১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। বিজয় দিবসে আনন্দ উদযাপন ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বরং ইতিহাস বিকৃত না করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এ দিবসটিকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন করা জরুরি।
পাশাপাশি এটি আল্লাহ প্রদত্ত অনেক বড় একটি নেয়ামত। পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকা এটা এক ধরনের আজাব।
মুসা আ. এর জাতি বনী ইসরাইল দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। তাদেরকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছিল তৎকালীন জালেম শাসক ফেরআউন। কুরআনে আল্লাহ তাদের এই শাস্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন, স্মরণ করো, মুসা তার জাতিকে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের রক্ষা করেছিলেন ফেরাউন-পরিবারের কবল থেকে, যারা তোমাদের মর্মান্তিক শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদের খুন করত আর তোমাদের নারীদের (দাসী বানিয়ে) জীবিত রাখত। এতে ছিল তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা। (সুরা ইবরাহিম/৬)
বিশেষ দলের, বিশেষ গোষ্ঠীর, বিশেষ সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করে থাকা এটি ফেরআউনি চরিত্র। ফেরআউন ছিল কিবতি বংশের, সে মনে করতো দেশের নেতৃত্ব দিবে শুধু কিবতি বংশের লোকেরা। সে কিবতি বংশের লোকদের মাধ্যমে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকদেরকে দাস বানিয়ে রেখেছিল। সে তাদের উপর জুলুম করেছে তাদের স্বাধীনতাকে নষ্ট করেছে, অপশাসন করেছে, খেয়াল খুশি মতো বন্দী করে রেখেছে। পৃথিবীতে যারা অপশাসন করে তাদের সবচেয়ে বড় আইডল হলো ফেরআউন। আল্লাহ তায়ালা তাকে খুব বেশি দূর এগোতে দেননি এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে থামিয়ে দিয়েছেন। ফেরআউনকে থেমে যেতে হয়েছে। তার অগ্রযাত্রা বেশি সময় ছিল না।
ফেরআউনের অনুসারী পৃথিবীতে যেই যেখানে আসবে তারা কিছুকাল দাপট দেখাবে গায়ের জোড় দেখাবে জুলুম করবে, অপশাসন করবে কিন্তু শেষ হাসি আল্লাহ জালিমের মুখে কখনো হাসতে দেন না শেষ হাসি আল্লাহ তায়ালা মজলুমের মুখেই ফোটান। এই জন্য ফেরআউনের অনুসারীদের কিছুসময় পৃথিবীতে দাপটের সাথে চলতে দেখে আমরা যেন বিভ্রান্ত না হই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিনে, দেশের প্রকৃত নাগরিক হিসেবে, ইতিহাস সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের স্বাধীনতার কথা, আমাদের বিজয়ের কথা আসার সাথে সাথে আমাদের চিন্তায় আমাদের মননে আসা উচিত বনী ইসরাইলের স্বাধীনতার কথা। যেই স্বাধীনতা আল্লাহ তায়ালা বনী ঈসরাইলকে দিয়েছেন ফেরআউন নামক জালেমের কবল থেকে। সেখান থেকে আমাদের অনেকগুলো শেখার বিষয় আছে, সেখান থেকে আমরা অনেকগুলো বার্তা পাচ্ছি।
ব্যক্তিগত জীবনেও যদি আমরা আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির মাধ্যমে অধীন লোকদের বা আশেপাশের লোকদের প্রতি জুলুম করি, কাউকে নিজস্ব প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে দমিয়ে রাখি বা খেয়াল খুশি মতো অর্ডার করি তাহলে আমি আদর্শিকভাবে ফেরআউনের পথ অনুসরণ করলাম। ফেরআউনের পথ যদি কেউ অনুসরণ করে তাহলে তার পরিণাম হবে ফেরআউনের পরিণামের মতো।
এই পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার নেজাম হলো যে পৃথিবীর সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা কোন জালেমকে নিস্তার দেননি। আল্লাহ তায়ালা প্রচুর পরিমাণে ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। জালেমরা আল্লাহ তায়ালার ছাড় পেয়ে মনে করে যে, কই কিছুই তো হচ্ছেনা আমরা তো পৃথিবী দাবড়ে বেড়াচ্ছি।
এনএ/