শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমি ইসকনের সদস্য নই। আমি একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। আমার বাবা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ কেন্দ্রে, পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক হিসেবে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইসকনের একটি অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে এই নয় যে, আমি ইসকনের সদস্য। ইসকনের সদস্য হিসেবে আমাকে প্রচার করা হচ্ছে, আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, তারা আগে আরও অনেক ধরনের মানহানিকর এবং আপত্তিকর কথা বলছে। এর মধ্যে একটি ছিল যে আমি ইসকন নামের একটি সংগঠনের সদস্য এবং ইসকনের সদস্য হয়ে আমি ভিন্ন সংস্কৃতি শিক্ষাক্রমে ঢোকানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত আছি। আমার বক্তব্য হলো, এটি একেবারে আপত্তিকর, মানহানিকর ও ষড়যন্ত্রমূলক কথা।
৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ সম্পর্কিত কার্যঅধিবেশন শেষে কওমি মাদরাসা নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তার বক্তব্যকে বিকৃত করে একটি রাজনৈতিক দল প্রচার করছে বলে দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি জেলা থেকে একটি আলোচনা এসেছিল, অনিবন্ধিত, নাম-পরিচয়হীন নুরানি মাদরাসার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। সেগুলো নিবন্ধনের প্রক্রিয়া কী? সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, যেসব নুরানি মাদরাসা গড়ে উঠছে, সেগুলোর যথাযথ নিবন্ধন আছে কি না, সেগুলোতে কীভাবে শিক্ষাক্রম পরিচালিত হচ্ছে? অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সে বিষয়ে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে তা ইউনিফরমিটির মধ্যে আনা যায়।
বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, গতকাল একটি রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক নামধারী কিছু সংগঠন থেকে বলা হয়েছে, নুরানি বা কওমি মাদরাসার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ‘আমি পরিষ্কার করে বলছি, এ আলোচনা আসে জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে যে, অনিবন্ধিত অনেক প্রতিষ্ঠান চলছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রক কারা? এ ধরনের মন্তব্য (কওমি মাদরাসা বন্ধ) আমি করিনি। তারা এ আলোচনা সৃষ্টি করে গুজব রটাচ্ছে, অপপ্রচার। আমার বক্তব্য ভিডিওসহ আছে। গুজব রটিয়ে কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির নোংরা অপচেষ্টা করছে তারা।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বারবার বলছি, কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে, অবশ্যই থাকবে। কারণ আমরা আইন দিয়ে কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স স্বীকৃতি দিয়েছেন। কওমি মাদরাসা বাংলাদেশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সেখানকার শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ন্যূনতম লিটারিসির কথা বলছি, তারা যাতে কর্মসংস্থান পায়, সে সমস্ত বিষয় নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছি, আগামীতেও কাজ করব। তাদের বারবার আমন্ত্রণও জানিয়েছি। এখানে মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো কথা কেউ কখনো বলেননি।
তিনি বলেন, একটি পরিকল্পনার মধ্যে থেকে, নিবন্ধনের মধ্যে থেকে, কী পড়ানো হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে, আমার শিক্ষার্থী, আমাদের এই প্রজন্মকে কী পড়াচ্ছি, সেটা জাতীয় শিক্ষাক্রম হোক, কওমি মাদরাসা হোক বা ইংরেজি মাধ্যমে হোক, সেটির ওপর রাষ্ট্রের নজর তো অবশ্যই থাকতে হবে। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু যদি পড়ানো হয়, সেটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে হোক; আমরা দেখেছি, অনেক পাবলিশিং হাউজের নাম করে উসকানি দেওয়ার জন্য বই ছাপানো হয়েছে এবং পড়ানো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, কওমি শিক্ষার্থীরা যাতে কর্মসংস্থান পায়, তা আমরা চাই। এজন্য আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
হাআমা/