|| মুফতি জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুস ||
রোজা ঈদ পালনের ক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশে একশ্রেণীর ভাই আছেন, যারা সমগ্র বিশ্বে একই দিনে রোজা ঈদ পালন করতে হবে মর্মে বিভ্রান্তিকর কিছু কথাবার্তা বলে থাকেন। আবার তাদের কেউ কেউ বলেন, সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে সৌদি আরবের চাঁদের সংবাদের ভিত্তিতে রোজা ঈদ পালন করতে হবে। আবার তাদের কেউ কেউ বলেন, সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্যের ভিত্তিতে রোজা ঈদ পালন করতে হবে। আর সমগ্র বিশ্বের মানুষ নাকি এভাবেই রোজা ঈদ পালন করে থাকেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষেরা চাঁদ দেখে রোজা ঈদ পালন করে।
তাদের এই কথা যে সঠিক নয়; বরং ভুল এবং বিভ্রান্তিকর এটি আল্লাহ তাআলা এবারের (২০২৫ খ্রিস্টাব্দ) ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে পরিষ্কার করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি
সমগ্র পৃথিবীর মানুষ চাঁদ দেখে রোজা ঈদ পালন করে। আর এটি ইসলামের বিধান। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ فَإِنْ غُبِّيَ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلاَثِينَ
অর্থ: তোমরা চাঁদ দেখে রোজা আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার করবে (তথা ঈদ করবে।) যদি আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শা‘বানের গণনা ত্রিশ দিন পুরা করবে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০৯)
আলহামদুলিল্লাহ! আমরা দেখতে পাচ্ছি, সমগ্র পৃথিবীর মুসলমানগণ ইসলামের এই বিধানের উপর অটল অবিচল রয়েছেন। ইসলামের সূচনা কাল থেকে অদ্যবধি (১৪৪৬ বৎসর) পর্যন্ত এ বিধানে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে। সমগ্র বিশ্বের মানুষ নির্দ্বিধায় এ বিধান মেনে আসছেন এবং রোজা ঈদ এভাবেই পালন করে আসছেন।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের কিছু মানুষ ইসলামের এই বিধানকে উপেক্ষা করে, সৌদি আরবের চাঁদের সংবাদের ভিত্তিতে কিংবা জ্যোতির বিজ্ঞানের হিসাবের ভিত্তিতে রোজা-ঈদ পালন করে থাকেন। অথচ বিশ্বের কোন মুসলমান দেশ এই নিয়মকে সমর্থন করে না।
যার প্রমাণস্বরূপ আমি ২০২৫ সালের এবারের ঈদুল ফিতরের কিছু সংবাদ আপনাদের সামনে পেশ করছি।
এক,,,,সময় টিভি নিউজে এসেছে, অস্ট্রেলিয়ার মানুষ চাঁদ না দেখা যাওয়ার কারণে ৩০ রোজা পূর্ণ করে ৩১ শে মার্চ সোমবার ঈদ উদযাপন করবে। সংবাদটি পড়তে সার্চ করুন- প্রথম দেশ হিসেবে ঈদের তারিখ ঘোষণা অস্ট্রেলিয়ার।
দুই,,,, বাংলাদেশ প্রতিদিন এর অনলাইন সংবাদে এসেছে, মালয়েশিয়াতে চাঁদ দেখা যায়নি। তাই তারা ৩০ রোজা পূর্ণ করে ৩১শে মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। সংবাদটি পড়তে সার্চ করুন- ঈদ কবে জানালো মালয়েশিয়া ।
তিন,,,, বাংলাদেশ প্রতিদিন নিউজে এসেছে, ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরাও ৩১শে মার্চ সোমবার ঈদ উদযাপন করবে। সংবাদটি পড়তে সার্চ করুন- ঈদের তারিখ জানালো ইন্দোনেশিয়া।
চার ,,,,আমার দেশ পত্রিকায় এসেছে- ভারত পাকিস্তানেরও ৩১ শে মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। এই দুই দেশে বাংলাদেশের মতোই ২৮ রোজা চলছে। তাদের দেশে ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা যাবে ইনশাআল্লাহ । সংবাদটি পড়তে সার্চ করুন- ভারত-পাকিস্তানে ঈদের দিন ঘোষণা।
পাঁচ,,, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার অনলাইনে ওমানের সংবাদ ছেপেছে । ওমানে চাঁদ দেখা যায়নি ফলে তারা ৩০ রোজা পূর্ণ করে ৩১শে মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। সংবাদটি পড়তে সার্চ করুন- ওমানে ঈদ সোমবার।
ছয়,,,, সৌদি আরব, আফগানিস্তান সহ পশ্চিমের আরো অনেক দেশে চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ এসেছে। সে সকল দেশের মানুষেরা ২৯শে রমজান চাঁদ দেখেই ৩০ শে মার্চ রবিবার ঈদের ঘোষণা দিয়েছেন।
সুতরাং তারাও কিন্তু চাঁদ না দেখে কিংবা জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের উপর নির্ভর করে ঈদের ঘোষণা দেননি; বরং চাঁদ দেখেই ঈদের ঘোষণা দিয়েছেন।
সাত,,,, সৌদি আরবের কাছাকাছি এবং পশ্চিমের আরো কিছু দেশ যেমন- মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া, মরক্কো, ইরাক, জর্দান সহ বেশ কিছু দেশ আছে, যারা চাঁদ দেখেননি। ফলে তারা ৩০শে মার্চ রবিবার সৌদির সাথে তাল মিলিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন না; বরং ৩০ রোজা পূর্ণ করে ৩১শে মার্চ সোমবার ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছেন।
তাহলে পরিষ্কার হয়ে গেল, সৌদি আরব সহ সমগ্র পৃথিবীর মানুষ চাঁদ দেখেই রোজা ঈদ পালন করে থাকেন।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! ওমান থেকে ১৮০° দ্রাঘিমা পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশের মানুষ চাঁদ দেখিনি এবং তারা ঈদও করবে না। অথচ বাংলাদেশের কিছু ভাই চাঁদ না দেখেই ৩০ শে মার্চ রবিবার ঈদ করার ঘোষণা দিলেন।
ওমান থেকে ১৮০° দ্রাঘিমা পূর্ব পর্যন্ত কোন দেশের মানুষ সৌদি আরবের সাথে তাল মিলিয়ে ঈদ করার ঘোষণা দেননি। অথচ বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ সৌদি আরবের সাথে তাল মিলিয়ে ঈদ করার ঘোষণা দিলেন। এটা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
সারা পৃথিবীর মানুষ বুঝলো না!
আর আমাদের এই ভাইয়েরাই শুধু বুঝলেন?
সমগ্র পৃথিবীর মানুষ একই দিনে ঈদ করার মাসআলা জানেন না?
আর আমাদের এ ভাইয়েরাই কেবল জানেন?
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! খুব ভালো করে মনে রাখবেন, পবিত্র রমজান মাসের রোজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত। মনগড়া কোন কাজের মাধ্যমে নিজেদের এ ইবাদতকে নষ্ট করবেন না।
সঠিক বিষয় বুঝতে চেষ্টা করুন।
প্রতিটি বিষয়ে ইসলামের বিধান পরিষ্কার। সুতরাং হক্কানী ওলামায়ে কেরামের পরামর্শে কুরআন সুন্নাহের সঠিক নিয়ম মেনে চলুন।
তাহলে ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতেই আমরা সফলতা লাভ করব ইনশাআল্লাহ। অন্যথায় আমাদের আমলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক পথে চলার এবং সকল ধরনের ভ্রান্ত মতবাদ ঈমান আমল বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন, আমিন।
সর্বশেষ আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাদের সাংবাদিক ভাই ও মিডিয়াকর্মীদেরকে । যারা বিভিন্ন দেশের ঈদের সংবাদ কে তৎক্ষণাৎ মিডিয়ায় প্রকাশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সামনে এই সত্যটিকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। আমরা আশা করি সকল সংবাদ ও আমাদের লেখনীর মাধ্যমে সত্যান্বেষী মানুষের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক: শিক্ষক, লালবাগ মাদ্রাসা ঢাকা
খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ ঢাকা খাদেম, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ।
এমএম/