আওয়ামী ফ্যাসীবাদীদের পতন হলেও মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন; তাই আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা, অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আমাদের বিক্ষোভ-সমাবেশ-আন্দোলন কোনভাবেই বন্ধ হবে না বরং জনগণ তাদের নেতাকে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করেই ছাড়বে’ বলে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এসময় তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।
কাউকে মুক্তি দিবে কাউকে মুক্তি দিবে না সরকারের এমন কর্মকান্ডে জাতি আশাহত হয়েছে। স্পষ্ট করে বলতে হয়, অনতিবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলাম কে মুক্তি দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতিক ফেরত দিবে দিতে হবে। নতুবা জামায়াতে ইসলামী রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলমান রাখবে। এবং আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে। মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, ফ্যাসিবাদের জুলুম ধরে রাখা যাবে না। সকল জুলুমের কবর রচনা করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে পল্টন মোড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর কর্তৃক এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় আমীরে জামায়াত আরো বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আওয়ামী লীগ বিচারিক হত্যা করেছে। যখন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম, তখন আওয়ামী লীগ তাকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিগত ১৩ বছর কারাগারে বন্দি করে রেখেছে।
ফ্যাসিবাদের ভাষায় নয় রাজনীতির ভাষায় কথা বলতে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী এক আল্লাহ ব্যতিত কাউকে ভয় করে না। কারো কাছে মাথানত করে না। বহু আপোসের প্রস্তাব জামায়াতে ইসলামী ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কারা কোথায় মাথানত করেছে তা আমাদের জানা আছে, তথ্যও আছে। জামায়াতে ইসলামী কারো চোখ রাঙ্গানীকে ভয় করে না। বরং সকল অপশক্তি ও ফ্যাসিবাদের নিপাত করতে জানে। তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের থেকে জানতে চান, বিগত সাড়ে ১৫ বছর যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ থেকে বৈষম্য দূর করতে লড়াই করা হয়েছে, বৈষম্য মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সেই লড়াই অব্যাহত রাখা যাবে কিনা?- এসময় উপস্থিত লাখ-লাখ নেতাকর্মী লড়াই অব্যাহত রাখার স্লোগান দিতে দেখা যায়। দেশ এখনো বৈষম্যমুক্ত হয়নি। তাই দেশ যতদিন বৈষম্যমুক্ত না হবে, ততদিন আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম বন্ধ হবে না। কারণ, আমাদের বিজয় সবে শুরু হয়েছে কিন্তু শেষ হয়নি। তিনি উচ্চকিত কন্ঠে স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ; শেষ হয়নি যুদ্ধ’। তিনি জনতার উদ্দেশ্যে প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের যুদ্ধ-সংগ্রাম চলছে এবং চলবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামকে বিচারের নামে প্রহসন ও ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে গুরুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারের পতনের পরও তার মুক্তির দাবি নিয়ে আমাদেরকে রাজপথে নামতে হয়েছে। তিনি অনতিবিলম্বে এটিএম আজহারের মুক্তি, দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় আগামী দিনের আন্দোলনকে সর্বাত্মক রূপ দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেন।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, যদি চোখের ভাষা আর মুখের ভাষা সরকার না বুঝে তবে যেই ভাষা সরকার বুঝবে সেই ভাষাই ব্যবহার করা হবে। বিপ্লবের পর বিপ্লবী নেতা কারাগারে থাকতে পারে না। ছাত্র-জনতা জীবন ও রক্ত দিয়েছে এদেশ থেকে জুলুমের ইতিহাস মুজে একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে। সেই মানবিক রাষ্ট্র গঠনে যারা বাঁধা হবে তাদের পরিণতিও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মতই হবে। এটিএম আজহারুল ইসলাম সহ জুলুমের শিকার সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র-জনতার নামে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দায়ের করা সব মামলা বাতিল করতে হবে। নতুবা আমরাও কঠোর হতে বাধ্য হবো।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর প্রধান উপদেষ্টা তার মামলা থেকে মুক্তি নিয়েছেন। আইন উপদেষ্টা তার মামলা থেকে মুক্তি নিয়েছেন। অথচ আওয়ামী লীগের জুলুমের শিকার হয়ে যেই বিপ্লবী নেতা বিগত ১৩ বছর কারাগারে বন্দি তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। আমরা গত ৬ মাস অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সময় দিয়েছি। কিন্তু সরকার বৈষম্য দূর না করে নতুন করে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। কেউ মুক্তি পাবে, কেউ মুক্তি পাবে না এটা নতুন বাংলাদেশে হতে দেওয়া হবে না। সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতিক ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। নয়তো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারী দেন নূরুল ইসলাম বুলবুলু।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট হেলাল উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা ও ডা.ফখরুদ্দিন মানিক এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন ড. আব্দুল মান্নান প্রমূখ। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রমহানের নেতৃত্বে কয়েক লাখ নেতাকর্মী পল্টন মোড় থেকে শুরু করে শাহবাগে এসে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে।
আরএইচ/