দেশের ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন অধিকাংশ মানুষ। শুক্রবার ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গণমাধ্যমটির করা এক জরিপের ফলাফলে নিরাপত্তা নিয়ে ধারণায় মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পরিচালিত এই জরিপে ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। মাত্র ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য আগের চেয়ে খারাপ নিরাপত্তা দিচ্ছে। ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যে প্রতিশোধপ্রবণতা দেখা যায় তার বড় এক ধাক্কা গিয়ে পড়ে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী বা হিন্দুদের ওপর। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
জরিপে এক হাজার উত্তরদাতাকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের তুলনা করতে বলা হয়। বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের জন্য এক হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়।
উত্তরদাতাদের মধ্যে সমানসংখ্যার নারী ও পুরুষ ছিলেন। যাদের মধ্যে ৯২ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলিম। উত্তরদাতাদের মধ্যে অর্ধেকের একটু বেশির বয়স ৩৪ বছর বয়সের নিচে। উত্তরদাতাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শহুরে মানুষ।
বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে তাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আবার শুধু সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেও তাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের আবাসস্থলে আক্রমণ হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যে বরাবরই ঝুঁকির মধ্যে থাকে, সেদিকে ইঙ্গিত করেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি বলেন, ‘কোনো সরকার তাদের (সংখ্যালঘু) অধিকার রক্ষার জন্য খুব একটা কিছু করে না।’
তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রশাসন, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসেন সংখ্যালঘুদের উপাসনাস্থল পাহারা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনের একজন সদস্য নূর খান। গণমাধ্যমটিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ আমরা লক্ষ করেছি, সাধারণ মানুষের তরফ থেকে, রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর তরফ থেকে। এর ফলে দেখা গেছে, পরবর্তী এক মাসের মধ্যেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে।’
সংখ্যালঘুদের স্বস্তির জায়গা
জরিপে দেখা গেছে, মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে।
অন্যদিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ এই ধারণার সঙ্গে একমত। অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করেন, আগের তুলনায় তারা বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে।