নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের ১০০ দিনকে মাইলফলক হিসেবে মন্তব্য করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, দেশের সব স্তর ও সব ধারার মানুষের স্বতস্ফুর্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের অবসানের পর গণমানুষের বিপুল আশা-আকাঙ্খা ও সমর্থন নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের একশত দিন পূর্ণ হয়েছে। দীর্ঘকালীন প্রতিষ্ঠিত স্বৈরাচারী শাসনের উৎখাতের পরে গঠিত সরকারের সার্বিক মূল্যায়নের জন্য একশদিন যথেষ্ট নয়, কিন্তু একশত দিন একটি মাইলফলক।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের আইএবি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আমিনুল ইসলাম, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম প্রমুখ।
শায়খে চরমোনাই বলেন, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন এই সরকারের জন্য আনুষ্ঠানিক কোন বিরোধীদল নেই। এই সরকার জনতার, জনতাই এই সরকারের শক্তি ও এই সরকারের দর্পন। স্বৈরাচারী ব্যবস্থার স্থায়ী বিলোপ নিশ্চিত করতে এই সরকারকে সফল হতেই হবে। আর সেজন্য দরকার তাদের কাজের নির্মোহ পর্যালোচনা- যা তাদের ভালো কাজে উৎসাহ দেবে, ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে সতর্ক করবে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন দেওয়া ও আহত হওয়া বিপ্লবীদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও দোয়া জ্ঞাপন করেন শায়খে চরমোনাই।
ক্রমাবনতির দিকে ধাবমান অর্থনীতি, রাজনীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিপর্যয় রোধ করা, মানুষের মনে আশার সঞ্চার করা, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আস্থা তৈরি করা, ব্যাংক খাতের নৈরাজ্য দূর করা, রিজার্ভের পতন রোধ করাসহ অর্থনীতিকে ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত করা, স্বৈরশাসনের হোতাদের একাংশকে আটক করে বিচার কার্যক্রম শুরু করা, প্রশাসনে ধীরগতিতে হলেও শুদ্ধি অভিযান চালানো, সংস্কার কমিশন গঠন করা, বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজানোর কার্যক্রম শুরু করা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র এই শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন, ১৫ বছরের সামগ্রিক স্বৈরাশাসন সৃষ্ট ধ্বংশ স্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে মানুষের বিপুল-বিশাল প্রত্যাশা পূরণ করা কঠিন- এটা সত্য। সেই দায়িত্ব এই সরকার নিয়েছে, সেজন্য সাধুবাদ। সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে চাই না। তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে চাই না। তথাপিও কিছু বিষয় আছে যা পর্যালোচনা করা আবশ্যক মনে করছি।
তিনি সরকারকে সফল হতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রের ওপরে নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট করুন, নিয়োগের ক্ষেত্রে দোদুল্যমানতা পরিহার করুন, নতুন উপদেষ্টাসহ সকল নিয়োগে সচ্ছতা আনুন, সংস্কার কার্যক্রম গতিশীল ও গণসম্পৃক্ত করুন, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করুন।
ফ্যাসিস্ট সংগঠন নিষিদ্ধের বিরোধিতা প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র আমির বলেন, কোন কোন বড় রাজনৈতিক দলের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের শীর্ষ নেতারা মানবতাবিরোধী, খুনি ও ফ্যাসিস্ট সংগঠন নিষিদ্ধের বিরোধিতা করছেন। যে মুজিবকে দেবতা বানিয়ে স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সেই মুজিবের ছবির প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন, কেউ আবার খুনি ব্যক্তি ও ব্যবস্থাকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন, তাদের ফ্যাসিস্ট বলায় অনীহা প্রকাশ করছেন। তাদের এই অতি উদারতা, অতিরাজনীতি বা অতি সুশীলপনার নিন্দা জানাচ্ছি। কোন খুনিকে ক্ষমা করার অধিকার একমাত্র নিহত ব্যক্তির অভিভাবকের। চোরকে চোর বলাই ইনসাফ। ফ্যাসিস্টকে ফ্যাসিস্ট বলাই ইনসাফ।
আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- তা হলো বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। আমরা বুঝতে পারি না যে, এ ক্ষেত্রে দুরাবস্থার কারণ কি? কেন চিকিৎসার জন্য তাদের আন্দোলন করতে হবে? যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা করার সামর্থ কি রাষ্ট্রের নাই? অবশ্যই আছে। কিন্তু কেবলই অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে অভ্যুত্থানের প্রধান নায়কদের এখনো ক্ষত নিয়ে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে?