মানব চোখ একটি ইন্দ্রিয় অঙ্গ, সংবেদনশীল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ, যা দৃশ্যমান আলোতে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং আমাদেরকে জিনিস দেখা, আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং সার্কাডীয় ছন্দ বজায় রাখাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে চাক্ষুষ তথ্য ব্যবহার করতে দেয়।
আর তাই চোখকে একটি জীবন্ত অপটিক্যাল ডিভাইস হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অথচ জীবনযাপনে নানা অনিয়মের কারণে কম বয়সেও চোখের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে বিশ্রাম পায় না চোখও। অথচ যত চাপ চোখের উপরেই। যেমন- অফিসে কম্পিউটার, ল্যাপটপের সামনে দীর্ঘক্ষণ কাজ কিংবা বাড়ি ফিরে মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিল দেখার কারণে চোখের বিশ্রাম তেমন করে হয় না বললেই চলে। আর কম বয়সের এই অভ্যাস থেকেই বার্ধক্যে চোখে দেখা দেয় নানা রকম সমস্যা। ৪০ এর পর চোখের চাই বাড়তি যত্ন। চোখের যত্ন নেয়া যে খুব কঠিন ব্যাপার, তা কিন্তু নয়। চোখ ভালো রাখতে যেভাবে সতর্ক হবেন, রইল তার পরামর্শ-
১. চোখ ভালো রাখতে বেশি করে পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। শরীরে পানির মাত্রা যত বেশি থাকবে, চোখ তত ভালো থাকবে। অনেকক্ষণ একদৃষ্টে কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। মাঝেমাঝে চোখে পানির ঝাপটা দিন।
২. সারাক্ষণ টিভি বা কম্পিউটারের পর্দায় চোখ থাকে অধিকাংশের। কিন্তু সেই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে চোখের কথা ভেবে। না হলে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যদি টানা কম্পিউটারে কাজ করতে হয়, তবে পর্দার সঙ্গে চোখের যেন থাকে যথেষ্ট দূরত্ব। যারা কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করেন, তাদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। পাশাপাশি, এখন বিশেষ ধরনের চশমা পাওয়া যায় যা বৈদ্যুতিন পর্দা থেকে নির্গত ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করে। প্রয়োজনে পরতে হবে নীল ও অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধক চশমা।
৩. যারা কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করেন, তাদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। অতিরিক্ত রোদে বেরোনো চোখের জন্য ভা নয়। সূর্যের আলো সরাসরি যাতে চোখে বেশিক্ষণ না পড়ে, তার জন্য কালো রোদচশমা পরে নেয়া যেতে পারে। খুব চড়া রোদে খালি চোখে বেরোবেন না।
৪. শরীর সুস্থ রাখতে যেমন নিয়মিত শরীরচর্চার প্রয়োজন, তেমনই চোখ ভালো রাখতেও করতে হবে চোখের ব্যায়াম। এই ক্ষেত্রে মেনে চলতে পারেন ২০-২০-২০ নিয়ম। এই নিয়ম অনুসারে ২০ মিনিট একটানা পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার পর অন্তত ২০ সেকেন্ড ২০ ফিট দূরত্বের কোনও বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। পাশাপাশি, বার বার চোখের পলক ফেলাও জরুরি।
৫. চোখের কোনো রকম ক্ষতি রুখতে বছরে অন্তত একবার চোখের পরীক্ষা করানো জরুরি। নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করালেই গ্লকোমা, ছানির মতো সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।
এর পাশাপাশি ডায়েটেও নজর দেওয়া জরুরি। ভিটামিন এ, সি, ই, জিঙ্ক, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড জাতীয় পুষ্টি দৃষ্টিশক্তির জন্য খুবই জরুরি। তাই রোজকার খাবার থেকে এই পুষ্টিগুণগুলো যাতে পান, তা নিশ্চিত করুন। সামুদ্রিক মাছ, শাক সবজি, ফল জাতীয় খাবার রোজ খান। আট থেকে আশি— সব বয়সের মানুষের জন্যেই এগুলো জরুরি। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি করে খান। ক্যারোটিনয়েড চোখের রেটিনার জন্য বিশেষ করে উপকারি। ডিম বা সবুজ সবজিতে ক্যারোটিনয়েড থাকে। তাই এই খাবারগুলো রোজকার ডায়েটে অবশ্যই রাখবেন।
এনএ/