বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ২০ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :

শবে বরাতের আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 

||মোহাম্মাদ হুজাইফা||

আজ মহিমান্বিত শবে বরাত। এই রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা গুনাহ মাফের ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন। (ত্ববারানি, হাদিস : ২০/১০৮)

এজন্য এই রাতে বিভিন্ন আমল করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যেতে পারে। যেমন বেশি বেশি নামাজ পড়া যেতে পারে। বিভিন্ন হাদিসে নামাজের কথা এসেছে। সুনানে ইবনে মাজাহতে হযরত আলি ইবনে তালিব রা. এর বরাতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে- শাবান মাসের অর্ধরাত আসলে (১৪ তারিখ দিবাগত রাত)তোমরা রাতে নামাজ পড়ো আর দিনে রোজা রাখো। (হাদিস নং : ১৩৮৮)

এই রাতে রাসুল (সা.) এর আমল সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান। নামাজে এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়তো মৃত্যু বরণ করেছেন। আমি  তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। এরপর তিনি নামাজ শেষ করে আমাকে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বলেছেন, হুমায়রা! তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন ইরশাদ করলেন- ‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩৫৫৪) 

এছাড়া সালাতুত তাসবিহ-এর নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এই নামাজের অন্যতম ফজিলত হলো- সালাতুত তাসবিহ আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেন। বিপুল সওয়াব দান করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন সম্ভব হলে এই নামাজ প্রতিদিন একবার পড়বে। প্রতিদিন সম্ভব না হলে প্রতি জুমআর দিনে একবার। তা না হলে মাসে একবার, তা না হলে জীবনে অন্তত একবার পড়বে। (তুহফাতুল আহওয়াযি, হাদিস : ২/৩৪৮)

এই নামাজ পড়ার নিয়মও রাসুল (সা.) শিখিয়েছেন। সালাতুত তাসবিহের নামাজের প্রত্যেক রাকাআতে ৭৫ বার তাসবিহ আদায়ের মাধ্যমে ৪ রাকাতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়তে হয়।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছন- রাসুল (সা. )আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব (রা.) কে বলেছেন, হে চাচা! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না?...আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কিরাত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন—
 
سُبْحاَنَ الله وَالْحَمدُ للهِ وَلآَ اِلَهَ اِلاَّاللهُ وَاللهُ اَكْبر 

উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

এরপর রুকুতে যাবেন এবং রুকু অবস্থায় দোয়াটি ১০ বার পড়বেন। এরপর রুকু থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন অতঃপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার। আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন।

যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন, তবে প্রতি জুমাবারে একবার। যদি প্রতি জুমাবারে না করেন, তবে প্রতি মাসে একবার। আর যদি তা-ও না পারেন, তবে জীবনে একবার।

যখন দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদ পড়ার জন্য বসবেন তখন আগে ওই তাসবিহ ১০ বার পড়বেন, তারপর তাশাহুদ পড়বেন। তাশাহুদের পর তাসবিহ পড়বেন না। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবেন। অতঃপর তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাতেও উক্ত নিয়মে ওই তাসবিহ পাঠ করবেন।

কোনো এক স্থানে ওই তাসবিহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক, সেখানে তথাকার সংখ্যার সঙ্গে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নেবেন। আর এই নামাজে কোনো কারণে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সিজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে ওই তাসবিহ পাঠ করতে হবে না। তাসবিহর সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙুলের কর গণনা করা যাবে না, তবে আঙুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে। ( আবু দাউদ, হাদিস : ১২৯৭) 

সালাতুল হাজাত, তাহাজ্জুদসহ আরও অন্যান্য নফল নামাজ আদায় করা যেতে পারে। শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখাও একটি প্রশংসনীয় আমল। 
আগামিকাল (শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি) শাবান মাসের ১৫ তারিখ। এছাড়াও রাসুল (সা.) রজব এবং শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে বেশি রোজা রাখতেন। 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ