ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকার সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন। এতে অতিথি হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন আরবের দুই শায়েখ। একজন মক্কার মসজিদুল হারামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম অপরজন মদিনার মসজিদে নববীর ইমাম আবদুল মহসীন বিন কাশেম। সম্মেলনে অতিথির বক্তব্যে তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করেছেন। এনটিভির সৌজন্যে তাদের বক্তব্যগুলো তুলে ধরা হলো।
মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মক্কার মসজিদুল হারামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ছে। এই লড়াই আরো কার্যকরভাবে চালিয়ে যেতে হবে।
বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা সম্মেলনে যোগ দিয়ে মক্কা শরিফের ইমাম এ কথা বলেন।
মদিনার মসজিদে নববীর ইমাম আবদুল মহসীন বিন কাশেমও এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তাঁরা দুজনই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। এই দুজনই বক্তব্য দেন আরবিতে। সঙ্গে সঙ্গে সেই বক্তব্য বাংলায় অনুবাদ করে দেন একজন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইসলামের শিক্ষা নয় জানিয়ে মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম বলেছেন, যারা জঙ্গিবাদ ছড়াতে ইসলামের নাম ব্যবহার করছে, তাদের মুখোশ খুলে দিতে তার দেশের বাদশাহ কাজ করছেন।
মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি, তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান মক্কা শরিফের ইমাম। তিনি বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) দুই দেশের সম্পর্ক স্থাপনে অনেক উত্তম পদক্ষেপ নিয়েছেন।… আমার বিশ্বাস এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে।’
‘আমাদের বাদশাহ অঙ্গীকার করেছেন, যেসব দেশে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছড়ানো হচ্ছে তাদের মুখোশ খুলে দেবেন। জঙ্গিবাদকে দমনের জন্য আমরাও পদক্ষেপ নিয়েছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম আমাদের দেশেও চালানো হয়েছে। আমরাই সর্বপ্রথম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি তাদেরকে দমন করার জন্য,’ বলেন মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েম।
এই ইমাম আরো বলেন, ‘সৌদি আরব সাহসের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদীরা আমাদের দেশে ঘাঁটি বানাতে পারেনি।’
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা ইসলামবিরোধী জানিয়ে মক্কা শরিফের ইমাম বলেন, ‘নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা অনেক বড় অপরাধ। কোনো মুসলমানকে কোনো মুসলমান হত্যা করতে পারে না। এমনকি বিধর্মীকেও কোনো মুসলমান অন্যায়ভাবে হত্যা করতে পারে না। কোনো মুসলমান যদি কোনো মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাহলে তার জন্য জাহান্নাম নির্দিষ্ট রয়েছে। এ থেকে কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের দেশে বিধর্মীদেরও হত্যা করা যাবে না। তাদের জান ও মাল হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহ মুসলমানদেরকে দিয়েছেন।’
সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেম বলেন, ‘যারা দেশে অশান্তি নিয়ে আসতে চায়, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা ওয়েল জাহান্নামে (সর্বনিকৃষ্ট দোযখ) যাবে।’ তিনি বলেন, ‘ইসলামে কয়েকটি হারাম কাজ বলা আছে। যারা মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, যারা হত্যা করতে চায়, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের জন্য আজাব রয়েছে। তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।’
মক্কা শরিফের ইমাম বলেন, ‘দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করা আল্লাহর নেয়ামত। এ জন্য যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য দোয়া করছি। কারণ, আল্লাহর বড় একটি নেয়ামতের দায়িত্ব তারা পেয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘যারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।’
ড. আবদুল মহসীন বিন কাশেম
মদিনার মসজিদে নববীর ইমাম আবদুল মহসীন বিন কাশেম বলেছেন, যিনি দেশ চালাচ্ছেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর হাতকে মজবুত করা ইসলামের নির্দেশ।
বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা সম্মেলনে যোগ দিয়ে মসজিদে নববীর খতিব ও ইমাম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইসলামের পথ নয়। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করতে হবে।
এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন মক্কার মসজিদুল হারামের (ক্বাবা ঘর) সিনিয়র ইমাম মোহাম্মদ বিন নাসির আল খুজায়েমও। তিনিও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। এই দুজন বক্তব্য দেন আরবিতে। সঙ্গে সঙ্গে সেই বক্তব্য বাংলায় অনুবাদ করে দেন একজন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আকর্ষণই ছিলেন মক্কা ও মদিনার এই দুই ইমাম। তাঁদের আগমন উপলক্ষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ইমাম, মাদ্রাসা শিক্ষক ও আলেম-ওলামারা যোগ দেন। দুপুরে এই সমাবেশ শুরু হলেও সকাল থেকেই আলেমরা সারি বেঁধে ময়দানে জড়ো হতে থাকেন।
সৌদি আরবের দুই প্রধান মসজিদের ইমাম তাঁদের বক্তব্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তাঁরা জানান, ইসলামের নামে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। সৌদি আরবও এই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছিল জানিয়ে তাঁরা বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা একটি জোট করেছেন, বিশ্বের ২০টি মুসলিম দেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে।
দুই সৌদি ইমামের মধ্যে প্রথমে কথা বলেন মসজিদে নববীর খতিব আবদুল মহসীন বিন কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধর্ম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত। যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে লিপ্ত তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের ইসলাম শান্তির, একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছে।’
মদিনা শরিফের খতিব বলেন, ‘ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে তোমরা একত্রিত হয়ে যিনি দেশ পরিচালনা করছে, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার হাতকে মজবুত করবে। এটা আল্লাহর আদেশ।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধর্ম আমাদেরকে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়, একে অপরের সঙ্গে মিলেমিলে থাকার শিক্ষা দেয়। কোরআন আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন-যাপন করবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করবে।’
এই আলেম বলেন, ‘ইসলাম এমন এক ধর্ম, যেটা বোঝা অতি সহজ, আমল করা অতি সহজ। …ইসলাম হচ্ছে বিশ্বের সকল মানবতার ধর্ম। ইসলাম হচ্ছে ক্ষমা করার ধর্ম, একে অপরকে শ্রদ্ধা করার ধর্ম। ইসলামের উন্নতি হবে শিক্ষার মাধ্যমে একে অপরকে শ্রদ্ধার মাধ্যমে, ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে, আমাদের ব্যবহারের মাধ্যমে।’
আবদুল মহসীন বিন কাশেম বলেন, ‘প্রতিবেশীর হক আদায় করা, মা-বাবার কথা মানতে হবে। এটা যদি আমরা করি, তাহলে ইসলাম উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইসলাম হচ্ছে বিধর্মীদেরও মহব্বত করা, এতিম, অসহায়দের সাহায্য করা। এভাবে আমরা আমল করলে আমাদের ইসলাম উন্নতির দিকে ধাবিত হবে।’
সূত্র: এনটিভি
পবিত্র ধর্মের সম্মান রক্ষার্তে সৌদির সঙ্গে একত্রে কাজ করবো’
কওমি স্বীকৃতির ঘোষণা ১১ এপ্রিল