বাংলাদেশ কওমী কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস আল্লামা হাকীম আব্দুস সামাদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করলে এদেশের মুসলিম সমাজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চিরদিন মনে রাখবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের জনগণের হৃদয়ের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার সরকার। সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত মানুষের হৃদয়ের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হওয়া।
বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের এদেশে স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ ৫৩ বছর যাবত কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি চলে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হল, কোন সরকারই জনগণের হৃদয়ের এ দাবি বাস্তবায়ন করেনি। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এদেশের মুসলমানদের পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসিলম ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, কোরআন ও হাদীসের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত যে, কাদিয়ানীরা কাফের। এবং মুসলিম বিশ্বের প্রায় সব ক'টি দেশেই কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করে তাদের যাবতীয় বই-পুস্তক ও কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৫৭ সালে সিরিয়া সরকার কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে অমুসিলম ঘোষণা করেছে। কাদিয়ানীদের সংগঠনকে অবৈধ ও বেআইনি বলে ঘোষণা দিয়েছে। ১৯৫৮ সালে মিশর সরকার কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে কাফের এবং তাদের সংগঠনকে বেআইনি সংগঠন বলে ঘোষণা দিয়েছে। ১৯৭৪ খৃস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৯৪ হিজরির ১৪ রবিউল আউয়াল থেকে ১৮ রবিউল আউয়াল পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী ১০৪টি দেশের সম্মিলিত সংগঠন 'রাবেতা আলমে ইসলামি' এর অধিবেশনে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, এ দল কাফের ও ইসলাম বহির্ভূত। তাদের সঙ্গে বিবাহ হারাম এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাদের দাফন করা নাজায়েজ। এই প্রস্তাব ১০৪টি দেশের প্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে পাস করেছেন। তাদের মধ্যে সৌদিআরব, দুবাই, আবুধাবি, কাতার ইত্যাদি দেশ রয়েছে। ১৯৭৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সংসদও কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে। অতঃপর ১৯৮৮ খৃস্টাব্দে ও.আই.সি. সংস্থার নেতৃত্বে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের নেতৃত্বে একটি বিরাট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সমস্ত ইসলামী রাষ্ট্রের ধর্মমন্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত আলোচনা সভায় সমস্ত ধর্মমন্ত্রীগণ থেকে এ অঙ্গিকার নেয়া হয়েছিল যে, কাদিয়ানীরা কাফের। অথচ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে তাদের আজও অমুসলিম ঘোষণা করা হয়নি। যে কারণে বর্তমানে তারা এ দেশে মুসলিম হিসেবে তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করে যাচ্ছে এবং উস্কানিমূলক অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
অতএব অন্তর্বতীকালীন সরকারের নিকট আমাদের জোরালো দাবি অনতিবিলম্বে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করুন। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টান ধর্মালম্বীরা যেভাবে অমুসলিম নাগরিক হিসেবে এদেশের সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকে কাদিয়ানীরাও সেভাবে অমুসলিম নাগরিক হিসেবে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।
হাআমা/