সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আমরা কুরআন থেকে বঞ্চিত কেনো


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি : সংগৃহিত

|| মুফতি আরিফুল ইসলাম ||

ঐশী গ্রন্থ আল কুরআন, বিশ্ববাসীকে দেয়া রাব্বুল আলামিনের অনন্য এক নেয়ামত। পৃথিবীবাসীর হেদায়েতের জন্য নাযিল হয়েছে কুরআন। হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। মানবজাতীর ইহকাল ও পরকালীন শান্তির বার্তা। আজ আমরা হেদায়েতের এ আলো থেকে বঞ্চিত। অশান্তির দাবানলে পুড়ে মরছি সারাক্ষণ। কোরআন থেকে দূরে সরে নিজ রচিত মতাদর্শের জালে ঘূরপাক খাচ্ছি। মুসলমানের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও কোরআন পড়তে পারি না। এর কারণ জানতে হলে কোরআন নাযিলের প্রেক্ষাপটটা জানতে হবে।

কুরআনের জন্য রাসূলের ত্যাগ

আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে হেরায় গুহায় নাযিল হয় আল কুরআন। হুজুর সা. বয়স তখন চল্লিশ বছর। হুজুর সা. সব কিছু থেকে আলাদা হয়ে মক্কার অদূরে জাবালে নূরে ধ্যান করেন। ছাতু আর পানিই রাসূল সা.-এর খাবার। মাসকে মাস ওখানেই পড়ে থাকতেন। প্রায় এক হাজার ফিট উপরে উঠে এক জায়নামাজ পরিমান জায়গায় আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটি ধ্যানমগ্ন থাকতেন।

একবার হযরত জীবরাঈল আ. ওহী নিয়ে আগমন করেন। হুজুর সা. -কে বললেন, পড়ুন, নবীজি সা. বললেন আমি পড়তে জানিনা। জীবরাঈল আ. হুজুর সা. -কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে পুরো শরীরে শক্তীবলে চাপ দেন। বলেন এবার পড়ুন। হুজুর সা. বললেন আমি পড়তে জানি না। দ্বিতীয়বার একইভাবে চাপ দেন। হুজুর সা. বলেন আমি পড়তে জানি না। তৃতীয়বারও জীবরাঈল আ. নিজের পুরো শক্তি বলে আবার চাপ দেন। এবার নবীজি সা. পড়তে শুরু করেন। সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত দিয়ে ওহীর ধারা শুরু হয় ।

ওহীর ভারে হুজুর সা. এর শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়। কাঁপতে কাঁপতে আম্মাজান খাদীজা রা. এর কাছে ছুটে আসেন। বলেন-আমার শরীরে কাপড় জড়িয়ে দিন। স্বাভাবিক হয়ে আম্মাজান খাদীজা রা. এর কাছে ঘটনার বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন। আমার জানের আশংকা হচ্ছে। রাসূলের প্রতি বিশ্বস্ত খাদীজা রা. হুজুর সা.-এর মনে সাহস জোগালেন। কীসের ভয় আপনার। আপনি তো কোনো অপরাধী নন। আপনার প্রতি রয়েছে সকলের অকৃত্রিম অগাধ ভালোবাসা। আপনাকে সবাই সত্যবাদি বলে জানে। ইয়াতিম,বিধবাদের অভিভাবক আপনি। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখেন। বিপদের বন্ধু আপনি। এমন নীতিবান মানুষকে আল্লাহ কখনো বিপদে ফেলবেন না।

কখনো ঘণ্টার ধ্বনির ন্যায় ওহী আগমন করতো। এভাবে ওহী নাযিল হলে হুজুর সা. –এর পবিত্র দেহবর্ণ পরিবর্তন হয়ে যেত। তীব্র শীতেও ঘেমে যেতেন আল্লাহর রাসূল সা.।

আম্মাজান হজরত আয়েশা রা. বলেন, এ অবস্থায় যদি তাঁর হাত মোবারক আমার উরুতে থাকতো উরূ ফেটে যাবার উপক্রম হত; তিনি আরোহী অবস্থায় থাকলে শক্তিশালী উষ্ট্রীও ওহির ভারে বসে পড়তো। আলেমগণ বলেন, এ অবস্থায় ওহি নাজিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য বড় কষ্টকর ছিল। সাধারণত যখন আজাব,গজব,ধমক এবং ক্রোধের আয়াত নাজিল হলে এভাবে নাযিল হত।

ঘরে  কুরআন নাযিল হল না কেনো

হুজুর সা. ঘরে ঘুমিয়ে থাতেন আর আসমান থেকে ফেরেশতা এসে হুজুর সা.কাছে কোরআনের পবিত্র গ্রন্থ নিয়ে নাযিল হত।এটি মহা ক্ষমতাধর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে অসম্ভব ছিল না।আল্লাহ রাব্বুল এমনটি করেননি।কোরআনের জন্য আল্লাহর রাসূল সা.-এর সর্বোচ্চ ত্যাগ নিয়েছেন। কোরআন দামি একটি গ্রন্থ। এর জন্য শ্রম সাধনাও হতে হবে সর্বোচ্চ।নিজের সবটুকু উজার করে দিলে হয়তো ইলমে ওহী কিছুটা আয়ত্বে আসবে।

আমরা বঞ্চিত কেনো

কোরআনের জন্য আমাদের নেই বিসর্জন।নেই কোনো ত্যাগ।নিজের জীবনের অলস সময়টুকু বেছে নিয়েছি কোরআন শেখার জন্য।সব প্রয়োজন মিটানোর পর উদ্বৃত্ত  কিছু টাকা কোরআনের জন্য ব্যায় করি।বিরক্তীকর সময়টা সন্তানের কোরআন শেখার সময়।এই অলসতা ও দূর্বল মানষিকতার কারণেই আমরা আমরা বঞ্চিত ইলমে ওহী থেকে।

আল কুরআন যে সূত্রে নাযিল হয়েছে সেভাবেই গ্রহণ করতে হবে। হুজুর সা.হযরত জীবরাঈল আ.এর কাছে বিনয় প্রদর্শন করেছেন।ঘরে বসে থেকে শিক্ষক ডেকে এনে কুরআন শেখেননি।এক হাজার ফিট উপরে ওঠে শিক্ষকের কাছে ক্লাসে হাজির হয়েছেন।পৃথিবীর কোনো বিদ্যাই তো ঘরে বসে হয় না। আল কুরআনের মত দামি দৌলত কীভাবে অর্জন হবে।

এ অলসতা ও দূর্বল মানসিকতার কারণে অজান্তেই শ্রেষ্ঠ্য নেয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকছি আমরা। নিজেও শান্তি পাচ্ছি না।পরিবার, সমাজ পুরো পৃথিবী অশান্তির সাগরে হাবডুবু খাচ্ছে।সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়ে কুরআনকে ভালোবাসার বিকল্প পথ নাই।

এম আই/

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ