মুফতী ফয়জুল্লাহ আমান কাসেমী। একজন মেধাবী আলেম। জন্ম মাগুরায় ১৯৮৬ সনে। পড়ালেখার হাতেখড়ি যশোর শহরে। ১৯৯৯ সালে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ ঢাকায় ভর্তি হন। ওখানে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে ২০০৪ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে ফের দাওরায়ে হাদিস পড়েন। সেখানে দাওরায়ে হাদিসের ভর্তি পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা এবং ইফতার বছর সমাপনী পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। ২০০৬ এর শেষের দিকে বাংলাদেশে ফিরে প্রথমে তাবলীগে সময় দেন। তারপর ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত মিফতাহুল উলুম মধ্য বাড্ডা মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসাবে খেদমত করেন। তারপর ২০১০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত জামিয়া ইকরা বাংলাদেশে সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসাবে খেদমত করেন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি পাড়ি জমান প্রাচ্যের সাউথ কোরিয়ায়। সেখানে ‘আনসান মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার’ এ তিনি ইমাম ও খতিব হিসাবে খেদমতরত। গত অক্টোবরে তিনি ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলেন। কোরিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্য, সেখানের দ্বীনি খেদমত, ইসলামের প্রচার-প্রসার, মুসলিমদের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনযাপনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে এক সন্ধ্যায় লালবাগ শাহী মসজিদ চত্বরে বসে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের চিফ রিপোর্টার হাসান আল মাহমুদ
সম্প্রতি আপনি দক্ষিণ কোরিয়ায় সেটেল হয়েছেন। বাংলাদেশে আপনি কয়েকটি মাদরাসায় হাদিসের কিতাব পড়াতেন ও ভালো খতিবও ছিলেন। দেশের এসব বহুমুখি খেদমত ছেড়ে কেন কোরিয়া গেলেন?
আমি মাত্র নয় মাস হয়েছে সাউথ কোরিয়ায় একটি ইসলামি সেন্টারের দায়িত্বে আছি। এখানে ইমাম ও খতিব হিসাবে আছি। মূলত বাংলাদেশে আমি দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে তিরমিযী শরীফ পড়িয়ে আসছিলাম। মাঝে বেশ কয়েক বছর বুখারীও পড়িয়েছিলাম। এছাড়া আরো তিন-চারটা মাদরাসাতে ইফতা ও দাওয়া বিষয়ক সাপ্তাহিক ক্লাস নিতাম। বাংলাদেশে থাকার শেষ মুহূর্তে রমনা থানা মসজিদের খতিবও হতে যাচ্ছিলাম। কোরিয়ায় চলে আসার বিষয়টা কনফার্ম হওয়ায় না করে দিয়েছি। আমি আসলে দ্বিধাদ্বন্দে ছিলাম- কোরিয়ায় যাবো কি যাবো না। এখানে তো আমার কাজের পরিধি দিন দিন বাড়ছিল। অনেক বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ ছিল দেশে। তারপরও অনেক চিন্তাভাবনা ও ইস্তেখারা করে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়া উচিত বলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
সেখানে যাওয়ার সংযোগটা কীভাবে পেলেন?
দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি কেউ হয়তো আমার ব্যাপারে তাদের কাছে তথ্য দিয়েছিল। তারপর সেখানের ইসলামিক সেন্টারের বর্তমান সভাপতি কোরিয়ার হানিয়ান ইউনিভাসিটির প্রফেসর ডক্টর মনোয়ার সাহেব আমার সাথে যোগাযোগ করেন। আমি তাদের ইন্টারভিউ আহ্বানে সাড়া দিই। সাউথ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে এক-দেড় ঘন্টার দূরত্বে। সেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া তিন দেশের নাগরিক এই সেন্টারের পরিচালনা কমিটিতে রয়েছেন। অধিক সংখ্যক মুসল্লি ইন্দোনেশিয়ান। তারপর বাংলাদেশি । এরপর অন্যান্য দেশের। বিশেষত সেখানে মধ্য এশিয়ার দেশ- উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান, রাশিয়াসহ নানা দেশের অনেক মুসল্লি। আরবও আছে অনেক। এই এলাকাতে প্রায় ৫০-৬০টি দেশের মানুষ বাস করে। পুরো কোরিয়াতে সবচে বেশি বিদেশি এই এলাকাতে বাস করে। মুসলিম আছে প্রায় ৩০-৩৫টা দেশের।
আনসান ইসলামিক সেন্টারের কমিটি বা দায়িত্বশীল কি ওই দেশীয় নাগরিক নাকি বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা?
মূলত ওই দেশে মুসলমানের সংখ্যা খুবই সামান্য। আর যে কজন মুসলমান আছে, তাদেরও ইসলামিক জ্ঞান নেই বললেই চলে। যার কারণে বাংলাদেশের যারা ওখানে সিটিজেনশিপ পেয়েছে, নাগরিকত্ব পেয়েছে, কিংবা পাকিস্তানের যারা নাগরিকত্ব পেয়েছে, তারাই এই কমিটিতে আছে। তারা যদিও এখন কোরিয়ান, কিন্তু জন্মগতভাবে বাংলাদেশি, ইন্দোনেশিয়ান কিংবা অন্যান্য দেশীয়।
দেশের বাইরে গিয়ে ইসলামের খেদমত করার স্বপ্ন কখনো দেখেছিলেন কি? আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা ছিল কি?
আমি কিছুদিন যাবত ভাবছিলাম ইউএসএ যাবো, সেখানে কোনো ইসলামিক সেন্টার কিংবা প্রতিষ্ঠানে খেদমত করব। এ বিষয়ে আলোচনাও চলছিল। পশ্চিমে যাওয়ার চিন্তা করে কিছুটা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম মানসিকভাবে। এর ভেতরে আল্লাহ তায়ালা পূর্ব দিকে নিয়ে এলেন। এটা আল্লাহর খাস রহমত ও কুদরত।
কোরিয়ায় গিয়ে ইসলাম প্রচার বা দ্বীনি খেদমতের প্রয়োজনীয়তা কেমন অনুভব করছেন?
এখানে না এলে আসলে উপলব্ধিই করা যেতো না কতোটা প্রয়োজন আলেমদের। আমাদের দেশে তো আলহামদুলিল্লাহ আলেম-ওলামা অনেক বেশি, তাই দ্বীনের খেদমত বিভিন্নভাবে হচ্ছে। দেশে থাকতে যদিও বিষয়টা উপলব্ধি করতাম, কিন্তু এখানে এসে প্রচন্ডরকম উপলব্ধি করেছি আলেম-ওলামার কতোটা প্রয়োজন এখানে। পুরো কোরিয়ার একমাত্র মুসলিম সংস্থা মুসলিম ফেডারেশনের আন্ডারে মাত্র ১১টা মসজিদ আছে। এর বাইরে হাতে গোনা দুই একটা থাকতে পারে। এখানে স্থানীয় মুসলমান প্রায় ৪০ হাজার । ৪০ হাজার মুসলমানের জন্যও চিন্তা করলে পর্যাপ্ত মসজিদ নেই। এছাড়া মধ্য এশিয়ার অসংখ্য- শুধু উজবেকিস্তানের মুসলমান এখানে ৭০-৮০ হাজার। এছাড়া তাজিকিস্তানসহ নানা মুসলিম দেশের নাগরিক তো আছেই।
এতো সকল মুসলিম কিভাবে গেলো ওই দেশে চাকরি-কর্ম করতে নাকি শরণার্থী হয়ে?
বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে ৪র্থ নম্বর স্থানে আছে সাউথ কোরিয়া। অর্থনীতি, শিল্প ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক অগ্রসর। বিশেষ করে ওয়ার্কারদের জন্য এখানে খুবই সুযোগ রয়েছে। এখানে আয়ের তুলনায় ব্যয় তেমন নেই। কোনো একজন ওয়ার্কার কোনো ফ্যাক্টরি বা প্রতিষ্ঠানে ঢুকলে সেখানকার কারখানা বা ফ্যাক্টরি মালিক ওয়ার্কারের খাবার ও বাসস্থানের সুব্যবস্থানা করে দেয়। এরপর দুই/ তিন লাখ টাকা যে বেতনটা সে পায়, তা পুরোটাই তার রয়ে যায়। সেদেশে পাঁচ বছর যদি থাকতে পারে, দেখা যাবে কোটি টাকা কামিয়ে ফেলতে পারবে। এজন্য নানা দেশ থেকে মূলত এই জন্যই লোকজন আসে।
ওই দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কারা এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে কী ধরণের প্রক্রিয়া নিতে হয়, কারা চালাচ্ছে দেশ বা অধিকাংশ লোক কিসে বিশ্বাস করে?
রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছে তারা ধর্মীয় দিক থেকে যদিও খ্রিষ্টান, কিন্তু দেশটি চরম সেক্যুলার। সে হিসাবে সরকার প্রেসিডেন্ট শাসিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। ৫ বছর পর পর। আর এখানে ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে সবচে বেশি মানুষ খৃষ্টান, অথচ খৃষ্টানরা খুব বেশি দিন হয় এখানে আসেনি। বৌদ্ধ আছে ২৩ পাসেন্ট, খৃস্টান ২৭ শতাংশ এছাড়া বাকি সব ধর্মহীন। নাস্তিক যাকে বলে।
আপনি ওখানে থেকেছেন নয় মাস, এই কয় দিনে আপনার উল্লেখযোগ্য কাজগুলো কী?
আল্লাহ তায়ালা এই নয় মাসে অনেক কাজের তাওফিক দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। এখানে কন্টিনিউ কাজ তো আমার নামাজ পড়ানো, খুতবা প্রদান করা। কিন্তু যে কাজটা বাংলাদেশে হতো না, তা হলো এখানে অনেক অমুসলিম এসে ইসলাম গ্রহণ করে। আলহামদুলিল্লাহ ১০-১২ জনের নামতো আমার কাছে লেখাই আছে, এর বাইরে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে যাদের নাম নথিভুক্ত করা হয়নি। কিছু মানুষ এমনিতেই মুসলিম কালচারাল সেন্টার দেখতে আসে, আমাদের মসজিদ ও নামাজ দেখতে আসে, আমরা তাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলি। ইসলামের বিষয়গুলো ভালোভাবে বর্ণনা করি।
বিশেষভাবে কোনো কোরিয়ান নও মুসলিমের কথা বলবেন কি? যার সাথে আপনার সুন্দর স্মৃতি আছে?
একজন নও মুসলিম আছে, তিনি আমি সেখানে যাওয়ার কিছু দিন পরই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এখনো পর্যন্ত তিনি আমার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আছেন। ওখানে আমাদের দেশের ফুডপান্ডা বা দারাজ জাতীয় অনলাইন ডেলিভারি কোম্পানির একটা চাকরি করেন। তার শেখার খুব আগ্রহ। অল্প দিনেই কুরআনের বেশ কিছু সুরা মুখস্থ করে ফেলেছেন। এ ছাড়া আরবি ভাষাও শেখা শুরু করেছেন।
কয়েক দিন আগে দেখেছিলাম শায়খ আহমাদুল্লাহকে নিয়ে একটি প্রোগ্রাম করেছেন কোরিয়ায়। কী উদ্দেশ্যে এ প্রোগ্রাম?
শায়খ আহমাদুল্লাহ ভাইকে আমি দাওয়াত করিনি, তবে যিনি দাওয়াত করেছেন তাকে বলেছিলাম, শায়খ আহমাদুল্লাহ এলে আমার মসজিদে প্রোগ্রাম দিতে। সে হিসেবে তিনি আমার মসজিদে আসেন। খুব সুন্দর প্রোগ্রাম হয়। আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশে হাজার হাজার মাহফিল হয়, সেখানে তো এই সুযোগ নেই, বছরে এমন দু একটা মাহফিল হলে তাতেও সারা দেশের মুসলিম কমিউনিটিগুলোতে সাড়া পড়ে যায়।
সেখানে ইসলামের খেদমত করার কী কী ক্ষেত্র রয়েছে; যেগুলো আপনি খুব প্রয়োজন মনে করেন?
অনেক কিছুই আছে। শুরু করতে হবে গোড়া থেকে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় ইসলামের কাজ করার জন্য যেমন নিরাপদ পরিবেশ আছে, কোরিয়া এমন নয়। এখানে মুুসলিম সংখ্যা যেমন সামান্য, ইসলামের কাজের পরিধিও খুবই নগন্য।
আপনি তো দারুল উলুম দেওন্দের সন্তান। তো, সেখানে কওমি মাদরাসা বিস্তারে কী চিন্তা-ভাবনা করছেন?
আমি মনে করি সেখানে আরো বেশি মসজিদ হওয়া দরকার। মাদরাসা পরে, মাদরাসার আগে পর্যাপ্ত মসজিদ প্রয়োজন। কারণ মুসলমানদের একটা মসজিদ থাকলে সেখান থেকে আরো অনেক কিছু হতে পারে। পুরো কোরিয়াতে কোনো মাদরাসা নেই। একটা মাত্র ইসলামিক স্কুল আছে, সেটাও না থাকার মতোই। খুব বেশি একটা প্রভাব সেটার নেই।
তাহলে মানুষের দ্বীন শেখাটা কীভাবে পরিচালিত হয়?
দ্বীনি শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। মসজিদে মুসলিম শিশুরা সপ্তাহে দু-দিন আসে। এবং সামান্য সময় তারা আরবি শিখে। অনলাইন ভিত্তিক একটা স্কুল হয়েছে সম্প্রতি, কিন্তু ওটারও খুুব বেশি সম্পৃক্ততা এখনো মানুষের কাছে পৌঁছেনি।
আপনি তো ছুটি শেষে ওখানে ফিরে যাবেন। গিয়ে কী কী কাজ করার ইচ্ছে?
ইসলামিক সেন্টারে যে শিশুরা সপ্তাহে দুদিন আসে, এটাকে আরো উন্নত ও গতিশীল করার ইচ্ছে। সেখানের মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর, তাই বাচ্চাদের শিক্ষার আকর্ষণের জন্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা হাতে নেওয়ার ইচ্ছে। এছাড়া দাওয়াতি ও ইসলাহি কাজে আগের চেয়ে বেশি সময় দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যতটুকু কাজ নেন, সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব ইনশাআল্লাহ।
আপনি বলেছেন সপ্তাহে মাত্র দু-দিন মুসলিম শিশুরা মসজিদে পড়তে আসে, তো বাকি দিনগুলোতে তারা কী করে?
বাকি সব দিন তাদের কোরিয়ান স্কুলে বাধ্যতামূলক থাকতে হয়। ওই দেশে সকল শিশুর রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আবশ্যক। এর বাইরে অন্য শিক্ষা বব্যস্থায় যাবার সুযোগ নেই। অন্য কিছু শিখতে হলে পাশাপাশি শিখতে হবে।
ইসলামি শিক্ষা বিস্তার বা খেদমতের ব্যাপারে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা-সমর্থন আছে কি?
সরকারিভাবে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই, তবে স্বাধীনতা আছে।
ওখানে চাইলে কি মাদরাসা করা যাবে?
যাবে, কিন্তু অনেক ব্যয়বহুল। এর জন্য যদি বড় একটা কমিউিনিটি গড়ে উঠতো, তাহলে অসম্ভব নয়। কিন্তু ইসলামিক কোনো কমিউনিটি এখনও গড়ে ওঠেনি। সামান্য কিছু দ্বীনদার পরিবার আছে। বাঙালি, পাকিস্তানি যেসব পরিবার আছে, তারা চাইলে ইসলামিক স্কুল গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু তার আগে নিজেদের ইউনিটি দরকার। পঞ্চাশটা পরিবার যদি একটি এলাকায় একত্র হতে পারে তাহলে প্রতিষ্ঠান দেওয়া সম্ভব। পাকিস্তানি বা অন্য দেশী প্রয়োজন হবে না। শুধু বাঙালি পরিবারগুলো একত্র হওয়ার চেষ্টা করলেও সম্ভব। কিন্তু দু:খজনকভাবে বাঙালিদের ভেতর সেই বোধের অভাব রয়েছে।
কওমি মাদরাসার আলেম তালেবে ইলমরা মাদরাসার গুরুত্ব বোঝেন। তারা পৃথিবীর যেখানেই যান সেখানেই মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেন। একটা মাদরাসা হওয়া মানে ইসলামের একটা দুর্গ গড়ে ওঠা। আমাদের এক বন্ধু মাওলানা রফিক আমজাদ ফিজি আইল্যান্ডে প্রায় একশ বিঘার উপর একটা মাদরাসা করেছেন। কোরিয়ায় যাওয়ার পর থেকেই আমার মনে হয়েছে এখানেও একটা মাদরাসা করতে হবে। এখনই না, তবে পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে।
প্রথম কাজ হচ্ছে আলেম-উলামার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। কেবল মাদরাসা করলেই তো হবে না, মাদরাসায় বাচ্চা ভর্তি করবে এমন পরিবার প্রস্তুত করতে হবে। সাধারণ ওয়ার্কার হিসেবেই বেশ কিছু আলেম আছে কোরিয়ায়। তাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ ইসলামিক চেতনা লাভ করে। এই সংখ্যা আরও বাড়লে মাদরাসা করা সহজ হবে। আলেম উলামা ও দ্বীনী চেতনার মানুষ পর্যাপ্ত হলে মাদরাসা হবেই। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, ফিজি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য অমুসলিম দেশে যেমন হয়েছে, কোরিয়াতেও হবে, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশি আলেমদের সেখানে দ্বীনি খেদমতের জন্য যাওয়া কতোটা প্রয়োজনীয়?
শুধু কোরিয়া নয়, চিন, জাপান, ভিয়েতনামসহ প্রাচ্যের যেকোনো দেশে বাংলাদেশী আলেমরা যেতে পারলে খুব ভালো। জাপানে ইদানিং খেদমতের ভালো পরিবেশ হয়েছে, বেশ কিছু দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। অন্য দেশগুলো একেবারেই খালি পড়ে আছে। একটি মাদরাসা বা ইসলামিক স্কুল নেই, পুরো দেশে একটা ভালো মক্তবও নেই। একসময় ভালো আলেমরা দেশের বাইরে যেতে চাইতেন না, ইলমের ক্ষতি হবে ভেবে। এখন সেই ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। কোরিয়ায় আমার আগে/পরে যে কজন ইমাম গিয়েছেন সবাই বয়সে আমার চেয়ে তরুণ কিন্তু তারা ইলমি যোগ্যতায় ভালো। যোগ্য আলেমদের বিভিন্ন দেশে যাওয়া উচিত। দাওয়াতের উদ্দেশ্যেই যাওয়া প্রয়োজন।
আওয়ার ইসলামকে সময় দেওয়ার জন্য অনেক শুকরিয়া
আপনাকেও অসংখ্য শুকরিয়া, জাযাকুমুল্লাহ খাইরান ফিদ-দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ।
কেএল/