ইহুদিবাদী ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় ও চারদিনের যুদ্ধবিরতির যে চুক্তি হয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে এ চুক্তিতে উপনীত হতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনকারী কাতার আশা করছে, সাময়িক এই চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে রূপ নেবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল–আনসারি গতকাল (বুধবার) বলেন, “কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক আলোচনা ও দর-কষাকষির পর অবশেষে এই চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের নজর থাকবে বিবদমান দুই পক্ষের চুক্তির শর্ত মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা।”
আনসারি আরও বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধ ও এই চুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছানো যায়, সেটি নিয়ে এখন কাজ করতে হবে। এরপরে কয়েক দশকের এই সংঘাত বন্ধে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তিতে উপনীত হতে কাজ করার জন্য কাতার ও মিশরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে হামাসের হাতে আটক থাকা ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন। একই সঙ্গে যুদ্ধ কিছুদিন বন্ধ থাকায় গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠানো সম্ভব হবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের আবাসিক প্রাসাদ ক্রেমলিন
ইহুদিবাদী ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চুক্তির বিষয়টিকে সুসংবাদ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া। চুক্তি হয়েছে জানার পর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়াসহ বেশিরভাগ দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল। কারণ, যুদ্ধবিরতি হলেই কেবল সংঘাতের সমাধান নিয়ে অগ্রগতি হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, সাময়িক যুদ্ধবিরতির এ চুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এ চুক্তির মাধ্যমে মানবিক সংকট কিছুটা হলেও কমবে বলে আমরা আশা করছি।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দখলদার ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে সঠিক পথে যাওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আলে সৌদ। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে সংঘাত বন্ধের পথ খুলে দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মিশর, ফ্রান্স ও জার্মানি
মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল–সিসি যুদ্ধবিরতির এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন বলেছেন, হামাসের হাতে আটক সব বন্দির মুক্তি নিয়ে তিনি ও তার দেশ কাজ করছে। চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইউরোপীয় কমিশন
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, এ চুক্তির ফলে গাজায় আরও ত্রাণসহায়তা পাঠানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন। জোটের পক্ষ থেকে গাজায় আরও ত্রাণসহায়তা পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এ চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে উভয় পক্ষকে চুক্তির শর্ত পুরোপুরি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যা রয়েছে:
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর ৪৬ দিন অবিরাম বোমাবর্ষণের পর বুধবার সকালে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয় ইহুদিবাদী ইসরাইল। চুক্তি অনুযায়ী হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি ব্যক্তিদের মধ্য থেকে অন্তত ৫০ জনকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল গাজায় টানা চার দিন হামলা চালাবে না। পাশাপাশি দখলদার ইসরাইলের কারাগারে আটক ১৫০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু বন্দি মুক্তি পাবেন।
সুত্র: পার্স টুডে
এনএ/