২০২০ সালের ঘটনা। সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ছয় কিশোর ও যুবক সুন্দরবন ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করে। ৭ জুন সকালে সঙ্গে সামান্য পানি ও চিপস নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়ে গহীন বনে। একপর্যায়ে হারিয়ে ফেলে দিক। এরই মধ্যে শুরু হয় প্রচণ্ড বাতাস-বৃষ্টি। আটকা পড়েন তারা। খাবার-পানিও শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যা নেমে রাত বাড়তে থাকে। সবার মধ্যে বাড়তে থাকে বাঘ আতঙ্ক। আশ্রয় নেন গাছের ডালে।
এরপর দলের একজন রাত ১০টায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চান। জাতীয় জরুরি সেবা শরণখোলা থানা পুলিশকে জানালে তারা ধানসাগর নৌ-পুলিশকে নিয়ে রাত ১১টা থেকে অভিযান শুরু করে। আটকে পড়া যুবকরা তাদের অবস্থান বলতে না পারায় পরদিন ভোর ৪টার দিকে বনের পাঁচ কিলোমিটার ভেতর থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।
শুধু বন-জঙ্গল, নদী বা গভীর সমুদ্রে পথ হারিয়েই নয়, পাচারের শিকার হয়ে কোথাও আটকে থাকলেও সঠিক অবস্থান বলতে না পারায় অনেক সময় উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এমন হাজারো বিড়ম্বনা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু হওয়ার পর থেকেই। প্রতিদিন ২২ থেকে ২৫ হাজার ফোন কলারের পরিচয় জানতে সময়ক্ষেপণ, অযাচিত ফোন কলসহ নানা সমস্যা ও সাড়া দেওয়ার সময় কমিয়ে আনতে কলার লোকেশন ট্র্যাকার চালুর চিন্তা করে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু করোনা মহামারিসহ নানা কারণে এখনো তা পুরোপুরি চালু হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে কোনো সমস্যায় ভুক্তভোগীর নাম-ঠিকানা-অবস্থান নির্ধারণ করে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কাজ করবে অটো কলার লোকেশন ট্র্যাকার। চলতি বছরের শেষ দিকে পুরোপুরি চালু হতে পারে এ সেবা। এতে সাড়া দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর আবদুল গণি রোডে পুলিশের সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জাতীয় জারুরি সেবা ৯৯৯ এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বিপদে-আপদে পুলিশি সেবা, ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিতে চালু হওয়া এ নম্বরটিতে মোবাইল ও ল্যান্ডফোন থেকে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি কল করে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সেবা নিতে পারে মানুষ।
৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত চার কোটি ৮৪ লাখ আট হাজার ৭৬৪টি কল এসেছে। এর মধ্যে দুই কোটি তিন লাখ ২৮ হাজার ২৬৬টি কলার সেবা পেয়েছেন, যা মোট কলের ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। একই সময়ে দুই কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার ৪৯৮টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে, যা মোট কলের ৫৮ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। এর মধ্যে বিরক্তকর কলই ছিল ২৩ লাখ ৭৭ হাজার ১০টি। বর্তমানে প্রতিদিন ২২ থেকে ২৫ হাজার ফোন আসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে।
ফোন করে কথা না বলা, অকারণে ফোন করা, অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা, মিসড কল দেওয়াসহ অপ্রয়োজনীয় ফোন করা হয়। এসব নম্বরে ৯৯৯ থেকে সতর্ক করে পাঠানো হয় মেসেজ। এরপরও বারবার ফোন করে বিরক্ত করলে সেই নম্বর ব্লক লিস্ট করে রাখা হয়। বিরক্তিকর কল থেকে মুক্তি পেতে ২০২১ সালের ১ জুলাই বিরক্ত করা কলের জন্য দণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ধারা ৭০ (১) সংশোধন করা হয়। এই আইনে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কল দিলে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিরক্তিকর কলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
সেবা দিতে বিড়ম্বনা
পারিবারিক নির্যাতন থেকে শুরু করে নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে ৯৯৯। কলার লোকেশন ট্র্যাকার না থাকায় ৯৯৯-এ ফোন করলে প্রথমে গ্রাহক বা ভুক্তভোগীকে তার নাম, ঠিকানা বলতে হয়। অনেক সময় বিপদগ্রস্ত মানুষটি তার সঠিক অবস্থান জানাতে পারেন না। ফলে সেবাদানে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
এম আই/