মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ ।। ৬ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিরোনাম :
সাহিত্যের বিকাশে ইসলামি বইমেলা নতুন মাত্রা যোগ করবে: ধর্ম উপদেষ্টা সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত জাতীয় মসজিদের খতীব মুফতি আব্দুল মালেকের বিনয় ও আমাদের শিক্ষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল আগামীকাল সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল ভোলায় যাচ্ছেন মাও. মামুনুল হক গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি হেফাজতের তাবলিগের উভয়পক্ষকে এক করতে উদ্যোগ নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মুফতি আব্দুল মালেকের কাছে বায়তুল মোকাররমে উন্মুক্ত হাদিসের দরসের প্রত্যাশা শিবালয়ে অক্সফোর্ড একাডেমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত ওআইসিভুক্ত ‘ফিকহ একাডেমি’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি হলেন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ

আল্লাহ তাআলা ‘স্থিরতা-স্থানান্তর’ থেকে চির পবিত্র 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুহাম্মদ বিন তৈয়্যব ||

(আওর ইসলাম বাংলাদেশ গত ১৯ আগষ্ট ২০২২ ঈসায়ী শায়েখ মহীউদ্দীন ফারুকী রচিত ‘শিয়া সম্প্রদায়ের কিছু ভ্রান্ত ও কুফরী আকিদা’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে যেখানে কুফরী আকীদার মধ্যে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের একটি সর্বসম্মত চলে আসে। সেই ভুল সংশোধনের নিমিত্তে এই রচনার অবতারণা। আল্লাহ তাআলা আমাদের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসৃত পথে পরিচালিত করুন)

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত অভিমত হাদীসে বর্ণিত নুজুল বা অবতরণ দ্বারা কখনো স্থানান্তর বা নড়াচড়া উদ্দেশ্য না। তবে হাদীসের প্রকৃত মাকসাদ নির্ণয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে এবং তিনটি সমাধান সামনে এসেছে।

১-আল্লাহ তায়ালার একটি কর্মগত গুণের নাম নুজুল— আমরা নুজুলের অবতরণ জাতীয় যে অর্থ জানি; উঁচু জায়গা থেকে নীচে নামা এহেন কর্ম আল্লাহ তাআলার শানে উপযুক্ত না। কেননা তাঁর সত্তা নবাবিষ্কৃত সবকিছু থেকে পবিত্র; কোনো কিছু ধারন করার স্থান না, তাই নুজুলের অর্থ বিষয়ক জ্ঞানকে আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে অর্পণ করি।

২- দুটি বর্ণনা সমন্বয় করার মাধ্যমে আরেকটি সমাধান দেওয়া হয়, নুজুল বা অবতণ দ্বারা কোনো ফেরেশতার অবতরণ উদ্দেশ্য। কেননা বুখারি-মুসলিম শরীফের বর্ণনার সাথে নাসাই শরীফের বর্ণনা মেলানোর পর এই সমাধান স্পষ্ট হয়ে যায়।

আবু হুরাইরা রা. ও আবু সাঈদ খুদরি রা. দুজন থেকে মুসলিম বিন আগার বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রথম অর্ধ রাত অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো একজন আহ্বায়ককে ঘোষণা দেওয়ার আদেশ দেন যেন তিনি বলেন, প্রার্থনাকারী কেউ আছে, তাঁর দোয়ায় সারা দেওয়া হবে! ক্ষমাপ্রার্থী কেউ আছে তাকে ক্ষমা করা হবে! কারো চাওয়ার কিছু আছে তাকে দেওয়া হবে! (১)

৩- অবতরণ দ্বারা আল্লাহ তাআলার আদেশ উদ্দেশ্য। মূলত উহ্য-মুজাফের জায়গায় মুজাফ ইলাইহিকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এমন রূপক ব্যবহার আরবি ও বাংলা ভাষায় স্বীকৃত। যেমন: প্রধানমন্ত্রী অমুককে এক মন চাল দিয়েছেন এবং তমুককে ফাঁসি দিয়েছেন বলার মাধ্যমে বোঝানো হয়ে থাকে তাঁর আদেশেই দুটি কর্ম সংঘটিত হয়েছে; সরাসরি তিনি ফাঁসি কিংবা চাল দেননি।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসৃত সালাফের কাউকে আল্লাহ তাআলার শানে স্থানান্তর জাতীয় অর্থ প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি এবং করেনও নি। কেননা তাদের সবার ঐকমত্য সিদ্ধান্ত: আল্লাহ তাআলার শানে ব্যবহৃত নুজুলের অর্থ স্থানান্তর ও নড়াচড়া বিশ্বাস করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলার সত্তার জন্য স্থানান্তর ও নড়াচড়া ক্রটির নির্দেশক—এসব দেহের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং স্থানান্তর ও নড়াচড়ার দাবিদাররা, প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টা-সৃষ্টির মধ্যে একাকার হয়ে যাওয়া হিন্দুয়ানী হুলুলি আকীদার প্রবক্তা। কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত এমন শব্দের ব্যখ্যা উপরিউক্ত তিনটি মূলনীতির আওতাধীন হবে।

নড়াচড়া নাকচ করার মাধ্যমে স্থিরতা প্রমাণ করা হয় না, বরঞ্চ স্থিরতা ও নড়াচড়া দুটি বৈশিষ্ট্যই নাকচ করা আমাদের উদ্দেশ্য। কেননা আল্লাহ তাআলা দৈহিক বৈশিষ্ট্য থেকে পবিত্র। আর দৈহিক বস্তুর বৈশিষ্ট্য স্থিরতা ও স্থানান্তর অথচ অকাট্য দলিলের আলোকে প্রমাণিত দৈহিক বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত সত্তার শানে স্থিরতা ও নড়াচড়া প্রয়োগ অসম্ভব। সুতরাং আল্লাহ তাআলার শানে স্থিরতা ও নড়াচড়া ব্যবহার অসম্ভব। 

নুজুলের হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে আবদুল বার লিখেছেন, সুন্নাহের দিকে সম্পৃক্ত একটি গোষ্ঠী বলে থাকে, আল্লাহ তাআলা সত্তাগতভাবে অবতরণ করেন, অথচ তাদের দাবি পরিত্যাজ্য। কেননা তিনি নড়াচড়া গ্রহণ করার স্থান না এবং তাঁর মধ্যে সৃষ্টির কোনো বৈশিষ্ট্যও প্রবিষ্ট হতে পারে না।(৩) অপর একটি বইয়ে সত্তাগত অবতরণ এর প্রবক্তাদের সম্পর্কে আবু উমর এর উক্তি পেশ করেন। তিনি বলেন, আহলুস সুন্নাহের অনুসারী গভীর জ্ঞানের অধিকারীদের কাছে বিষয়টি এমন কিছু না (যেমন তারা সত্তাগত অবতরণের দাবি করে) কেননা তাদের উক্তি থেকে ধরন প্রমাণিত অথচ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত ধরনকে ভয় করেন। কারণ দৃষ্টি পরিবেষ্টন করতে সক্ষম এমন বস্তুর ধরন হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা তা থেকে পবিত্র।(৪)

আবু ইয়ালা হাম্বলি বলেন, যে আল্লাহ তায়ালাকে দৈহিক সত্তা বিশ্বাস করে এবং স্থানান্তর ও গঠনের মতো দৈহিক বৈশিষ্ট্য তাঁর জন্য প্রয়োগ করে, তাহলে ওই ব্যক্তি কাফের। কেননা সে আল্লাহ তাআলার পরিচয় লাভ করেনি। আল্লাহ তাআলার শানে এমন গুণাবলী প্রয়োগ অসম্ভব আর কেউ যদি আল্লাহ তাআলার পরিচয় না জানে, তাহলে সে কাফের।(৫)

ইবনে রজব হাম্বলি বলেন, আল্লাহ তাআলার নুজুল দ্বারা সৃষ্টিজীবের মতো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া উদ্দেশ্য না।(৬) 

নববি বলেন, আমাদের সুদৃঢ় আকীদা কোনো কিছুই আল্লাহ তাআলার মতো নয়। তিনি দেহত্ব, স্থানান্তর, কোনো দিকে অবস্থান করা এবং সৃষ্টির সকল গুণ থেকে চির পবিত্র।(৭)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, আল্লাহ তাআলার জন্য যারা দিক সাব্যস্ত করে এবং তাঁর জন্য উপর দিকের কথা বলে জমহুর তাদের দাবি অস্বীকার করেন। কেননা দাবিটি কোনো স্থানে অবস্থানের দিকে নিয়ে যায়। অথচ আল্লাহ তাআলা স্থানে অবস্থান থেকে চিরপবিত্র।(৮) তিনি আরো বলেন, সালাফ ইমাম ও পরবর্তী হাদীস বিশারদের আকীদা হলো, আল্লাহ তাআলা নড়াচড়া, পরিবর্তন-রুপান্তর হওয়া থেকে এবং হুলুল থেকে চিরপবিত্র।(৯)

ইবনে মানজুর বলেন, নুজুল অর্থ অবতরণ; হুলুল (উপর থেকে থেকে নীচু স্থানে নামার মাধ্যমে স্থানটি ভরাট করা) হাদীসে বর্ণিত: আল্লাহ তাআলা প্রতিরাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন অথচ অবতরণ, নড়াচড়া ও স্থিরতা দৈহিক গুণাবলীর বৈশিষ্ট্য—যা থেকে আল্লাহ তাআলা পবিত্র। সুতরাং অবতরণ দ্বারা রহমত; অনুগ্রহ অবতরণ উদ্দেশ্য। বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহপ্রাপ্ত হওয়াকে নিকটবর্তী হওয়া বলে। রাতের তৃতীয়াংশ যাওয়ার পর অনুগ্রহ অবতরণ বলার কারণ: তখন মানুষ ঘুমে অচেতন আর নিকটবর্তী কতিপয় বান্দা তাঁর অনুগ্রহের আশায় তাহাজ্জুদে নিমগ্ন—এই জন্য এই সময় রহমত অবতীর্ণ হয়। (১০)

খোলাসাকথা: আহসলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সবাই একমত আল্লাহ তাআলা স্থান-কাল এবং দৈহিক বৈশিষ্ট্য থেকে পবিত্র। সুতরাং আল্লাহ তাআলার শানে ব্যবহৃত গুণাবলীর অর্থ সৃষ্টিজীব থেকে ভিন্ন; আলাদা এবং সালাফের রীতিতে ব্যাখ্যাযোগ্য।

(১) আল জামে লি আহকামিল কুরআন ৪:৩৯
(২)আল কাউলুত তামামাম বি ইসবাতিত তাফবীয মাজহাবান লিস সালাফিল কিরাম ৫৮
(৩)আল ইসতিসকার ২: ৫৩০
(৪) আত তামহিদ স৭:১৪৪
(৫)তবাকাতুল হানাবিলা ২: ২১২
(৬) ফাতহুল বারি, বাবুত তাওয়াজ্জুহ নাহওয়াল কিবলা 
(৭)আল মিনহাজ শারহু মুসলিম:৩: ১৯
(৮)ফাতহুল বারি:৩:৩০
(৯)ফাতহুল বারি ৭:১২৪
(১০) লিসানুল আরব ১১:৬৫৬

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ