২০২১ সালের গণভোটে পাস হওয়া একটি আইন অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডে এখন জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখা নিষেধ। এরই ধারাবাহিকতায়, দেশটির কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো বোরকা পরার জন্য এক নারীকেই জরিমানা করেছে।
সোমবার (২৪ মার্চ) রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ঘটনা ঘটেছে জুরিখ শহরে, যেখানে এক নারী প্রকাশ্যে বোরকা পরেছিলেন। সুইস পুলিশ মুখপাত্র মাইকেল ওয়াকার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নতুন আইন অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডে মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইভাবে, বিক্ষোভকারী বা ক্রীড়াপ্রেমী যারা মুখোশ বা বালাক্লাভা পরেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য।
তবে, এই আইনে কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে- স্বাস্থ্যগত কারণ, ঠান্ডা আবহাওয়া, কার্নিভ্যাল ইভেন্ট, ধর্মীয় উপাসনালয়, কূটনৈতিক বা সাংস্কৃতিক পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে মুখাবরণ পরা অনুমোদিত থাকবে বলে জানা গেছে।
সুইস পুলিশ মুখপাত্র ওয়াকার আরও বলেন, গোপনীয়তা আইনের কারণে ওই নারীর বয়স বা পোশাকের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন, ওই নারী সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা, পর্যটক নন।
দেশটির আইন অনুযায়ী, প্রথমবারের লঙ্ঘনে জরিমানা ১০০ সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ১১০ ডলার), তবে যদি আদালতে মামলা করা হয়, তাহলে জরিমানার পরিমাণ বেড়ে ১,০০০ সুইস ফ্রাঁ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
প্রসঙ্গত, এই আইনটি ২০২১ সালের গণভোটে পাস হয়েছিল, যেখানে ৫১.২ শতাংশ ভোটার বোরকা নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। আইনটি মূলত ‘উগ্র ইসলাম’ রোধের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত হলেও, পরে তা পরিবর্তিত হয়ে দেশটির জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি উপায় হিসেবে পাস হয়।
সুইজারল্যান্ডের অর্ধেকেরও বেশি ক্যান্টন (প্রদেশ) আগেই এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তবে জাতীয় আইন পাস হওয়ার পর এটি আরও কার্যকর হয়ে উঠেছে।
এই আইন নিয়ে সমালোচকরা বলছেন, এটি সুইজারল্যান্ডের ৪ লাখ মুসলিম নাগরিকের ওপর অবিচারমূলক প্রভাব ফেলছে, যদিও তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই বোরকা বা নিকাব পরেন।
সুইস সরকারও শুরুর দিকে এই আইনটির বিরোধিতা করেছিল, কারণ তারা ভেবেছিল এটি দেশের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যে মুসলিম সংগঠনগুলোও এই আইনটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
উল্লেখ্য, বোরকা বা নিকাব নিষিদ্ধ প্রথমে ফ্রান্সে ২০১১ সালে চালু হয়েছিল, এরপর অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ যেমন অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি এবং স্পেনেও বোরকা এবং নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এমএম/