আবু হামদান, নিজস্ব প্রতিবেদক
কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর মজলিসে শুরা অনুষ্ঠিত হবে।
আজ (৯ সেপ্টেম্বর) শনিবার সকালে ১০ টায় রাজধানীর ভাঙ্গাপ্রেসস্থ বেফাকের কার্য়ালয়ে সংস্থাটির সভাপতি ও আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আমেলার (কার্যনির্বাহী পরিষদ) বৈঠকে এ স্দ্ধিান্ত নেওয়া হয়।
বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের পরিচালনায় আমেলার এ বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে বেফাক সূত্রে জানা গেছে।
সংস্থাটির মহাপরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী জানান, আজকের বৈঠকে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর মজলিসে শুরার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও বেফাকের গঠনন্ত্রের সংশোধনী, দুস্তুরুল মাদারিস বা কওমি মাদরাসা পরিচালনার নীতিমালার অনুমোদন পেয়েছে বেফাকের জরুরি এ বৈঠকে।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা মাহমুদুল হাসান বেফাকের বিগত বছরের কার্যবিবরণী তুলে ধরে বলেন, সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষা একটি অনিয়মপূর্ণ বিষয় বলে মানুষের সামনে প্রমাণিত। আলহামদুলিল্লাহ, কওমী মাদরাসা অন্য অনেক বিষয়ের মতো পরীক্ষার স্বচ্ছতার দিক দিয়েও জাতির সামনে প্রশংসিত।
এ বছর থেকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় আগামী দু'এক বৎসরের মধ্যে সারা দেশের কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থি নিবন্ধন, অন্তর্ভুক্তি, গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থাসহ বেফাকের সকল বিভাগ অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যারের আওতায় চলে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, বেফাকের তা'লীম-তারবিয়াত বিভাগ, প্রশিক্ষণ, পরিদর্শন ইত্যাদি আরো নিপুনভাবে এগিয়ে নিচ্ছে, আল্লাহ চাহেতো অল্পদিনের ব্যবধানে বেফাক বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ নিজস্ব ভবনে স্থায়ীরূপে চালু করতে যাচ্ছে।বেফাক কর্তৃক প্রকাশিত পাঠ্য বইগুলো নকল প্রতিরোধে কোম্পানী হতে ভিন্ন কালারের কাগজ বানিয়ে ছাপানো হয়েছে যার ফলে বিগত বৎসর প্রায় ১০০% নকল প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ২৯/০৫/১৪৪৪হিঃ তারিখে বেফাকের সর্বমোট ইলহাকভুক্ত মাদরাসা ছিল ১৯,৯৬১টি, বর্তমানে ইলহাকভুক্ত মাদরাসা সংখ্যা ২১,৮৪৯ টি মোট ১৮৮৮টি মাদরাসা বিগত আমেলার পর হতে আজ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান জায়গার প্লান পাশ করিয়ে বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা সাবকমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বেফাকের সামগ্রিক কল্যান সাধনে আপনাদের সকলের সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।
বেফাক আরও সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক মন্দাভাব ও জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় এ বছর শিক্ষার্থীদের সকল পর্যায়ের ফি কমানো হয়েছে। অনগ্রসর এলাকায় মকতব-মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা এবং প্রয়োজনে ত্রাণ-সাহায্য প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়নের পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও নানাবিধ কল্যানকর কাজে বেফাকের পদচারণা থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আজকের বৈঠকে সারাদেশ থেকে মজলিসে আমেলার সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শায়খ সাজিদুর রহমান, সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ মধুপুরী, মাওলানা আবদুর রহমান হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি মনসুরুল হক, হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন আহমদ গহরপুরী, মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা জাফর আহমদ, কোষাধ্যক্ষ মাওলানা মুনীরুজ্জামানসহ প্রায় শতাধিক সদস্য এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বেফাকের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়; যেখানে পুরো বছর গৃহিত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন হয়। আসন্ন ২৩ সেপ্টেম্বরের শূরায় বেফাকের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলেও বেফাক সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বৈঠকে রবিউল আউয়াল মাসের ভেতরে বেফাকের কাউন্সিল করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। ওই বৈঠকে কাউন্সিলের সুবিধার জন্য বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৮ মাস বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, বেফাকের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে কিছুটা দেরিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দশম কাউন্সিল। ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে কাউন্সিল; যেখানে শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে (রহ.) সভাপতি ও ফরিদাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।
পরবর্তীতে শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফির মৃত্যু ও মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের পদত্যাগের কারণে ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর আমেলা বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হোন আল্লামা মাহমুদুল হাসান এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নির্বাচিত হোন মাওলানা মাহফুজুল হক। পরবর্তীতে বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয় মাওলানা সাজিদুর রহমানকে।
আরএম/