তাওহীদ আদনান ইয়াকুব
(সূরা ইউসুফ ৫৩-১১১, সূরা র’দ ১-৪৩ ও সূরা ইবরাহীম ১-৫২ পর্যন্ত)
কুরআনের প্রতিটি আয়াত মানবজীবনের জন্য দিকনির্দেশনা ও আলোর পথপ্রদর্শক। দশম তারাবির তেলাওয়াতে আমরা এমন কিছু বিষয় পড়ব, যা আমাদের ধৈর্য, সততা, কৃতজ্ঞতা এবং আল্লাহর পরিকল্পনার প্রতি বিশ্বাস রাখতে শেখায়।
এই অংশে ইউসুফ (আ.)-এর গল্পের চূড়ান্ত পরিণতি উঠে এসেছে, যেখানে তিনি দুর্দশার পর উচ্চপদ লাভ করেন এবং ক্ষমার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এরপর সূরা রাদ ও সূরা ইবরাহীম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর দেয়া নিদর্শনগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি, আর তাঁর পথে অবিচল থাকার মাধ্যমেই প্রকৃত সফলতা লাভ করা সম্ভব।
১. সূরা ইউসুফ (৫৩-১১১) – ধৈর্য, ক্ষমা ও আল্লাহর পরিকল্পনার পরিপূর্ণতা
ইউসুফ (আ.)-এর কারামুক্তি ও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হওয়া (৫৩-৬৭)
- রাজা তাঁর স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে মুগ্ধ হন এবং ইউসুফ (আ.)-কে মুক্তি দেন।
- তাঁকে মিশরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা আল্লাহর পরিকল্পনারই অংশ ছিল।
দুর্ভিক্ষ ও ভাইদের মিশরে আগমন (৬৮-৯۸)
- দুর্ভিক্ষের কারণে ইউসুফ (আ.)-এর ভাইরা শস্য সংগ্রহের জন্য মিশরে আসে।
- তিনি তাদের চিনতে পারেন কিন্তু নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন না।
- পরবর্তী ঘটনাবলিতে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন, তাদের ভুল ক্ষমা করে দেন এবং পরিবারকে মিশরে নিয়ে আসেন।
শিক্ষা ও উপসংহার (৯৯-১১১)
- বাবা ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান এবং পরিবার পুনরায় একত্রিত হয়।
- এই গল্প ধৈর্য, আত্মসংযম, ক্ষমা এবং আল্লাহর পরিকল্পনার অপরিহার্যতা বোঝায়।
২. সূরা রাদ (১-৪৩) – তাওহীদ, নবুয়ত ও আখিরাতের শিক্ষা
আল্লাহর নিদর্শন ও কুরআনের সত্যতা (১-১৮)
- প্রকৃতির বিভিন্ন নিদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর অস্তিত্ব ও শক্তিমত্তার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।
- যারা সত্য গ্রহণ করে, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে, আর যারা প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত।
ঈমানদারদের গুণাবলি ও সান্ত্বনা (১৯-৪৩)
- যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, তারা ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ হয়।
- রাসূল (ﷺ)-কে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৩. সূরা ইবরাহীম (১-৫২) – নবীদের দাওয়াত ও কৃতজ্ঞতার শিক্ষা
আল্লাহর অনুগ্রহ ও কুফরীদের অবস্থা (১-২৩)
- আল্লাহ মানুষকে সত্যের পথে ডাকেন, কিন্তু অনেকে তা প্রত্যাখ্যান করে।
- শয়তান কিয়ামতের দিন কুফরীদের অসহায় অবস্থার কথা বলবে।
নবী ইবরাহীম (আ.)-এর দোয়া ও শিক্ষা (২৪-৫২)
- তিনি তাঁর সন্তানদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেন।
- নেককারদের জন্য জান্নাত, আর কাফিরদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে।
মূল শিক্ষা ও বার্তা:
- ধৈর্য ও সত্যবাদিতার পুরস্কার নিশ্চিত, যেমন ইউসুফ (আ.) পেয়েছিলেন।
- আল্লাহর পরিকল্পনা সেরা, তিনি সবকিছুর সঠিক সময় নির্ধারণ করেন।
- শয়তানের ধোঁকায় না পড়ে তাওহীদের ওপর অবিচল থাকতে হবে।
- কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, কারণ আল্লাহর অনুগ্রহ সীমাহীন।
উপসংহার:
এই অংশে ধৈর্যের ফলাফল, ঈমানদারদের গুণাবলি, নবীদের দাওয়াত ও আখিরাতের শিক্ষা তুলে ধরা হয়েছে। এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর পরিকল্পনাই সর্বোত্তম, এবং যারা ধৈর্য ও ঈমান নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা। কুরআন আমাদের জানিয়ে দেয় যে, সত্যের পথ কঠিন হলেও তার পরিণাম মঙ্গলময়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআনের শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করার তাওফিক দিন—আমিন!
লেখক, ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর
এনআরএন/