তাশরীফ মুহাম্মদ ।।
সামাজিক জীবনে পারস্পরিক পরিচয় ও মূল্যায়নে বড় একটি প্রভাব পড়ে আচার-আচরণ ও পোশাকের কারণে। মানুষের সঙ্গে মানুষের আচরণ অথবা লেনদেনের ক্ষেত্রেও পোশাক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায় কখনো কখনো। বিশেষত যখন মানুষটা অপরিচিত হয়। আচরণও ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে এসব ক্ষেত্রে। পোশাক ও আচরণের এই প্রভাব মানুষের ব্যক্তি জীবন পেরিয়ে সামাজিক ও জাতীয় জীবনেও আলোচনার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
পোশাক মানুষের মূল্যায়নে প্রভাব রাখে। পোশাক ও আচরণ মানুষের শ্রেণী চিহ্নায়ন করে। দল-মত, গোষ্ঠী অথবা আদর্শের পরিচয়ও বহন করে। ফলে অনেক সময় নিছক পোশাকের ভিত্তিতে সমাজের কোনো শ্রেণী, দল অথবা আদর্শের সুনাম-দুর্নামের ব্যাপারও ঘটে যায়। জাতীয় জীবনকেও অনেক সময় এসব বিষয় গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ব্যক্তিগতভাবে ভুল পোশাক পরা কিংবা ভুল আচরণ-করা মানুষটি এ-জন্য নিজেকে দায়বদ্ধ ভাবুক অথবা না ভাবুক।
বিভিন্ন ঘটনা দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো কোনো ব্যক্তিকে দ্বীনি পোশাকে দেখা যায়। ঘটনা, ইস্যু অথবা পরিস্থিতির শিকার দ্বীনি পোশাকের ব্যক্তিটির অবস্থা- সব একপাশে রেখে সমালোচনা শুরু হয় ব্যক্তিটির পোশাক যে শ্রেণীর ঐতিহ্য বহন করছে সে শ্রেণীটিকে নিয়েও। মানুষের স্বাভাবিক জীবন অথবা ব্যক্তিগত জীবনের ছোট ব্যাপারটি আর ছোট কিংবা ব্যক্তিগত থাকে না তখন। জাতীয় কিংবা গোষ্ঠীগত নেতিবাচক ইস্যু হয়ে ওঠে। ব্যক্তি থেকে নিয়ে শ্রেণী, আদর্শ এবং কখনো ধর্ম ও ধর্মীয় গোষ্ঠীও প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। যা সমাজ জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই আমরা যারা দ্বীনি পোশাকে বিচরণ করি, আমাদের আচরণ ও বিচরণে সচেতনতা ও সতর্কতা কাম্য।
শিল্প, সাহিত্য, বক্তব্য ও নেতৃত্ব-সহ দ্বীনি মহলে প্রতিভা চর্চা ও বিকাশের অঙ্গনটি বিস্তৃত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তারের সুযোগে অনেক নতুন মুখ দু-চার দিনেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু বেদনার ব্যাপার হলো, সমাজের অন্য অনেক শ্রেণীর মতোই এসব অঙ্গনেও বিভিন্ন সময় অবক্ষয়ের ছোটবড় আলামত সামনে এসে যায়। এক্ষেত্রে নবীন ও তরুণ প্রজন্মের সম্পৃক্ততা ও দায়-দায়িত্বের বিষয়টি আলোচনায় থাকে বেশি।
এতে সমালোচনার তীরে শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিটি তীরবিদ্ধ হচ্ছে এমন না, বরং আক্রান্ত ও অভিযুক্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অঙ্গন আর মহলও। একজন-দুজনের অবক্ষয়ে এই যে অঙ্গনের আক্রান্ত হওয়া-এটা একটি সংকট তৈরি করছে। এতে অনেক সময় বিষয়টা ব্যক্তিগত থাকছে না। দ্বীনি মহলের জন্য এটা বেশ ভাবার একটি বিষয়। সংশোধন ও শুদ্ধির বিষয়ে তাই সবার মনোযোগ-ফিকিরের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে হয়তো ব্যক্তিগত সংকটে পড়া মানুষটি নিজেকে অতটা দায়বদ্ধ ভাবছেন না, কিন্তু লোকের ভাবনাটা তার মতো নয়। ফলে অঙ্গনের দিকে লক্ষ্য রেখে হলেও বদনাম-দুর্নাম কিংবা সুনামের বিষয়গুলোর ব্যাপারে অঙ্গনের পরিচিত সবার সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে এটাও স্মরণীয়, যেকোনো ব্যক্তির ছোট-বড় ঝামেলায় কিংবা অনভিপ্রেত ঘটনায় দলে দলে হামলে পড়া এবং মানুষকে ঘায়েল করতে থাকার যে প্রবণতা, এখান থেকেও সংযমী হওয়া দরকার।
ট্রল এবং বুলিং ব্যক্তিগত পর্যায়ে বেশিরভাগ সময় ভালো কোনো কাজে ব্যবহার হয় না। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, মজা, রসিকতা, আক্রমণের জন্যই ব্যবহৃত হয়। এসবের পরিবর্তে শুদ্ধি ও সংশোধনের চেষ্টাটা হচ্ছে মূল দরকারি কাজ। দূর থেকে কিছু করার থাকলে সেটাই আসলে করা দরকার।
বাদ জুমা পল্লবী
১৫ সেপ্টেম্বর
কেএল/