মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৭ চৈত্র ১৪৩১ ।। ৩ শাওয়াল ১৪৪৬


প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প: কারণ ও প্রতিকার


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুস ||

গতকাল (২৮/৩/২০২৫) থাইল্যান্ড এবং মায়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মানুষের ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চোখের সামনে বড় বড় বিল্ডিংগুলো ধুলোর মত মাটির সাথে মিশে গিয়েছে।

আগামী ৭২ ঘন্টার মাঝে এমন ভয়ংকর, শক্তিশালী ভূমিকম্প বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে মর্মে কেউ কেউ প্রচার করছেন। যার কারনে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
কেন হয় এই ভূমিকম্প ?

 ভূমিকম্প কেন হয়? তার কারণ উদ্ঘাটন করতে গেলে আমরা দু’ধরনের আলোচনা দেখতে পাই। 
১. বৈজ্ঞানিক তথ্য।
২. কুরআনি তথ্য।

বৈজ্ঞানিক তথ্যে বাহ্যিক কারণসমূহ জানা যায় এবং কুরআনী তথ্যে অভ্যন্তরীণ কারণ সমূহ জানা যায়। এদুয়ের মধ্যে ভূমিকম্পের ব্যাপারে তেমন কোন বৈপরীত্য নেই।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভূমিকম্প:
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভূমিকম্পের কারণ সমূহের একটি হচ্ছে- ভূপৃষ্ঠের এই মাটি অনেকগুলো প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। যখন কোন প্লেটের নিচ থেকে পানি সরে যায় তখন উক্ত প্লেটটি নিচের দিকে দেবে যায়। ফলে পরস্পরে সংঘর্ষের মাধ্যমে কম্পন সৃষ্টি হয়। তাকেই ভূমিকম্প বলা হয়। এটি একটি বাহ্যিক কারণ যা বিজ্ঞান বর্ণনা করেছে। 

কোরআন হাদিসের দৃষ্টিতে ভূমিকম্প:
ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি এসবই আল্লাহর গজব। সমাজে আল্লাহর নাফরমানি, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, নির্লজ্জতা, যিনা-ব্যভিচার , চুরি-ডাকাতি, মাদকাসক্তিসহ গর্হিত কর্মকাণ্ড যখন অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায় তখন এই জাতীয় গজব আসে। 

অতীতে লূত, আদ, ছামূদ সহ আরো অনেক সম্প্রদায়কে এসব নাফরমানির কারণে এ জাতীয় বিভিন্ন আজাব গজব দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- আমি জাহান্নামের কঠিন শাস্তির পূর্বে তাদেরকে অবশ্যই ছোট শাস্তি দিব যাতে তারা (অবাধ্যতা থেকে) ফিরে আসে। (সূরা সাজদা, আয়াত-২১) 
অন্যত্র এরশাদ করেন- মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে ওদের কোন কোন কর্মের শাস্তি ওদেরকে আস্বাদন করানো হয়। যাতে ওরা (সৎপথে) ফিরে আসে। (সূরা রুম, আয়াত-৪১)

হাদিস শরীফে প্রকাশ্যে পাপাচারকেই আল্লাহর আজাব-গজবের মূল কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন—কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পাপাচারীদের বাধা দেয় না, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। (আবু দাউদ, হাদিস -৪৩৩৮)

কোরআন-হাদিসের আলোকে পরিষ্কার হয়ে যায়, ভূমিকম্প সহ এ জাতীয় দুর্যোগের মূল কারণ হচ্ছে- আল্লাহর অবাধ্যতা এবং পাপাচার। তাই আসুন! আল্লাহর অবাধ্যতা এবং পাপাচার পরিহার করি এবং আজাব গজব থেকে বেঁচে থাকি।

প্রকৃতপক্ষে এসব দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য মানব মেধা প্রসূত চিন্তাভাবনা ও নির্দেশনা কোনই কাজে আসবে না। তাই আমাদের উচিত কোরআন সুন্নাহে বর্ণিত নির্দেশনার উপর আমল করা। তবেই মহান আল্লাহ আমাদেরকে এসব দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করবেন, ইনশাআল্লাহ।

দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার আমল

  • বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। (সূরা আনফাল, আয়াত -৩৩)
  • সকল প্রকার পাপাচার থেকে খাঁটি দিলে তওবা করা। (সুরা হুদ, আয়াত -৩)
  • আমলে সালেহ তথা নেক আমল করা। (সূরা নাহাল, আয়াত নং ৯৭)
  • সৎকারে আদেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা দেওয়া।(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২১৬৯)
  •  বেশি বেশি দান সদকা করা। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৬৬৪)
  • মসজিদ আবাদের মেহনত করা। (শুআবুল ঈমান, হাদিস নং ২৯৪৬)
  • আল্লাহর জন্য পরস্পরে মহব্বত রাখা।(শুআবুল ঈমান, হাদিস নং ২৯৪৬)
  • শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। (শুআবুল ঈমান, হাদিস নং ২৯৪৬)
  • প্রতিবেশীকে এলেম আমল শিখানো। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস নং ৭৪৭)
  • বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়া।( সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ১২৯৮ )

পরিশেষে: ভূমিকম্প কিংবা কোন ধরনের দুর্যোগ ও দুর্ঘটনার কথা শুনে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা আমাদের আমলগুলো করতে চেষ্টা করি। 
লক্ষ্য করুন! পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা কত মায়া এবং ভালোবাসার আহ্ববানে ইরশাদ করেন- তোমরা যদি শোকর আদায় করো এবং ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে আজাব দিয়ে কি করবেন?  আল্লাহ হচ্ছেন মূল্যদানকারী সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা, আয়াত -১৪৭) 

একটি হাদীসে কুদসিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ তায়ালা বলেন-আমার বান্দারা যদি আমার আনুগত্য করত, তাহলে আমি রাতে বৃষ্টি বর্ষণ করতাম আর দিনে সূর্যের আলো দিতাম। আমি তাদেরকে (আজাব-গজব তো দূরের কথা) বজ্রের আওয়াজ ও শুনাতাম না।(মুসনাদে আহমদ, হাদিস -৮৬৯৩)

তাই আসুন! সকল ধরনের পাপাচার পরিহার করি। তাহলে আল্লাহ তায়ালা সকল ধরনের আজাব গজব থেকে মুক্তি দান করবেন এবং সুখ শান্তি ও নিরাপত্তার দান করবেন, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফিক দান করেন, আমীন।

লেখক: শিক্ষক, লালবাগ মাদ্রাসা ঢাকা 
            খতিব, আজিমপুর ছাপড়া পড়া মসজিদ ঢাকা খাদেম, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ |

এমএম/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ