শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫ ।। ২২ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ৭ রমজান ১৪৪৬


প্রকাশ্যে ধুমপান: ইসলাম কী বলে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুহিউদ্দীন মাআয ||

বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ ধূমপানে অভ্যস্ত। ধূমপানের কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয় এবং বহু মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। ধূমপান ও ধোঁয়াবহীন তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হার্ট এটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ, ডায়বেটিস, বার্জাজ ডিজিজ ইত্যাগে রোগে আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে এ কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষের অপমৃত্যু হয়! এক বছরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১লাখ ৬১ হাজারের বেশি। দেশে কোনো একটি সংক্রামক রোগ বা প্রাকৃতিক দূর্যোগেও এত মৃত্যু হয় না! প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মানুষের মৃত্যু কমাতে ধুমপান ও তামাকের ব্যবহার কমাতে হবে। 
ধূমপান এক  প্রাণঘাতী নেশা। একজন ধূমপায়ী নিজের ও আশেপাশে সবার ক্ষতি করে। বিশেষ করে নারী ও শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপানে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ফুসফুসের প্রাণঘাতী রোগ এমফাইসিমা, এজমাসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়, যা অকালপঙ্গুত্ব বা মৃত্যু ডেকে আনে। অথচ মুমিন মাত্রই আমাদের শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া জরুরি।
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ধূমপানের বিধান নিয়ে কিছুটা মতভিন্নতা আছে। কেউ এটাকে মাকরুহ বলেছেন এবং কেউ সরাসরি হারাম বলেছেন।
আল্লামা ইউসুফ কারজাভি (রহ.) হারাম হওয়ার মতটিকে প্রধান্য দিয়েছেন। তিনি তাঁর মতের পক্ষে শরিয়তের নিম্নোক্ত দলিলগুলো পেশ করেছেন।
১. নিজের ক্ষতি :  প্রত্যেক ক্ষতিকর বিষয় পানাহার করা হারাম। কেননা নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে ইহসান আবশ্যক করেছেন। যে ব্যক্তি নিজের বা অন্যের ক্ষতি করল  সে ইহসান করল না। আর যে ইহসান করল না সে আল্লাহর বিধান মান্য করল না।’ (আল মানহিয়্যাতুশ শরইয়্যা : ২/১২)
২. অন্যের ক্ষতি : ধূমপানকারী শুধু নিজের ক্ষতি করে না; বরং অন্যেরও ক্ষতি করে। আর ইসলাম নিজের ও অন্যের ক্ষতি কোনোটাই অনুমোদন করে না।ইরশাদ হয়েছে, ‘কারো ক্ষতি করা যাবে না এবং কারো ক্ষতি সহ্য করা হবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪১)
৩. আত্মঘাতী কাজ : ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে যেকোনো আত্মঘাতী কাজ হারাম বা নিষিদ্ধ। চিকিৎসকরা এ বিষয়ে একমত যে, ধূমপান একটি আত্মঘাতী কাজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রশীল।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)
৪. রোগ-ব্যাধির কারণ : ধূমপানের কারণে মানবদেহে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হয়, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আর পবিত্র কোরআনের নির্দেশ হলো, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

৫. সম্পদের অপচয় : ধূমপানের মাধ্যমে সম্পদের অপচয় হয়। আর ইসলামে সম্পদের অপচয় নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪১)
ক্ষতিকর জিনিস হারাম হওয়ার মূলনীতি : ইমাম নববী (রহ.) ক্ষতিকর জিনিসের পানাহার নিষিদ্ধ হওয়ার মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক এমন জিনিস যার পানাহার ক্ষতিকর তা পানাহার করা হারাম। যেমন কাচ, পাথর ও বিষ। প্রত্যেক এমন পবিত্র জিনিস যা পানাহারে ক্ষতি নেই তা পানাহার করা হালাল। আর যে জিনিস পবিত্র কিন্তু নোংরা বিশুদ্ধ মতানুসারে তা পানাহার করা হারাম। এমন ওষুধ যাতে সামান্য ক্ষতিকর বিষয় আছে প্রয়োজনে তা পান করা জায়েজ।’ (রওজাতুত তালিবিন, পৃষ্ঠা ৫৪৮)

এখন কথা হলো ধুমপান তো এমনিতেই মারাত্নক গুনাহের কাজ, উপরন্তু এটা প্রকাশ্যে করা আরও বড় গুনাহ। 
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে তার বান্দাদের উদ্দেশে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ কর।’ (সুরা আনআম ১২০)
কোরআনে আরও বলা আছে, ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা ১৪৮)
কেউ গুনাহ করে প্রকাশ করলে তাকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী এর ব্যতিক্রম। (বুখারি ৬০৬৯)
এ জন্য  গুনাহ যত ছোট হোক না কেন তা প্রকাশ করা যাবে না। একে তো আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হবেন এবং সেই গুনাহ ক্ষমা করবেন না। আরেকটি হলো গুনাহ প্রকাশ করলে মানুষ ও অন্যান্য বস্তু সে গুনাহের সাক্ষী হয়ে যায়। তাই গুনাহ প্রকাশ করে সাক্ষী বাড়ানো যাবে না।

এমএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ