায়খ: সউদি আরবের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ড. সালিহ আলেশ শায়খ এবং মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম শায়খ সালিহ আবু তালিবকে। আমি আমার পক্ষ থেকে এবং এতদঞ্চলের উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে তাঁদের এবং তাঁদের সাথীদের সকলের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যে, তাঁরা আমাদের এই অঞ্চলকে ধন্য ও আলোকিত করেছেন আমাদের দেশে তাঁদের শুভাগমন এবং মহাসম্মেলনে তাঁদের উপস্থিতির মাধ্যমে; যেখানে মুসলিম উম্মাহর আলেমগণ এবং পাকিস্তানের জনগণ সমবেত হয়েছেন।

তেমনিভাবে আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি শ্রদ্ধেয় মাওলানা ফজলুর রহমান হাফিযাহুল্লাহর। তিনি আমাদেরকে শ্রদ্ধেয় আরব মেহমানদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার, তাঁদের মহামূল্যবান কথামালা শ্রবণ করার এবং এই মহা সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার; যার দৃষ্টান্ত পাওয়া দুষ্কর- এমন সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছেন।

আমাদের সম্মানিত অতিথিদের প্রতি শুভেচ্ছা মূলক এ কথাগুলোর পর আমি তাঁদের সদয় অনুমতি চাচ্ছি যে, কিছু কথা উর্দুতে বলব; যাতে করে আমাদের প্রিয় দেশবাসী তা বুঝতে সক্ষম হন।

আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন উলামায়ে কেরাম, সম্মানিত উপস্থিতি!

আমাদের জন্য এটা এক বড় সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তায়ালা আজ মুসলমানদের এত বিরাট সমাবেশে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করেছেন। মুসলমানদের এত বিশাল সম্মেলন সম্ভবত পাকিস্তানের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। আল্লাহ তায়ালা যেন এই মোবারক সমাবেশকে গোটা দেশ ও জাতির জন্য ফলপ্রসূ ও বরকতময় করেন। এই সমাবেশে মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম সাহেবের পেছনে জুমুয়ার নামাজ আদায় করার তাওফিক আল্লাহ তায়ালা আমাদের দান করেছেন- এর ওপর আল্লাহ তায়ালার বিশেষ শুকরিয়া আদায় করা আমাদের উচিৎ।

আমি মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেবকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি এবং তাঁর কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করছি যে, তিনি এমন মহা সম্মেলনের ব্যবস্থাপনা করেছেন। এত বিরাট সংখ্যক মুসলমানের সমাগম যেখানে, সেখানে তো এমনিতেই বড় সৌভাগ্যের কথা এবং আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত থেকে আশা যে, মুসলমানদের এই বৃহৎ সমাবেশের ওপর রহমত ও বরকত নাজিল করবেন। দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত মুসলমানদের দেখা যাচ্ছে, সমাবেশের শেষ সীমানা কিন্তু অনুমান করা যাচ্ছে না- এরা তো পার্থিব কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে সমবেত হয় নি, আর্থিক কোনো মুনাফা অর্জন করতে এখানে আসে নি, নিজেদের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যও এখানে উপস্থিত হয় নি। এদেরকে একটিমাত্র বস্তু এখানে নিয়ে এসেছে। আর তা হলো কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। এই কালিমার খাতিরে এবং নিজেদের মা'বুদকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে তারা এখানে সমবেত হয়েছে।

সেজন্য আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে আমার পূর্ণ আশা যে, তাদের এখানে আসা আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হবে এবং তাদের ওপর তাঁর রহমত ও বরকতসমূহ নাজিল করবেন। এই মুহূর্তে দীর্ঘ কোনো বক্তব্যের সুযোগ নেই; কেননা এখানে আমার পরম শ্রদ্ধেয় হযরত মাওলানা ড. আবদুর রাজ্জাক ইসকন্দর সাহেব দামাত বারাকাতুহুম উপস্থিত। ইনশাআল্লাহ তাঁর বক্তব্য আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।

তবু এই সুযোগে আমি সংক্ষেপে এ কথা পেশ করতে চাই যে, এই মহা সমাবেশ; যেখানে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের বদৌলতে বিভিন্ন মতাদর্শের, বিভিন্ন চিন্তাধারার, বিভিন্ন দিকের ওইসব হযরত উপস্থিত, ধর্মীয়, শিক্ষা, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সর্বস্তরের ব্যক্তিগণকে আল্লাহ তায়ালা এখানে একত্রিত করেছেন। শুধু পাকিস্তান থেকে নয়, পাকিস্তানের বাহির থেকে, আমাদের খুব প্রিয় দেশ সউদি আরব থেকে, তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে, বৃটেন থেকে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে, আমিরাত থেকে, বাহরাইন থেকে এবং না জানি আরও কত দেশ থেকে মুসলমানগণ এখানে উপস্থিত হয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহ যে, এরা সবাই একই লক্ষ্য সামনে রেখে এখানে সমবেত হয়েছেন। আর তা এই যে, আজ ইসলাম ও মুসলমান বড় কঠিন সমস্যার সম্মুখীন। ইসলাম ও মুসলমান সারা বিশ্বে কত রকমের বিপদে পর্যুদস্ত। বিশেষভাবে এই সময় অনেক বড় একটি বিষয় এই যে, ইসলামের যেই চিত্র, ইসলামের যেই ছবি আজ পুরো দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে; সেখানে ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে মিলানো হচ্ছে, খুনখারাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এবং এতে আমাদের কিছু ভাই, কিছু মূর্খ তাদের কর্মপন্থা দ্বারা এই প্রোপাগাণ্ডায় শক্তি ও সমর্থন যোগাচ্ছে। এর কারণে ইসলামের ভুল ও ভয়ানক চিত্র মানুষের সামনে ফুটে উঠছে এবং এরা ইসলামের দাওয়াতের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই মুহূর্তে যখন আমরা এমন জটিল সমস্যার সম্মুখীন, অন্যদিকে জায়গায় জায়গায়, বিভিন্ন দেশে ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্র, ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অপচেষ্টায় ব্যস্ত এবং আরেকদিকে স্যাকুলার ও ধর্মদ্রোহিতার অপশক্তি এই চিন্তায় নিমগ্ন যে, কোনো ইসলামি রাষ্ট্রে যেন শরিয়তের সঠিক বাস্তবায়ন না হতে পারে। তারা না পাকিস্তানে শরিয়তের বাস্তবায়ন চায়, না দুনিয়ার অন্য কোনো অঞ্চলে চাইবে।

এসব সমস্যার যুগে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এই যে, আমরা যেন পরস্পরে এক হই, একতাবদ্ধ হই। আমাদের এটা দরকার যে, আমাদের মধ্যকার মাসলকি মতানৈক্যগুলোকে, চিন্তার মতবিরোধগুলোকে, আমাদের রাজনৈতিক মতভেদগুলোকে আমরা তাকে তুলে দিয়ে এক লক্ষ্য সামনে রেখে এক হবো। আর তা এই যে, ইসলামের বাস্তব চিত্র পুরো বিশ্বের সামনে পেশ করা হবে। ইসলামের এবং ইসলামি শরিয়তের সঠিক বাস্তবায়নের মহান কর্ম আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আঞ্জাম দেয়া হবে। এ কাজের জন্য দরকার এসব সমন্বিত বুনিয়াদের ওপর সবাই এক হওয়া, একতাবদ্ধ হওয়া। এসব চিন্তাগত বুনিয়াদের ওপর একমত হয়ে আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের জন্য কাজ করবে।

এ ক্ষেত্রে এটা অবশ্যক নয় যে, আমরা আমাদের মধ্যকার সব দলকে খতম করে ফেলব। এটা অবশ্যক নয় যে, সব প্রতিষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে। এটা অবশ্যক নয় যে, সকল বোর্ড ভেঙে ফেলা হবে। দল, প্রতিষ্ঠান, বোর্ড সবটাকে নিজ স্থানে বহাল রেখেও আমরা সমন্বিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহর খাতিরে, আল্লাহর সন্তুষ্টির খাতিরে এক হয়ে একতাবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি।

আমাদের আকাবির, আমাদের বুযুর্গগণ আলহামদুলিল্লাহ নিজেদের কর্মপন্থা দ্বারা এই কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, দ্বীনের খাতিরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির খাতিরে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করা যায়। এই সমাবেশ; যা আলহামদুলিল্লাহ বিভিন্ন মতাদর্শের হযরতদের সমাবেশ- খালিস দ্বীনের ভিত্তিতে এখানে উপস্থিত হয়েছেন।

আমি আলহামদুলিল্লাহ এই আশা রাখি যে, এ সমাবেশ সেই ঐক্য ও একতা প্রতিষ্ঠার জন্য, সমন্বিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর জন্য এক আদর্শ প্রমাণিত হবে। আল্লাহ তায়ালা এ সমাবেশ থেকে আমাদের এসব বরকত যেন নসিব করেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর অপার রহমতে যেন আমাদেরকে নিজেদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টির খাতিরে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা পরিচালনা করার তাওফিক দান করেন।

পরিশেষে এই কথা পেশ করতে চাই যে, চাহে আমরা দ্বীনের যে কাজই করি না কেন; চাই তা পাঠদানের কাজ হোক, চাই দাওয়াতের কাজ হোক, চাই ওয়াজ ও তাবলিগের কাজ হোক, চাই রাজনীতিতে আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের কালিমা বুলন্দ করার কাজ হোক, চাই জিহাদ হোক, যে কাজই হোক না কেন- তা তখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে যখন ওই কাজ ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় করা হবে।

"ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত" সর্বপ্রথম ওই হাদিস; যার দ্বারা আমরা আমাদের পাঠদান কর্মের সূচনা করি এবং আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে আমাদের এই পয়গাম দিয়েছেন যে, আমরা আমাদের সমূহ কর্মে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনকে সামনে রাখব। ইখলাসের সঙ্গে, লিল্লাহিয়াতের সঙ্গে, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে কাজই করা হবে সেটা ইনশাআল্লাহ পরকালে মুক্তির উপায় হবে এবং দুনিয়াও সফলকাম হবে ।

সংক্ষিপ্ত এ ক'টি কথা পেশ করে আমি আপনাদের থেকে বিদায়ের অনুমতি চাচ্ছি এবং অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া করছি যে, আল্লাহ তায়ালা যেন এই সমাবেশকে মুসলমানদের জন্য, মুসলিম মিল্লাতের জন্য কল্যাণ ও বরকতের মাধ্যম বানিয়ে দেন এবং মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ধর্মের সঠিক চিত্র তুলে ধরার, সঠিক ছবি পেশ করার এবং তার ওপর সঠিকভাবে আমল করার মাধ্যম হিসেবে কবুল করেন।

"ওয়া আখিরু দাওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন"

অনুবাদ: মাহফুয আহমদ
জামিয়া দারুস সুন্নাহ লন্ডন, আলোচক, ইকরা টিভি লন্ডন

এআরকে

তাকি উসমানির ভ্রমণ : পৃথিবীর পথে পথে (২)

পৃথিবীর পথে পথে


সম্পর্কিত খবর