|| আল আমিন বিন সাবের আলী ||
আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজায় বর্বরচিত হামলা চলমান। এই পরিস্থিতে আমাদের আমল কী হতে পারে, আজকের আলোচনায় তাই খুঁজবো। হযরত আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি যে, "তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো মন্দ কাজ দেখতে পায়, সে যেন তা নিজের হাতে প্রতিরোধ করে। যদি সে এতে অক্ষম হয়, তাহলে মুখের মাধ্যমে (বক্তব্য বা উপদেশের মাধ্যমে) তা প্রতিরোধ করুক। যদি এটাও না পারে, তাহলে অন্তত নিজের অন্তরের মাধ্যমে (তা ঘৃণা করুক, এটা মেনে না নিয়ে বরং তা পরিবর্তনের জন্য আন্তরিক দোয়ার) পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। আর এটাই হলো ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর"। (সহীহ মুসলিম, ৪৯)
পবিত্র রমজান মাসেও দিনে-দুপুরে বিকালে-সন্ধ্যায় সাহরি কিংবা ইফতারির সময়ে ইসরাইলি জায়নবাদীরা বুলেটের আঘাতে ঝাঁজরা করে দিচ্ছে হাজারো মুসলমানের বুক। বর্তমানে বিশ্বে এর চেয়ে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি দ্বিতীয় আরেকটি নেই। মনুষ্যত্ব আছে এমন কেউই এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না, পারবে না।
এমন মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে এত দূর থেকে আমরা কিছু করতে পারছি না। তবুও হাদিসে বর্ণিত সর্বশেষ ও সর্বনিম্ন ধাপটি কমপক্ষে অনুসরণ করে নির্যাতিত মুসলমাদের জন্য করতে দোয়া করতে পারি। ইমাম-খতিব সাহেবগণ প্রতি ওয়াক্তে মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদের মিম্বর ও মাইকগুলো দোয়ার মাধ্যমে সরব রাখতে পারেন। বিশেষ করে ইফতারির পূর্বে, সাহরির সময় এবং কদরের রাত্রিগুলোকে এর জন্য আমরা গনিমত মনে করতে পারি। আল্লাহ তাআলা যেন এবারের কদরের রাত্রিগুলোর উসিলায় গাজাবাসীদের ইসরাইলি হামলা থেকে মুক্তি দান করেন।
গাজাবাসীদের এমন বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে আমরা কুনুতে নাযেলার আমল করতে পারি। কুনুতে নাযেলা রাসুল সা. সাহাবিদের শিখিয়েছেন। রাসুল সা. নিজেও এই আমল করেছেন। রাসূল সা. -এর প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যে কোনো বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদ সামনে এলে রাসুল সা. আমাদেরকে ফজরের নামাজের শেষ রাকাতে রুকুর পরে এভাবে দোয়া করতে শিখিয়েছেন,
اللهمَّ اهدِنا فيمَن هدَيتَ وعافِنا فيمَن عافَيتَ وتوَلَّنا فيمَن توَلَّيتَ وبارِكْ لنا فيما أعطَيتَ وقِنا شَرَّ ما قضَيتَ إنَّك تَقضي ولا يُقضى عليكَ إنَّه لا يَذِلُّ مَن والَيتَ تَبارَكتَ ربَّنا وتَعاليت
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাহদিনা ফিমান হাদাইত। ওয়াআ'ফিনা ফিমান আ'ফাইত। ওয়াতাওয়াল্লানা ফিমান তাওয়াল্লাইত। ওয়াবারিক লানা ফিমা আ'তাইত। ওয়াকিনা শাররা মা ক্বযাইত। ইন্নাকা তাকযি ওয়ালা ইউকযা আলাইক। ইন্নাহু লা ইয়াজিল্লু মান ওয়ালাইত। তাবারাকতা রব্বানা ওয়া তাআ'লাইত। (বাইহাকি, ৩২৬৬)।
হযরত ওমর রা. -এর দোয়ার আমল ছিল এরূপ, ফজরের নামাজের শেষ রাকাতে রুকুর পরে তিনি এভাবে দোয়া করতেন-
اللهُمَّ اغفِر لنا وللمُؤمنينَ والمؤمناتِ والمسلِمينَ والمسلِماتِ وألِّف بينَ قلوبِهم وأصلِح ذاتَ بينِهِم وانصُرهُم على عدوِّكَ وعدُوِّهِم اللهُمَّ العَن كفرَةَ أهلِ الكتابِ الَّذينَ يصدُّونَ عَن سبيلِكَ ويُكذِّبونَ رُسُلكَ ويقاتِلونَ أولياءكَ اللهُمَّ خالِف بينَ كلمَتِهِم وزَلزِلْ أقدامَهُم وأنزِلْ بِهِم بأسَكَ الَّذي لا تَرُدَّهُ عنِ القَومِ المُجرِمينَ بِسمِ اللَّهِ الرَّحمنِ الرَّحيمِ اللهُمَّ إنّا نَستعينُكَ ونستغفِرُكَ ونُثني عليكَ ولا نَكفُرُكَ ونخلَعُ ونترُكُ مَن يفجُرُكَ بِسمِ اللَّهِ الرَّحمنِ الرَّحيمِ اللهُمَّ إيّاكَ نَعبُدُ ولكَ نُصلِّي ونَسجُدُ ولكَ نسعى ونحفِدُ نَخشى عذابَكَ الجِدَّ ونَرجو رحمتَكَ إنَّ عذابَكَ بالكُفّارِ مُلحِقٌ
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লানা ওয়ালিল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাত। ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম। ওয়া আসলিহ যাতা বাইনিহিম। ওয়ানসুর হুম আ’লা আ’দুয়্যিকা ওয়া আ’দুয়্যিহিম। আল্লাহুম্মা-লআন কাফারাতা আহলিল কিতাবিল্লাযিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিকা। ওয়া ইউকাজজিবুনা রুসুলাকা। ওয়া ইউকাতিলুনা আওলিয়া-আকা। আল্লাহুম্মা খালিফ বাইনা কালিমাতিহিম। ওয়া যালযিল আকদামাহুম। ওয়া আনযিল বিহিম বা'সাকাল্লাজি লা তারুদ্দুহু আনিল কওমিল মুজরিমিন। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নুছনি আলাইকা ওয়ালা নাকফুরুকা ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাইঁ-ইয়াফজুরুকা। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া লাকা নুসল্লি, ওয়া নাসজুদু, ওয়া লাকা নাস'আ, ওয়া নাহফিদু, নাখশা আজাবাকালজাদ্দা, ওয়া নারজু রাহমাতাক। ইন্না আযাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৪৯৬৯)
কুনুতে নাযেলা পড়ার পদ্ধতি:
ফজরের ফরজ নামাজের দ্বিতীয় রাকাআতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ইমাম উচ্চ আওয়াজ কুনুতে নাজেলা (দোয়া) পড়বেন। আর মুসল্লিরা মনে মনে আমিন, আমিন বলবেন। দোয়া শেষে নিয়ম অনুযায়ী বাকি নামাজ শেষ করবেন। এভাবে কুনুতে নাযেলা পড়া মোস্তাহাব, যার বিধান বর্তমানেও বলবৎ রয়েছে। (ইলাউস সুনান)
আমরা আমাদের করণীয় হিসেবে রাসুলে কারিম সা. -এর এই সুন্নতটি আমল করতে পারি। অনেক আলেম এই দুটি দোয়া একত্রে কুনুতে নাজেলা হিসেবে পাঠ করতেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা আরেকটি কাজ করতে পারি; এবারের রমজান মাসের কুরআন খতমগুলো গাজার প্রতিটি শহীদের জন্য নিবেদন করতে পারি। এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ফান্ডিং করে কোনো নির্ভরযোগ্য সংস্থার মাধ্যমে তাদের কাছে আমাদের হাদিয়া পৌঁছে দিতে পারি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন।
ফাজেল, জামিয়া আশরাফিয়া (মাদরাসা) শান্তিধারা, সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জ।
পরিদর্শক, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)
এমএইচ/