মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ১ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকার যানজট নিরসনের উপায় খুঁজতে বিশেষজ্ঞ ও ডিএমপিকে নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাঙ্খিত সংস্কারে আলেম সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে: জমিয়ত নেতৃবৃন্দ ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে সিলেট আলেম প্রতিনিধির সাক্ষাৎ, আলোচনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন হুব্বে রাসূল ﷺ ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা, সিরাত কনফারেন্স ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ‘আদর্শ নাগরিক গঠনে ভূমিকা রাখছে উলামায়ে কেরাম’ মহানবী (সা.) এর পুরো জীবনটাই আমাদের জন্য আদর্শ: ধর্ম উপদেষ্টা খেলাফত ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও সমাজ শীর্ষক সীরাতুন্নবী সা. সেমিনার অনুষ্ঠিত আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুব আলী কারাগারে তেজগাঁও কলেজের ইতিহাসে প্রথম সর্ববৃহৎ ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত রাসুল (স.) এর আদর্শ পৃথিবীকে শত শত বছর নেতৃত্ব দিয়েছে: চবি অধ্যাপক

লজ্জাহীনতা সব অপকর্মের উৎস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

খুব‌ই মজার ও শিক্ষণীয়  একটি হাদিস উল্লেখ করছি।

হজরত ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , 'গাছের মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হলো মুসলিমের দৃষ্টান্ত। বলো তো সেটি কোন গাছ?'

তখন সাহাবায়ে কেরামের খেয়াল গেল জঙ্গলের বিভিন্ন গাছপালার প্রতি ।কিন্তু ছোট্ট সাহাবি আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'আর আমার মনে হতে লাগল যে, তা হলো খেজুরগাছ।'

তিনি আরো বলেন, 'কিন্তু আমি ছোট হ‌ওয়ায় বলতে লজ্জাবোধ করলাম।'

তখন সাহাবায়ে কেরাম বললেন, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনিই বলুন।' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 'তা হলো খেজুরগাছ।' (বুখারি-১৩৩)

কত সুন্দর প্রিয় নবী  মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথী সাহাবিরা। একজন কিশোর সাহাবি কত লাজুক; এই সুন্দর শিক্ষা ও শালীনতার দৃষ্টান্ত ইসলামের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছাড়া আর কার হতে পারে।

লজ্জা ঈমানের অঙ্গ—  এই ধ্রব সত্য বর্তমানে শুধু লঙ্ঘন‌ই হচ্ছে না, নির্লজ্জভাবে তার প্রচার-প্রসারে অতি উৎসাহীদের অপতৎপরতা অবাধে চলছে।

সম্প্রতিগত নয়া দিগন্তের প্রথম পাতায় 'লজ্জাহীনতার বার্তা শিশুদের মনে' শিরোনামে শাহেদ মতিউর রহমানের একটি প্রতিবেদনে শিক্ষার ভিত্তিমূলে যে অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ড চলছে তা সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। এর সম্পূর্ণ বর্ণনা দিতেও লজ্জা বোধ হয়।

স্বাস্থ্য সুরক্ষার নামে শিক্ষা কারিকুলামে বর্তমানে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের অশ্লীলতার দিকে আহ্বান করা হচ্ছে। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে কিশোর-

কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে কী হয়, কোন সময়ে কী করতে হয়, কেমন করে করতে হয়— তা যেভাবে খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে শিষ্টাচারের লেশ মাত্র নেই।

ওই প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে—

নতুন কারিকুলামে পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন বিষয়। অবশ্য শুরু থেকেই অনেক বিষয় নিয়ে বিতর্কও চলছে। শিশুদের পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা শিশুদের পাঠ করার উপযোগী নয়। আবার শিশুদের পাঠ্যবইয়ে লজ্জাহীন নানা বিষয় যুক্ত করায় অনেক অভিভাবকও রীতিমতো ক্ষুব্ধ-বিরক্ত। শিশুদের সরল মনের সুযোগ নিয়ে পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হয়েছে সমাজবিধ্বংসী ধর্মবিরোধী দর্শন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের মনে মগজে প্রোথিত করা হচ্ছে ধর্মহীনতার তকমা।

নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন অধ্যায় পর্যালোচনা করে দেখা যায় পাঠ্যবইয়ে বেশ কিছু বিষয় এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেগুলো বিতর্কিতই শুধু নয়; বরং ভিনদেশী কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের হীন অপচেষ্টারই নামান্তর। বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মশিক্ষা বা ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিকও বটে। পাঠ্যবই খুলে দেখা যায়, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে যেসব বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে তা শিশুদের জন্য পাঠ-উপযোগী নয়। ষষ্ঠ শ্রেণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে বয়ঃসন্ধিকালের দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা শিশুদের জন্য কোনো মতেই পাঠ-উপযোগী নয়।

সেখানে বলা হয়েছে, কিভাবে একজন ছেলে বা মেয়ের আবেগপ্রবণতা বাড়ে। এ ছাড়া কিশোর-কিশোরীদের পরস্পরের প্রতি কৌতূহল সৃষ্টি হয়। মনের মধ্যে তীব্র আবেগ অনুভূতি অনুভব হয়। ষষ্ঠ শ্রেণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের ৪৭, ৪৮ এবং ৪৯ নম্বর পৃষ্ঠায় বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে এবং মেয়েদের শারীরিক গঠন, আকৃতি বিষয়েও খোলামেলা  আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লেখিত প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে বলা যায় যে, এ ধরনের বর্ণনা-বিশ্লেষণ মূলত ইসলাম বিরোধিতার‌ই প্রয়াস।এটা প্রমাণিত যে, লজ্জাহীনতা সব অপকর্মের উৎস। ইসলামের কল্যাণকর নীতিনৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক কোনো উদ্যোগ-আয়োজন সচেতন মুমিনরা নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারে না। মানুষের মধ্যে যখন নির্লজ্জতার মহামারী ছড়িয়ে পড়ে তখন সমাজ-সংসার ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নেমে আসে নানান ধরনের বিপর্যয়। সেই সাথে অনেকসময় মানুষের অপকর্মের জন্য আল্লাহর আজাব ও গজব নেমে আসে।

লজ্জাহীনতার ব্যাপারে আবু মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পূর্ববর্তী নবীদের নাসিহাত থেকে মানুষ যা লাভ করেছে তার একটা হলো, যদি তুমি লজ্জাই না করো, তবে যা ইচ্ছা তাই করো। (বুখারি-৬১২০)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পথনির্দেশ করে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানান—

(হে নবী,) তুমি মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে (নিম্নগামী ও) সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাজত করে, (এটাই হচ্ছে) তাদের জন্য উত্তম পন্থা, (কেননা) তারা (নিজেদের চোখ ও লজ্জাস্থান দিয়ে) যা করে, আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত রয়েছেন।

(হে নবী, একইভাবে) তুমি মুমিন নারীদেরও বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জান্থানসমূহের হেফাজত করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না বেড়ায়, তবে তার (শরীরের) যে অংশ (এমনিই) খােলা থাকে (তার কথা আলাদা), তারা যেন তাদের বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখে, তারা যেন তাদের স্বামী, তাদের পিতা, তাদের শ্বশুর, তাদের ছেলে, তাদের স্বামীর (আগের ঘরের) ছেলে, তাদের ভাই, তাদের ভাইয়ের ছেলে, তার বোনের ছেলে, তাদের (সচরাচর মেলামেশার) মহিলা, নিজেদের অধিকারভুক্ত সেবিকা দাসী, নিজেদের অধীনস্থ (এমন) পুরুষ যাদের (মহিলাদের কাছ থেকে) কোনো কিছুই কামনা করার নেই, কিংবা এমন শিশু যারা এখনো মহিলাদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে কিছুই জানে না (এসব মানুষ ছাড়া তারা যেন) অন্য কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, (চলার সময়) জমিনের ওপর তারা যেন এমনভাবে নিজেদের পা না রাখে, যে সৌন্দর্য তারা গোপন করে রেখেছিল তা (পায়ের আওয়াজে) লোকদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়, হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, (ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য) তোমরা সবাই আল্লাহর দরবারে তাওবাহ করো, আশা করা যায় তোমরা নাজাত পেয়ে যাবে। (আন-নূর-৩০-৩১)

লজ্জা বিষয়ে রাহমাতাল্লিল আলামিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,  ঈমানের সত্তরটির উপরে শাখা রয়েছে। এর সর্বোত্তমটি হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, আর এর সর্বনিম্নটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা, আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা। (বুখারি-৫০০৫)

লজ্জা না থাকলে তার কাছে কোনো অশ্লীল কথা-কাজ অন্যায়-অপকর্ম বলেই মনে হয় না। লজ্জাহীনরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। মনে রাখতে হবে, শিশু-কিশোরদের লজ্জাহীনতায় ঠেলে দিতে যারা কুণ্ঠাবোধ করে না তাদেরকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। তবে কেউ যদি তাওবাহ-ইস্তেফার করে ফিরে আসে সেটি ভিন্ন কথা। আল্লাহ তায়ালা মহান ও ক্ষমাশীল।

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ