মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ৩০ পৌষ ১৪৩১ ।। ১৪ রজব ১৪৪৬


‘ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলে উল্লাস নয়, বরং এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করাটাই কর্তব্য’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| শায়খ আহমাদুল্লাহ ||

আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেস নামে একটি শহরে ভয়াবহ দাবানল পুরো শহরকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। টানা দুই দিনের অধিক সময় ধরে পুড়ছে তো পুড়ছেই। এবং কোনোভাবে সে আগুন থামছে না। যে শহরে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সে শহর নানা কারণে পরিচিত বিশ্ববাসীর কাছে। বিশেষ করে অশ্লীলতা, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, হারাম রিলেশনকে প্রমোশন করা এবং অন্যায়-অশ্লীলতার জোয়ার-সয়লাবের জন্য শহরটা নানাভাবে পরিচিত।

মানুষের মধ্যে যারা অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দিতে চায়, ব্যপকভাবে বিস্তৃত করতে চায় তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ভয়াবহ শাস্তি দিবেন বলে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন। এই যে দাবানল সেটা তাদের সেইসব কৃতকর্মের শাস্তি কি-না এটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন হলেও বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি দেখে একজন মুসলমান সতর্ক হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। শিক্ষা গ্রহণ করবার যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। 

আমরা জানি যে, ইতালির পম্পেও নগরে;এটাকে পাপের নগরী বলা হত, পাপ-জুলুম-সীমালঙ্ঘন এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, একটা পর্যায়ে আল্লাহ রব্বুল আলামীন সেখানে ভয়াবহ দাবানলে পুরো শহরকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছেন। এখনও সেই কয়লা হয়ে যাওয়া শহরটি ওইভাবেই কয়লা অবস্থাতেই বিশ্ববাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে, শিক্ষাগ্রহণের উপাদান হিসেবে টিকে আছে। হলিউডের এই যে আগুন সেইরকমই কোনো শিক্ষাদায়ক, সেইরকমই এলার্মিং কোনো বিষয়, কোনো ঘটনা হওয়া মোটেও অস্বাভাবিক নয়। একজন ঈমানদার এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করবে। উল্লাস নয় বরং এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করাটাই হয়ত আমাদের কর্তব্য যে, আমরা আল্লাহর অবাধ্যতার পথে যাওয়া, হারাম বা অন্যায়ের পথে যাওয়া থেকে বিরত থাকব। আমরা যদি আল্লাহর অবাধ্যতার পথে যাই আল্লাহ রব্বুল আলামীন ছাড় দেন কিন্তু একটা সময় আল্লাহ তায়ালা পাকড়াও করেন। আল্লাহ তায়ালার ছাড় পেতে পেতে একটা সময় মনে হয় আল্লাহ বোধহয় আর পাকড়াও করছেন না। কিন্তু একটা সময় আল্লাহ ঠিকই ধরেন এবং পাকড়াও করেন। এ বিষয়টি পৃথিবীতে বারবার বিভিন্ন সময় ঘটে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক সময় ঘটে। আমাদেরকে এলার্ম দিচ্ছেন। সতর্ক করছেন বা আমাদের কোনো পাপের জন্য দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নগদ শাস্তি দিচ্ছেন। আমরা খুব কম মানুষই শিক্ষা গ্রহণ করি। এজন্য এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাটা আমাদের জন্য উচিত। 

এটি আল্লাহর আজাব তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কারণ এটি আজাবের অংশ না আল্লাহর অন্য কোনো হিকমাহর অংশ, এটি অন্য দশটি স্বাভাবিক ঘটনার মত কিনা সেটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন। আমরা যেহেতু গায়েবের মালিক নই, এজন্য নিশ্চিত করে, হলফ করে এটিকে আল্লাহর গযব হিসেবেই বলতে যদিও  পারব না। কিন্তু একটা সেইম টাইম সেখানে যে কর্মকাণ্ড হত বা যে কর্মকাণ্ডের জন্য সেটির খ্যাতি ছিল সেই কারণে সেখানে আল্লাহর শাস্তি পতিত হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখে এই সম্ভাবনার কথা বলা দোষণীয় হবে না। নিশ্চিত করে হয়ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না যেহেতু অহীর রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।  নবী-রাসূলগণ থাকলে বলতে পারতেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহ তায়ালা এটা আজাব হিসেবে প্রেরণ করেছেন। 

এখানে আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো-  আমরা জানি, গাজাও পুড়ছে। হলিউডও পুড়ছে। পার্থক্য অবশ্য একটা বেশ পরিষ্কার। সেটা হলো, গাজার মানুষ মুসলমান। একজন মুসলমান হিসেবে তারা আখেরাতে বিশ্বাসী। মুসলমানের দুনিয়া যদি পুড়েও যায় তারপরও তারা আখেরাতের অনন্ত-অসীম কালের যে যাত্রা সেখানকার সুখ এবং জান্নাত থাকলেই তার এই পুড়ে যাওয়াতে তার জন্য তেমন কোনো ভয়াবহ বিপদের কারণ বা ক্ষতির কারণ ব্যপারটা সেরকম নয়। কিন্তু যারা আখেরাতে বিশ্বাসী নন তাদের তো দুনিয়াটাই সব। তাদের দুনিয়াই যদি পুড়ে যায় তাহলে তাদের আর থাকলটা কী?  আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঈমান এবং তাকওয়ার চর্চায় অগ্রগামী হওয়ার তাওফিক দান করুন। পৃথিবীর প্রত্যেকটা ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। 

আমরা চাই, হলিউড কেন; পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে থাকা মানুষ-জন, তারা আল্লাহর বাধ্যগত হোন। তারা সঠিক এবং সুন্দর পথে আসুন। তারাও আল্লাহর বাধ্যগত হয়ে আল্লাহর নিরাপত্তার চাদরে চলে আসুন। ভালো থাকুন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করবার তাওফিক দান করুন।

শ্রুতিলিখন, মোহাম্মাদ হুজাইফা      


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ