সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, দুশ্চিন্তায় জেলেরা


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি : সংগৃহিত

সারা বছরের খরা কাটিয়ে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে অল্পস্বল্প ইলিশের দেখা মেলার পরপরই শুরু হচ্ছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এদিকে ইলিশ আহরণের মৌসুম প্রায় শেষ। কিন্তু ভরা মৌসুমের শেষ মুহূর্তেও নদীতে ইলিশের নাগাল না পেয়ে হতাশ এ উপজেলার কয়েক হাজার জেলে। নিষেধাজ্ঞার সময় কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে জেলেদের কপালে।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। গোয়ালন্দ  উপজেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১ হাজার ৮২৮ জন এবং কার্ডধারী রয়েছে ১ হাজার ৬২৭ জন। ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় গোয়ালন্দ উপজেলায় ১ হাজার ৮২৮ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। ২২ দিনে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া অপ্রতুল খাদ্য সহায়তা নিয়েও রয়েছে জেলেদের ক্ষোভ। এজন্য নগদ অর্থ দেওয়ার দাবি তাদের। এ ছাড়াও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বৈরী আবহাওয়া ও পদ্মা নদীতে ইলিশের অভাব থাকায় শত শত জেলেরা হতাশায় পড়েছেন।

স্থানীয় একাধিক জেলে জানান, আগামী ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার থেকে তারা বিরত থাকবেন। কিন্তু বিকল্প কোনও কর্মসংস্থান না থাকায় তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হবে। এ ছাড়াও মহাজনের দেনা আর এনজিওর ঋণের কিস্তি নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তারা আরও জানান, সরকারিভাবে মাত্র ২৫ কেজি চাল তাতে জেলেদের কিছুই হয় না। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফকিরডাঙ্গা এলাকার জেলে নুরু হালদার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় তো আমরা জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে পারবো না। তাই আমাদের তো কোনও আয় ইনকামও থাকে না। এ বছর সরকার যদি আমাদের নামে বরাদ্দকৃত চাল দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে অনেক উপকার হবে।’

বুধবার (১১ অক্টোবর) দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ইলিশের আড়তে গিয়ে কথা হয় জেলে, পাইকার, আড়তদার, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে। সবার কণ্ঠেই হতাশা ও ক্ষোভ। ৫০ বছর ধরে পদ্মা ও যমুনায় ইলিশ ধরেন দৌলতদিয়া পদ্মাপারের বাসিন্দা নেকবার আলি। প্রবীণ এই জেলে বলেন, ‘এই বচ্ছর পদ্মায় তেমন কোনও ইলিশ পাই নাই, যা পাইছি তা জাটকা। এই জাটকা শিকার কইরা কোনও রহম জীবনডা বাঁচাইছি। এইবার (নিষেধাজ্ঞার মধ্যে) যে পোলা মাইয়া লইয়া কি খামু, আল্লায় জানে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে বলেন, ‘আজ ৪০ বছর ধরে পদ্মায় মাছ ধরি। কোনও দিন এক কেজি চাউলও পাইনি। অনেকেই জেলে না হয়ে তারা নিয়মিত চাউল পায়, অথচ যারা প্রকৃত জেলে যারা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আবার অনেক রাজনৈতিক নেতাদের লোকও চাউল পাচ্ছে। কি আর বলবো, আমরা গরিব মানুষ বেশি কিছু কইলে আবার জেলে যেতে হবে।’

গোয়ালন্দ উপজেলার মৎস্য অফিসের দায়িত্বে থাকা রাজবাড়ী সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব জানান, ২২ দিনের মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞাকে সফল করতে এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা করেছেন তারা। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি চাল দ্রুত বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। যারা সরকারি আইন অমান্য করে নদীতে গিয়ে মাছ শিকার করবে তাদের জেল ও জরিমানা করা হবে।

সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ ওসি জেএম সিরাজুল কবির বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় কোনও জেলে পদ্মা নদীতে নামতে পারবে না। পুরো পদ্মা নদী জেলেশূন্য থাকবে। কোনও বরফ কারখানায় মাছ মজুত করা যাবে না। কোনও যানবাহনে মাছ পরিবহন করা যাবে না। আমরা পদ্মা নদীতে সর্বক্ষণ নজরদারি করবো।’ যারা আইন অমান্য করবে তাদের আটক করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা ।

এম আই/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ