দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। নির্বাচনী সালের (২০২৪) সঙ্গে মিলিয়ে দলটি তাদের ইশতেহারে ২৪টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত দলটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
এসময় মহাসচিব চুন্নু বলেন, দেশ এখন ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গোটা বিশ্ব এখন নতুন শতাব্দীতে পদার্পণ করছে। এই সময়ে বিশ্বের দেশগুলো নতুন তথ্য প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আর পিছিয়ে পড়ে থাকার অবকাশ নেই। এগিয়ে যাওয়ার সময়। জাতীয় পার্টি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপে দেশ ও জনগণের কল্যাণে সবসময় ব্রতী থাকবে। জাতীয় পার্টি এখন সুখী, সমৃদ্ধ এবং আধুনিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তাদের চাহিদা পূরণে সফল হবে।
ইশতেহারে উল্লেখ করা ২৪টি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন, সুশাসনের বাংলাদেশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মামলার জটের অবসান, শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণ, শিক্ষা পদ্ধতির সংশোধন, ইসলামিক আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, সন্ত্রাস দমন ও মাদকের বিস্তার রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, সর্বোচ্চ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কল্যাণ সাধন, খাদ্য নিরাপত্তা, নদী সংরক্ষণ ও ভাঙন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
এছাড়া ইশতেহারে আরও রয়েছে শিল্প ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ, নারী সমাজের কল্যাণ সাধন, জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান-মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সংস্কার, গুচ্ছগ্রাম পথকলি ট্রাস্টের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার এবং অভিবাসন।
প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি
ইশতেহারের শুরুতে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। জাতীয় পার্টি বলছে, দেশের এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
চুন্নু বলেন, বিদ্যমান ৮টি বিভাগকে ৮টি প্রদেশে উন্নীত করা হবে। ৮টি প্রদেশের নাম হবে- উত্তরবঙ্গ প্রদেশ, বরেন্দ্র প্রদেশ, জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ, জালালাবাদ প্রদেশ, জাহানাবাদ প্রদেশ, চন্দ্রদীপ প্রদেশ, ময়নামতি প্রদেশ এবং চট্টলা প্রদেশ।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দুই স্তরবিশিষ্ট সরকার কাঠামো থাকবে। এক কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারে সিদ্ধান্ত থাকবে ৩০০ আসন বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ এবং দুই প্রাদেশিক সরকার। প্রাদেশিক সরকারের থাকবে প্রাদেশিক সংসদ। প্রতি উপজেলা কিংবা থানাকে প্রাদেশিক সরকারের একেকটি আসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহারে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তনে গুরুত্ব দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ক্ষমতায় গেলে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার অর্থাৎ নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করা হবে। নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। সন্ত্রাস, অস্ত্র ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন অর্থাৎ উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করা। স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করে এবং নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে উপজেলার ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
ইশতেহারে সুশাসনের বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে পার্টির মহাসচিব বলেন, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা হবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি নির্মূল করতে দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত, জনপ্রতিনিধিদের রাষ্ট্রীয় বাজেট তৈরি ও বাস্তবায়নে সংযুক্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে অপচয় ও অপব্যবহার বন্ধ করা হবে। গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনকে সরকারের প্রভাবমুক্ত রেখে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। অন্যদিকে বাজেট ও সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ব্যতীত ৭০ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে সব প্রতিনিধিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আওতায় এনে সংসদ কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
এনএ/