বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) কার্যকর শুরু করেছে ভারত। এই আইনের অধীনে প্রথমবারের মতো ১৪ জনকে নাগরিকত্ব দিয়েছে দেশটি।
চলমান লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওই ১৪ জনের হাতে নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেওয়া হয়। এর আগে চলতি বছরের মার্চে বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের কথা ঘোষণা করেছিল ভারত।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের বিধি জারি করার প্রায় দুই মাস পর বুধবার এই আইনের অধীনে প্রথমবারের মতো ভারতীয় নাগরিকত্বের সনদ পেয়েছেন ১৪ জন। নতুন আইনে নাগরিকত্বের আবেদনের যোগ্যতার জন্য ভারতে থাকার সময়কাল ১১ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ হয়ে যে সকল অমুসলিম উদ্বাস্তু ভারতে এসেছেন, তারাই এই আইনের অধীনে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন।
এই সকল শর্ত মেনেই এই ১৪ জন ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন। বুধবার নয়া দিল্লিতে এই ১৪ জন আবেদনকারীর হাতে নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভাল্লা। এসময় রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া, ডাক বিভাগের সচিব, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর-সহ পদস্থ কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ভারতে প্রথমবার নাগরিকত্ব আইন পাস হয় ১৯৫৫ সালে। সেই আইন অনুযায়ী, বিদেশ থেকে ভারতে আসা যেসব ব্যক্তি বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ধরে ভারতে বসবাস করছেন এবং অন্তত ১ বছর টানা থেকেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে তা অনুমোদন করা হতো।
তবে সিএএতে ১১ বছরের মেয়াদকালকে কমিয়ে ৫ বছর করা হয়। ২০১৯ সালে পাস হয় এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। এর প্রায় ৫ বছর পর চলতি বছরের ১১ মার্চ এই আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। আইন কার্যকরের ঘোষণার প্রায় দুই মাস পর বুধবার এই আইনের অধীনে প্রথমবারের মতো ভারতীয় নাগরিকত্বের সনদ পান ১৪ জন।
মূলত চলতি বছরের মার্চে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতেই সিএএ’র অধীনে কীভাবে নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে, কী কী নিয়ম রয়েছে, জেলা স্তরের কমিটির মাধ্যমে কীভাবে আবেদন করা যাবে, আবেদনগুলোর যাচাই-বাছাই কীভাবে হবে- সব জানানো হয়েছিল।
তারপর থেকেই সরকারি ওয়েবসাইটে সিএএ’র অধীনে নাগরিকত্বের আবেদন করা শুরু করেছিলেন আবেদনকারীরা। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর সেন্সাস অপারেশনের ডিরেক্টরের নেতৃত্বাধীন কমিটি এই ১৪ জন আবেদনকারীকে সিএএ’র অধীনে নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২৪ সালের নির্বাচনেও বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে সিএএ। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে সিএএ পাস হওয়ার পরই দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। বিজেপিবিরোধী বিভিন্ন ভারতীয় দল ছিল সেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ব্যাপক বিরোধী।
উত্তর-পূর্ব ভারত থেকেই মূলত আপত্তি উঠেছিল সিএএ নিয়ে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সিএএ কার্যকর হলে শরণার্থীদের ভিড় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে। তার ফলে ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত সমস্যা প্রকট হতে পারে। নিজেদের ভাষা এবং সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থেই অনেকে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন।
পাশাপাশি আইনে মুসলিমদের বাদ দেওয়া নিয়েও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শুধু তা-ই নয়, দক্ষিণ ভারতে সিএএ বিরোধিতার মূল কারণ, শ্রীলঙ্কা থেকে আগত তামিলদের উদ্বাস্তুদের বাদ দেওয়া।
এনএ/