বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ।। ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১২ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
তারাবি নিয়ে ১০ হাফেজের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা ফয়যে বর্ণভী সাবাহী মক্তব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশ; পাসের হার ৯৯.৪৯% জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে বিলোপ করা সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে উপদেষ্টা মাহফুজের ‘মব’ নিয়ে পোস্ট, যা বলল ঢাবি ছাত্রশিবির ইফতা, আদবসহ বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি নিচ্ছে উত্তরার মাদরাসাতুল আযহার লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে সিগারেট খেতে না করা সেই রিংকুকে গ্রেফতার ‘অপরাধের সাম্প্রতিক ব্যাপকতার পেছনে পরাজিত শক্তির রাজনীতি ক্রিয়াশীল' একদিনে ২৯ হাজার কুরআনের কপি বিতরণ সৌদি আরবের ‘দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে’ নির্মাণাধীন ভবনের কাঠ পড়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু 

একজন দরিদ্র শাসকের গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা কামাল

সুনসান মিষ্টি প্রভাত। চারদিকে সকালের নরম রোদ ছুঁয়ে আছে। রক্তিম উষা উঁকি দিয়েছে মাত্র। ভোর পাখিদের কুজন যেন সে আলোকময় দিনটার জানান দিচ্ছে। ভোরের আলোই কুয়াশা ভেঙ্গে দেখা যাচ্ছে আরবের হোমস শহর।

হোমস শহরটি আয়তনের দিক দিয়ে ভালোই বড়। স্থানটি  মুসলামনদের অধীনে আসার পরে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সেখানে একজন শাসক নিযুক্ত করেন। যার নাম সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী। যিনি সবে মাত্র ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসেছেন । হযরত খোবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু'র শাহাদাত তাঁকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এবং তারঁ জন্য হেদায়েতের মাধ্যম হয়ে গেছে।

এভাবে ইসলামের পথে তাঁর দিন কাটে। রবের দেওয়া বিধি-নিষেধ উত্তমভাবে পালন করেন এবং সুষ্টভাবে চলাতে থাকে তার শাসন কাজ ।  

কিছুদিন পর আমিরুল মুমিনীন হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে হোমস শহর থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসলো। তারা ছিলেন নানা গুণের অধিকারী এবং অভিজাত গোষ্ঠীর লোক।

তারা হযরত উমর রা.-এর দরবারে বসে অনেক আলোচনা করলেন। এক পর্যায়ে তারা হোমস শহরের কথা বললে হযরত উমর রা. তাদেরকে প্রশ্ন করেন আপনাদের নগরীতে কোন দুস্থ অসহায় আছে কি?

প্রতিনিধি দলের উত্তর—জি, আছে।

তখন হযরত উমর রা. তাদের একটা তালিকা দিতে বলল। আর  প্রতিনিধি দল একটা তালিকা দিলেন। যাতে অনেকর সাথে হযরত সাঈদ ইবনে আমরেরও নাম ছিলো।

 এটা দেখে উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন, এই

সাঈদ ইবনে আমর কে?

প্রতিনিধি দল বললো,আমাদের আমীর।

উমর রা. বললেন—তোমাদের আমীর কি দুঃস্থ, অসহায়?

তারা বললো—জ্বি, আল্লাহর কসম! দিনের পর দিন চলে যায়, কিন্তু তাঁর চুলায় আগুন জ্বলে না।

এই উত্তর শুনে হযরত উমর রা. অনেক বিস্মিত হলেন। এবং তাঁর চক্ষু অশ্রুসিক্ত হলো। তিনি তাঁকে সালাম জানিয়ে তাঁর জন্য এক হাজার দীনার পাঠিয়ে দিলেন।

হোমসের প্রতিনিধি দলটি শহরে থেকে ফিরে এসে হযরত উমর রা.-এর হাদিয়া হযরত সাঈদ ইবনে আমেরের নিকট পৌঁছে দিলেন।

 হযরত সাঈদ ইবনে আমের হাদিয়া গ্রহণ করলেও সেটা তিনি দান করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। এবং তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে সেটা গরিব মুসলমানদের মাঝে দান করে দিলেন।

এর কিছুদিন পর হযরত উমর রা.‌মদিনা থেকে সফরে বের হলেন। শাম, সিরিয়াসহ আরো অন্যান্য দেশ ঘুরে গেলেন হোমস শহরে। সেখানকার অধিবাসীদের একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, তাদের উপর যে আমীর নিযুক্ত করা হয়েছিল, তাঁকে তারা কেমন পেয়েছে?

হযরত উমর রা. কথা শুনে তাদের মধ্যে কিছু মানুষ বলতে শুরু করল, হে আমীরুল মুমিনিন! আমরা আমাদের আমীর সাঈদ ইবনে আমেরের ব্যাপারে কিছু বলতে চাই।

 উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন কি বলতে চাও?

তখন তারা বললো, আমাদের আমীর দিনের শুরুতেই আমাদের খোঁজখবর নেন না। বরং দিন কিছুটা অতিবাহিত হলে তারপর আসেন। এবং তিনি রাতে কারোর ডাকে সাড়া দেন না। আর তিনি মাসে একটা দিন আমাদের কাছে আসেন না। এমনকি তিনি মাঝে মাঝে বেহুঁশ হয়ে যান, ফলে মজলিস সম্পর্কে বেখবর হয়ে পড়েন।

এটা শুনে হযরত উমর রা. সাঈদ ইবরে আমরকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন  তিনি বলেন,

হে আমিরুল মুমিনীন! শপথ আল্লাহর! আমি কখনোই এ কথা বলতে চাইতাম না। যদি না আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন। আমার ঘরে কোন খাদেম নেই। প্রতিদিন সকালে উঠে আমিই পরিবারের জন্য  আটা গোলাই। খামিরা তৈরি করে রুটি বানাই। এরপর ওযু করে সবার খোঁজ-খবর নিতে বের হই।

এরপর রাতের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,আল্লাহর কসম! আমি অপছন্দ করি এটাও প্রকাশ করতে। কিন্তু আজ আমি বাধ্য। হে আমিরুল মুমিনীন! দিনকে আমি নির্ধারণ করেছি প্রজাদের জন্য। আর রাতকে নির্ধারণ করেছি আমার রবের জন্য। তাই আমি রাতে কারো ডাকে সাড়া দিতে পারি না।

এরপর মাসে একটা দিনে না আসার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন,ইয়া আমিরুল মুমিনীন! আমার কোন খাদেম নেই। আমার অন্য কোন কাপড় নেই,শরীরের এই কাপড় ছাড়া। আমি তা মাসে একবার ধৌত করি। ধুয়ে শুকানোর  অপেক্ষা করি। শুকানোর পর পরিধান করে দিনের শেষে তাদের কাছে যাই।

সব শেষে বেহুঁশ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি যখন মুশরিক ছিলাম তখন হযরত খোবাইব রা.কে আমার সামনে শাহাদাত করা হয়েছিল। আমি স্বচক্ষে দেখেছি কুরাইশরা কীভাবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটেছে। তবে কাফের থাকার কারণে কোন সাহায্য করিনি। অতঃপর এখন যখন আমার ঐ দিনটির কথা মনে পড়ে তখন আমি পেরেশান হয়ে পড়ি এবং তাকে সাহায্য না করার কারণে আল্লাহ তায়ালা হয়তো আমাকে পাকড়াও করবে এই চিন্তায় আমি অচেতন হয়ে পড়ি।

এসব শুনে হযরত উমর রা. মনে মনে আল্লাহ তায়ালা শুকরিয়া আদায় করেন। এবং বলেন— সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর, তিনি আমার ধারণাকে বদলে দেননি।

বাইতুল আমান মদীনাতুল উলূম মাদরাসা

খিলগাঁও, ঢাকা।

এনআরএন/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ