মহিউদ্দিন আহমেদ
গাজীপুর (উত্তর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের বন ও বাঁশ বাগানের বাঁশ কেটে নিয়েছে দূর্বৃত্তরা। বিশ একর বনভূমি থেকে অবৈধ ভাবে কাটা হচ্ছে এসব বাঁশ। এতে উজাড় হচ্ছে বনের বাঁশ। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আয়। বিট কর্মকর্তার উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে দূর্বৃত্তরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের পোষাইদ এলাকায় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে তিন হেক্টর বা ৭.৪৭ একর জমিতে বাঁশ বাগান করে বনবিভাগ। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে পাশেই করা হয় ৫ হেক্টর বা ১২.৩৫ একর বাঁশ বাগান। দু’দফায় ১৯.৭৬একর বনভূমিতে সৃজিত বাঁশ বাগান। এসব বাগানে রোপন করা হয়েছিলো বরাক, মাহাল,রেঙ্গুন, ছিপ ও মলি জাতের বাঁশ।
গত বারো বছরে ওই বন ভূমিতে জন্মেছে বিপুল পরিমান বাঁশ। পুরো বাগান জুড়ে রয়েছে হাজার হাজার বিভিন্ন জাতের বাঁশ। বনের বাঁশ গুলো বিক্রির উপযোগী হয়েছে। এসব বাঁশ বিক্রি করলে এক দিকে অর্জণ হতো সরকারের রাজস্ব। অপর দিকে লাভবান হতো উপকার ভোগীরা।
তবে গত পাঁচ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শ্রীপুরে জেঁকে বসেছে বনখেকুরা। বন ভূমি দখল করেই ক্ষান্ত নয়। বন খেকুরদের দৃষ্টি এখন বনের বাঁশের উপর। সম্প্রতি সাতখামাইর বিটের বনাঞ্চলে বনবিভাগ মাইকিং করে জানান দেন যে, বনের জমিতে বাড়ি ঘর নির্মান, বনের গাছ বাঁশ কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। বন অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বনের বাঁশ উজাড় হচ্ছে পোষাইদ এলাকার বরমী-জৈনাবাজার আঞ্চলিক সড়কের লাগুয়া গভীর গজারী বন। বনের ভেতর দিয়ে গেছে ইট সলিং রাস্তা। সে রাস্তা ধরে এগুলে সামনে মেঠু পথ। পথের পাশেই চোখে পরে বাঁশ বনের ক্ষত। রাস্তার পাশে পড়ে আছে বাশের কঞ্চি। ওই পথ ধরে বনে গিয়ে করিরের বাড়ির দু’পাশে দেখাযায় বাঁশের স্তুপ। একই দৃশ্য পাশের আজিজুলের বাড়ির পাশেও কবির ও মফিজুল বনের বাঁশ বিক্রি করেছে। আর সে বাঁশ বেপারীরাই কেটে রাখেন। শুধু কবির, মফিজুল নয়, বনের বাঁশ অবৈধ ভাবে কেটে বিক্রি করেছে অরো অনেকে।
নাম প্রকাশে স্থানীয়রা জানান,বন বিভাগের মাইকিংয়ের পর থেকেই বন খেকুরা বাঁশ কাটায় ধুম পড়েছে। প্রায় প্রতিনিয়ত কেটে নিচ্ছে বাঁশ। কিছু অসাধু উপকার ভোগী ও একটি সংঘবদ্ধ চক্র বনের সম্পদ লুটপাট করছে। বন থেকে কেটে নিচ্ছে শতশত বাঁশ। বাঁশ কাটার সাথে জড়িতরা প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দিয়ে থাকে। দিন ভর বনাঞ্চলের বাঁশ কাটা হলেও বন বিভাগের কোন লোকজন সেখানে আসেনা। স্থানীয়রা জানান এভাবে বনের বাঁশ লুটপাট এর আগে কখনো দেখিনি। একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাতারাতি বনথেকে মূল্যবান বাঁশ কেটে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সাতখামাইরের ফরেষ্ট বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, বন ও বনজ সম্পদ রক্ষার্থে আনুমানিক দেড় মাস পূর্বে বিট বনাঞ্চলে মাইকিংকরে এলাকা বাসীকে সতর্ক করেদেয় বনবিভাগ।এতে বলা হয় কেউ যেন বনের জমিতে স্থাপনা নির্মাণ, বন ভূমি দখল, গাছ,বাঁশ কাটা থেকে বিরত থাকে। নতুন করে গড়ে উঠা একটি চক্র বাঁশ কেটেছে।
আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে বাঁশ উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় আঃ বাতেনের ছেলে মো. জাকির হোসেন রাজু বাধা সৃষ্টি করে। সব গাড়িকে নিষেধ করে বাঁশ না আনতে। সব শেষ রাত এগারোটার দিকে গোসিংগা থেকে গাড়ী এনে ওই বাঁশ উদ্ধার করি।
শ্রীপুর রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, বনের ভেতর বাঁশ কাটার খবর পেয়ে বিট কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছি। কিছু বাঁশ উদ্ধার করা হয়েছে। বনের বাঁশ,গাছ কাটা,জমি দখলের সাথে যারা জড়িত বা বনবিভাগের কাজে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএন/