মুহাম্মদ ইনআমুল হাসান
অতিথি লেখক, আওয়ার ইসলাম
কাতার প্রবাসী
গত পহেলা মার্চ কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে বাংলাদেশে আয়োজিত ‘কাতারের জন্য ইমাম নিয়োগ পরীক্ষার’ সফল পরিসমাপ্তি ঘটলো। এতে বাংলাদেশের ১১৮ জন সৌভাগ্যবান হাফেজ-আলেম ইমাম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
বাংলাদেশ ও বাঙ্গালিদের জন্য এ এক পরম সৌভাগ্য ও গৌরব। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তারা তাদের নতুন কর্মস্থলে এসে পৌঁছবেন এবং স্বীয় দায়িত্ব বুঝে নেবেন বলে আমরা আশা করছি।
২০১৫ সালে যখন আমরা ইমাম হিসেবে কাতারে এসছিলাম (সেবার ৯৬ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিলো) তখন আমাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য কাতারে বাংলাদেশি ইমামগণের একমাত্র সংগঠন ‘ইত্তেহাদ’-র পক্ষ হতে একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছিলো। সে অনুষ্ঠানে সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল বলেছিলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী প্রায় ৯০০ জন বাংলাদেশি ইমাম রয়েছেন কাতারে। সকলেই অত্যন্ত সুনামের সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করছেন।
এবার আসি মূলকথায়। জাতীগতভাবে আমরা পরশ্রীকাতর। একজনের ভালো অন্যজন সহ্য করাটা আমাদের স্বভাব-বিরুদ্ধ। যার ফলে কেউ উন্নতি করুক সেটা যেমন চাই না তেমনিভাবে কেউ ভালো কিছু করলে বা করতে চাইলে আমরা সেই কাজটাকে জাতির সামনে বিরুপভাবে উপস্থাপন করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নামতেও দ্বিধা করি না।
বাংলাদেশে অবস্থানরত একটি মহল বা কিছুলোক পূর্বের মতো এবারও ‘কাতারের জন্য ইমাম-নির্বাচন পরীক্ষা’ চলাকালে পরিবেশ ঘোলাটে করেছেন। এমনকি এখনো করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কতক এমন রয়েছেন যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে চালাচ্ছেন তাদের অপপ্রচার; আর কতক রয়েছেন হুজুগে বাঙ্গালি।
কুচক্রীদের অপপ্রচার
চিহ্নিত মহলটি কেনো যেনো বারেবারে নির্দিষ্ট কিছু কথাই বলে বেড়ান।
ক. মুয়াজ্জিন হওয়ার জন্য কাতারে গিয়ে কী হবে?
খ. সেখানে নিয়ে তারা আমাদের দ্বারা বাথরুম পরিষ্কার করাবে, তারচে না যাওয়াই শ্রেয়।
গ. কাতার এতটুকু একটা দেশ সেখানে এত মসজিদ আসে কোত্থেকে যে এত ইমাম নিয়ে যায় তারা? কী করায় এদের দিয়ে?
এককথা বলে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু করাবে অন্যকিছু ইত্যাদি আরো বহু অপপ্রচার। যা কেবল ভ্রষ্ট মস্তিষ্কের ভ্রান্ত কিছু চটকদার কথাই না, বরং হাস্যকরও বটে।
অপপ্রচারের জবাব
ক. মুয়াজ্জিনের সম্মান ও মর্যাদার ব্যাপারে অসংখ্য সহী হাদিস বর্ণিত হয়েছে। উম্মতের বহু সালাফ তথা বুযুর্গগণ স্বেচ্ছায় এ দায়িত্ব পালন করেছেন। যার মধ্যে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর নাম উল্লেখযোগ্য।
তো আপনারা যারা মুয়াজ্জিনের চাকরি বা দায়িত্বকে ছোটো করে দেখছেন তারা কি প্রিয় নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদিসকে অসম্মান করছেন না? আইম্মায়ে কেরামকে হেয় করছেন না?
খ. আরবিতে একটি প্রবাদ রয়েছে, যার ভাবার্থ এমন- বাড়িওয়ালা জানেন ঘরের প্রকৃত অবস্থা।
কাতারে যদি ইমামগণের দ্বারা বাথরুম পরিস্কার করানো হতো তাহলে এত ভালো ভালো আন্তর্জাতিক হাফেজ সাহেবগণ এই চাকরির নিকুচি করে বহু আগেই দেশে চলে যেতেন। যারা দেশেই চল্লিশ/পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতন পেতেন তারা নিশ্চয়ই এখানে বসে বাথরুম সাফ করতেন না। এগুলো যে অলস মস্তিষ্কের হিন্দুয়ানি চিন্তাধারা তা সহজেই অনুমেয়।
গ. কাতার দেশটা ছোটো, এ কথা সত্য। তাই বলে যে এখানে বেশি মসজিদ হতে পারবে না, এটা কেমন কথা?! আচ্ছা, আপনি কি কখনো আপনার পুরো জেলায় কয়টা মসজিদ রয়েছে সেটার হিসেব করেছেন? করলে এমন কথা বলতেন না।
তাছাড়া এটাতো ধর্ম নিরপেক্ষ কোনো সেক্যুলার দেশ নয় যে মন্দির-গির্জা বানাতে বানাতে মসজিদ তৈরির জায়গা নেই। যাদের চিন্তায় অপ্রতুলতা রয়েছে তারাই কেবল এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে।
বাস্তবতা
কাতারের মাটিতে আরব-আনারব মিলিয়ে প্রায় পনেরো-ষোলোটি দেশের ইমাম রয়েছেন। এর মধ্যে কিছু রয়েছেন ‘ইমাম আলিফ’ বা প্রধান ইমাম, আর কিছু রয়েছেন ‘ইমাম বা’ কিংবা ছানি ইমাম। এঁরা সকলেই স্বীয় মসজিদে আযান দেন এবং সকলেই নামায পড়ান। অর্থাৎ, একজনের অনুপস্থিতিতে অন্যজন নামায সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। মুয়াজ্জিন বলতে অফিসিয়ালি কোনো শব্দ এখানে ব্যবহার করা হয় না। এমনকি ইমাম আলিফের আইডি কার্ড বা আকামাতে যেমনিভাবে ‘ইমাম মসজিদ’ লেখা থাকে তেমনিভাবে ইমাম বা-র আকামাতেও ‘ইমাম মসজিদ’ লেখা থাকে।
কেনো এই অপপ্রচার
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উদ্ভট এই কথাগুলো যারা বলে বেড়ান তাদের অধিকাংশই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু অকৃতকার্য হয়েছেন। অথবা তার কোনো আত্মীয় বা ছাত্র এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। যার ফলে, শেয়াল পণ্ডিতের মত আঙ্গুরফল টক, আঙ্গুরফল টক বলেবলে মুখে ফেনা তুলছেন।
অপপ্রচার বা নির্জলা মিথ্যাচারে আমি কেবল আমারই ক্ষতি করছি, অন্য কারো নয়। পরিশেষে বলতে চাই, আসুন, পরশ্রীকাতরতা দূর করে অন্যের সফলতায় হাসতে শিখি, অন্যের উন্নতিতে প্রেরণা লাভ করি। আশাকরি, আমাদের বোধোদয় হবে।
আরআর
মুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মিশর যাচ্ছেন পোপ
তুরস্ক : উসমানি খেলাফতের সমাধি থেকে আজ (১)