আমরা চাই যে আমাদের দুনিয়ার জীবনটা কল্যাণময় হোক, বরকতময় হোক। আমাদের কাজগুলো হোক কল্যাণময়। কারণ যার জীবনে বরকত ও কল্যাণ নেই সেই সারা দুনিয়ার সম্পদের মালিক হলেও সুখ পাবে না। নিশ্চিন্তে এক মুহূর্ত থাকতে পারবে না। মানসিক সুখ-শান্তি আল্লাহর নিয়ামত। যাদের জীবন মহান আল্লাহ কল্যাণ ও বরকতে ভরপুর করেন, তারাই তা অনুভব করতে পারে। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো মানুষের জীবনকে কল্যাণময় করে।
১. ঈমান আনা : পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের শুভ সংবাদ দিন যে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫)
২. তাকওয়া অবলম্বন করা : মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)
৩. তাওয়াক্কুল করা : অর্থাৎ আল্লাহর ওপর ভরসা করা। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি তাওয়াক্কুল করে মহান আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেওয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেওয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যাবেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)
৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা : আনাস রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় রিজিক বৃদ্ধি ও দীর্ঘজীবী হতে চায় সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৩)
৫. সদকা করা : পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)
৬. নফল ইবাদত করা : আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘...আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই। আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)
৭. নিয়ামতের শুকরিয়া করা : মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমি তোমাদের আরো বেশি দেব আর অকৃতজ্ঞ হলে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি তো কঠোর। (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
৮. ইস্তেগফার করা : পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)
৯. অল্পে তুষ্ট হওয়া : আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেন, ‘ধনের আধিক্য হলে ধনী হয় না, অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৪৬)
১০. নিজের চেয়ে কম সম্পদশালীদের দেখা : আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা তোমাদের চেয়ে কম সম্পদশালী মানুষের প্রতি (পার্থিব ব্যাপারে) দৃষ্টি দিয়ো, তোমাদের চেয়ে ধনশালী মানুষের দিকে নয়। এতে তোমাদের আল্লাহ তায়ালার দেওয়া নিয়ামত নগণ্য মনে হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৩)
১১. অন্যের জন্য দোয়া করা : আবু দারদা রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, কোনো মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে একজন ফেরেশতা তার জবাবে বলে, ‘আর তোমার জন্যও অনুরূপ।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৮২০)
১২. ঘরে প্রবেশের সময় সালাম করা : আনাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে বলেছেন, হে বৎস, তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাও, তখন সালাম দিয়ো। তাতে তোমার ও তোমার পরিবার-পরিজনের কল্যাণ হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৯৮)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে অফুরন্ত বরকত ও কল্যাণ অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এনএ/