|| মুহাম্মাদ রাজ (নওমুসলিম) ||
অপসংস্কৃতির কালো থাবায় জাতি আজ আহত। পশ্চিমা বিশ্বের পরিত্যক্ত কৃষ্টি-কালচার আজ মুসলিম জাতিও পালন করতে শুরু করেছে। অপসংস্কৃতির ছোবলে গোটা সমাজ ক্রমশ দূষিত হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে মুসলিম সংস্কৃতি।
মুসলমানদের গোটা জীবনই সংস্কৃতি। আমাদের জীবনের প্রতি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে, আহার-বিহারে, অজু-গোসলে, আমোদ-প্রমোদে, আপ্যায়ন-অভ্যর্থনায়, হাঁটা-চলায়, আলাপ-আলোচনায় সর্বক্ষেত্রেই মিশে আছে রক্তের মতো দেহের স্পিরিট শিরা-উপশিরায়। দেহের রক্তের সঙ্গে ইসলামি সংস্কৃতির তুলনা করা যায়। রক্তশূন্য দেহ প্রাণহীন একটি লাশ মাত্র। আর সংস্কৃতিবিহীন মানবদেহ পাথরের সমতুল্য।
কথিত ‘ভালবাসা দিবস’কে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী উন্মাতাল হয়ে ওঠে। বাজার ছেয়ে যায় নানাবিধ উপহারে। পার্ক ও হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো সাজানো হয় নতুন সাজে। পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরেই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’কে ঘিরে পড়ে যায় সাজসাজ রব। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এখন ঐ অপসংস্কৃতির মাতাল ঢেউ লেগেছে। হৈ চৈ, উন্মাদনা, ঝলমলে উপহার সামগ্রী, প্রেমিক যুগলের চোখেমুখে থাকে বিরাট উত্তেজনা। হিংসা-হানাহানির যুগে ভালবাসার এই দিনকে! প্রেমিক যুগল তাই উপেক্ষা করে সব চোখ রাঙানি। বছরের এ দিনটিকে তারা বেছে নিয়েছে হৃদয়ের কথোকতার কলি ফোটাতে।
মুসলিমদের মাঝে কুরআন ও সুন্নাহ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তারে আল্লাহ প্রদত্ত সম্মানিত জীবন ত্যাগ করে গ্লানিকর জীবন বেছে নিয়েছে? একসময়ে অর্ধ-বিশ্ব শাসনকারী মুসলিম সমাজ আজ কেন সর্বত্র নিষ্পেষিত? সঠিক পথনির্দেশনা পাবার পরও কেন আজ তারা অধঃপতিত এক জাতিতে রূপান্তরিত? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে রাসুলের (সা.) হাদিসে।
‘তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীগণের অনুকরণ করবে (হুবহু), তারা যদি (গুঁই সাপ সদৃশ প্রাণীর) গর্তে প্রবেশ করে তোমরাও তেমনি করবে । আমরা (সাহাবীগণ) জিজ্ঞাসা করলাম , ‘হে আল্লাহর রাসুল! এরা কি ইহুদি ও নাসারারা? ’ তিনি বললেন, ‘তবে আর কারা?’ ” –(বুখারী, মুসলিম)
অমুসলিমদের উৎসব মুসলিমদের সংষ্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ সুব্হানাহুতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুপষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি...।’ (সুরা মায়িদাহ-৪৮)
‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয় ...।’ (সুরা হাজ্জ-৬৭)
মানুষের অন্তর যদিও অনুকরণপ্রিয়, তবুও মনে রাখতে হবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ বিচারে এটি গর্হিত, নিন্দিত। বিশেষ করে অনুকরণীয় বিষয় যদি হয় আকিদা, ইবাদত, ধর্মীয় আলামত বিরোধী, আর অনুকরণীয় ব্যক্তি যদি হয় বিধর্মী, বিজাতি।
দুর্ভাগ্য যে, মুসলমানরা ক্রমশ ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে আসছে এবং বিজাতিদের অনুকরণ ক্রমান্বয়ে বেশি বেশি আরম্ভ করছে। যার অন্যতম ১৪ ফেব্রুয়ারি বা কথিত ভালবাসা দিবস। মুসলমানদের জন্য এসব বিদস পালন জঘন্য অপরাধ।
মানুষ এটাকে ভালোবাসা দিবস বলে আখ্যা দিলেও ভালোবাসার সঠিক মর্ম সম্পর্কে তারা অবগত নয়। যদি মানুষ ভালোবাসার সঠিক অর্থ আর মহত্ব সম্পর্কে অবগত থাকত; তাহলে নিকৃষ্ট আর পাপাচারে ভরপুর এই দিনকে কখনোই ভালোবাসা দিবস নাম দিত না। ভালোবাসা হচ্ছে মহান আল্লাহ প্রদত্ত এক পবিত্র অনুভূতি বা সম্পর্ক। ভালোবাসা মানে হলো একে অন্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আল্লাহ তায়ালা যেমন মানুষের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি করেছেন তেমনি এই ভালোবাসার জন্য সীমাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সর্বোত্তম ভালোবাসা তো সেটাই যেটা মহান আল্লাহর জন্য মুমিনের অন্তরে উদিত হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অন্যের প্রতি সৃষ্টি হয়।
লেখক: পরিচালক, হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ
কেএল/