বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ।। ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১২ রমজান ১৪৪৬


জান্নাতি যুবকের নামাজের দৃশ্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা কামাল 

বিস্তৃত মাঠ। মানুষের সমাগম। সামনে শূলি। একজন কয়েদি উপস্থিত। হাতে পায়ে তার বেড়ী। চারপাশে নারী-পুরুষ, বাচ্চাদের চেঁচামেচি। শোরগোল। হৈ-চৈ। চিৎকার করে বলছে— "চড়াও একে শূলিতে। প্রতিশোধ নাও, প্রতিশোধ! নিজেদের বাপ-দাদা হত্যার প্রতিশোধ। নিক্ষেপ করো এখনই। বুঝিয়ে দাও জীবনের তরে যত দেনা-পাওনা"।

হঠাৎ শোনা গেল এক আওয়াজ। দৃঢ় কণ্ঠে। নির্ভয়ে। প্রশান্ত চিত্তে। আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। নারী পুরুষের মাঝখানে। "তোমরা আমাকে দুই রাকাত নামাজ পড়ার সুযোগ দিতে পারো"?। 

নামাজে দাঁড়ালো কয়েদি। কেবলামুখি হয়ে। নামাজ পড়ছেন। ধীরে। প্রশান্ত মনে। আহ্ কী সুন্দর নামাজের দৃশ্য! বড় মায়াবী। জান্নাতী। মনোমুগ্ধকর তার স্থিরতা। নামাজ পূর্ণ করার দৃশ্যই বা কত মধুর।

নামাজ শেষে স্থির হয়ে দাঁড়ালেন । ঘোষণা করলেন দীপ্ত কণ্ঠে— আরশের অধিপতির কসম! যদি তোমরা এই আশঙ্কা না করতে— মৃত্যুর ভয়ে আমি নামাজ দীর্ঘ করছি, তাহলে আমি নামাজ আরও দীর্ঘ করতাম"। 

অপর কোণে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। চুপচাপ। নিরব। অবলোকন করছে সবকিছু। কী যেন তুফান তুলছে তার মনে। অজানা কোন চিন্তা। সে হারিয়ে যাচ্ছে। কল্পনার জগতে। সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়ে হয়তো চেষ্টা করছে কিছু খুঁজে নিয়ে আসতে। কিন্তু পারেনি কোনো কূল-কিনারা পাইনি। 

সে অবলোকন করেই যাচ্ছে। দুচোখ তার ঘুরে ফিরে। চতুর্দিকে। কয়েদি যুবকের দিকে। বন্দিকারী লোকদের দিকে। 'মূছলা' করছে তারা কয়েদিকে। ছিন্নভিন্ন করছে অঙ্গ-প্রতঙ্গ। ক্ষতবিক্ষত করছে দেহ। জীবন্ত দেহ থেকে কেটে নিচ্ছে একের পর এক অঙ্গ। হাত-পা, নাক-কান। আর বলছে— বল! তোকে মুক্তি দিয়ে তোর স্থানে মুহাম্মাদকে এনে রাখবো। তুই রাজি? 

রক্ত ছুটছে। ঝর্ণার মতো। ফিনকি দিয়ে ওঠা ঝর্ণা। একে তো হায়েনার মত খুবলে নিচ্ছে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তার উপর আবার কলিজায় আঘাত— মোহাম্মদের হুমকি!সিংহের মতো গর্জন করে বললেন— খোদার কসম! মোহাম্মদের গায়ে একটা কাঁটা বিদ্ধ হবে আর আমি খোবাইব নিরাপদে থাকবো, তা কখনোই হতে পারে না"।

চিৎকার শোনা গেলো উপস্থিত জনতার— মার একে মার। হত্যা কর। ভুলিয়ে দে চিরতরে। ভুলিয়ে দে মোহাম্মাদের নাম! 

যুবকটি তখনও দাঁড়িয়ে আছে সেই কোণে। দেখছে। দু’চোখে অবলোকন করে যাচ্ছে। দেখলো— কয়েদি চোখ দুটো উঁচু করে নালিশ জানাচ্ছে আরশের অধিপতির কাছে। হে রব্বে কাবা! এদের সবগুলিকে একটা একটা করে ধরো! প্রত্যেকটি থেকে প্রতিশোধ নাও! কাউকে ছেড়ো না! 

বের হলো তার শেষ নিঃশ্বাস। চলে গেলেন ওপারে। নশ্বর এই পৃথিবী ছেড়ে। রফীকে আলার দরবারে। শহীদ হলেন তিনি। 

কাফেররা ফিরে আসলো মক্কায়। নিজেদের ভূমিতে। ভুলে গেলো রক্তাক্ত দেহের কথা। ভুলে গেল শহীদ খোবাইবকে। 

কিন্তু যুবকটি ভুলতে পারছে না খোবাইবকে। তার শাহাদাতকে। শাহাদাতের চিত্রকে। ক্ষণে ক্ষণে ভেসে উঠছে চোখের সামনে। মুহূর্তের জন্য বিদায় নিচ্ছে না হৃদয়পট থেকে। 

যুবক তাকে দেখেন ঘুমে ঘোরে। দেখেন সজাগে। দিবা-নিশি। ভেসে উঠে চোখের সামনে তার রক্তমাখা মুখ। ভেসে উঠে তার নামাজের দৃশ্য। তার দুই রাকাত নামাজ। কত ধীরে! স্থীরে! প্রশান্তচিত্তে। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও নির্ভয়ে। শহীদ খোবাইবের দীপ্ত কণ্ঠের আওয়াজ ভাসতে থাকে তার কানে। “মোহাম্মদের গায়ে একটা কাঁটা বিদ্ধ হবে আর আমি খোবাইব নিরাপদে থাকবো, তা কখনোই হতে পারে না"। 

লেখক : বাইতুল আমান মদীনাতুল উলুম মাদরাসা 
খিলগাঁও, ঢাকা।

 

এমএম/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ