সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫ ।। ১৭ চৈত্র ১৪৩১ ।। ২ শাওয়াল ১৪৪৬


ক্ষমা করে দেই ; ক্ষমা নিয়ে নেই


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| ইশতিয়াক মুহাম্মদ আল-আমিন ||

ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফসলের পাশাপাশি আগাছাও বৃদ্ধি পায়। আগাছা যখন ফসলের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে যায় তখনই ফসল অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। 

নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ও বিভিন্ন আমলের পাশাপাশি ইবাদতের সাথে সাথে মানব জীবনে আগাছার ন্যায় কিছু কার্যকলাপের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এগুলো যখন ইবাদতের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে যায় তখন ইবাদত গুলো নিস্তেজ ও নিস্প্রাণ হয়ে যায়। এ আগাছাগুলো হলো-

১. লোভ-দুনিয়ার লোভ। 
২. দীর্ঘ আশা। 
৩. গোস্বা, রাগ।
৪.  মিথ্যাবলা। 
৫. গীবত। 

৬. কার্পণ্য, কৃপণতা। 
৭. হিংসা-হাসাদ। 
৮.রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানো আমল। 
৯. কিবর, অহংকার।
১০. কীনা।এটাও হিংসার কাছাকাছি।

এর মধ্যে ৫ নম্বর আগাছা (গীবত) বনি আদমের সকল আমল ধ্বংস করে দেয়। কোরআন হাদিসে এ ব্যাপারে চরম সতর্কবাণী আসার পরেও শয়তানের প্ররোচনায় এটি থেকে আমরা কেউই মুক্ত নই।বাজার ঘাট, চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে মসজিদ পর্যন্ত এর দৌরাত্ব! এটা এতই জঘন্য যে জিনা ব্যাবিচারের গুনাহ মাফ হবে কিন্তু গীবতের গুনা মাফ হবে না। 

হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন মি’রাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল ! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো অর্থাৎ, মানুষের গীবত করত এবং মানুষের ইজ্জতের উপর হামলা করত।” এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৭৮।)

গীবতের ক্ষতিসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- যার গীবত করা হয় তার আমলনামায় গীবতকারীর সওয়াব চলে।  [বুখারি, মুসলিম] 

বলা হয়েছে, গীবতকারীকে লাইলাতুল কদরেও ক্ষমা করা হবে না যতক্ষণ না সে তার (যার নামে গীবত করা হয়েছে) কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।আমি একজন মানুষ, আমি হয়তো গীবত করেছি বা আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছি তাই আমি বিনীতভাবে আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।

বনি আদমের মধ্যে অন্যতম মর্যাদাশীল ব্যক্তি সে, যে ব্যক্তি  ক্ষমাশীল। আল্লাহ নিজেও ক্ষমাশীল তিনি ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন। (সুরা নিসা, আয়াত: ১৪৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন করেছেন, যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে, তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। (মুসলিম, হাদিস: ২৫৮৮)

অপরকে ক্ষমা করে যেভাবে সাহাবীরা সৌভাগ্যবান হয়েছিলেন—
হযরত আবুজর গিফারী রা. একদিন রাসূল স. দরবারে বসা ছিলেন। জিব্রাইল  আ. এসে বললেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ তিনি আবু জর গিফারী না? নবীজি বললেন, আপনি তাকে চিনেন কীভাবে? জিব্রাইল আ.বললেন, আসমানে এমন কোনো ফেরেশতা নেই যে আবু জর গিফারিকে চিনে না। নবীজি বললেন, কি আমলের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে? জিবরাইল আ. বললেন,তিনি বেশি বেশি সূরা ইখলাস পড়েন এবং  সকল মুসলমানকে মাফ করে দেন। 
নবীজি যে সাহাবীকে জান্নাতি বলে আখ্যায়িত করেছেন, অনুসন্ধানে দেখা গেছে তার বিশেষ আমল হলো সেও ঘুমের আগে সবাইকে মাফ করে দিত। 

আমরা সবাই যেহেতু এই মামলার আসামি অতএব আমাদের উচিত হবে একে অপরকে মাফ করে দেওয়া। আসুন, আগামী রমজান পর্যন্ত আমরা হায়াত পাব কি না সেটি কেউই জানি না। নাজাতের দশকে একে অপরকে মাফ করে জান্নাতের সার্টিফিকেট নিয়ে নেই।

আল্লাহ আমাদের একে অপরকে মাফ করে দেওয়ার তৌফিক দিয়ে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিন । আমীন।

লেখক: বার্তা সম্পাদক, স্বাধীন বাংলা নিউজ ।

এমএম/


সম্পর্কিত খবর