৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে হামলা চালানোর পর গাজায় তাণ্ডব শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। উত্তর গাজার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনীর আরো বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের লক্ষ্য হামাসের সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক চিহ্নিত ও ধ্বংস করা। বছরের পর বছর ধরে নিজেদের মূল প্রতিরক্ষা কৌশল হিসেবে সতর্কতার সঙ্গে সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনটি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের মূল ঘাঁটি উত্তর গাজায় হামলা চালানোর সময় এরই মধ্যে গেরিলা হানাসহ কিছু বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। হামাসের সঙ্গে তাদের সামনাসামনি লড়াইও হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাকড়শার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নির্মূল করা হবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সামনে আরো বড় চ্যালেঞ্জ।
তুরস্কের আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো ও প্রতিরক্ষা নীতিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো রিচার্ড আউটজেন বলেন, ‘সুড়ঙ্গগুলো পুরোপুরি নির্মূল করা হবে ধীরগতির, নিরলস ও দীর্ঘমেয়াদি কাজ।তবে ইসরায়েলি বাহিনী সম্ভবত চেষ্টা চালিয়ে যাবে।’
গাজার সুড়ঙ্গ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন ইসরায়েলের বার-ইলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ জোয়েল রসকিন। তিনি বলেন, আশির দশক থেকে শুরু করে দুই দশকের বেশি সময়ের কাজের ফল হামাসের আজকের এই সুড়ঙ্গ। শুরুতে মিসর থেকে পণ্য পাচারের জন্য সুড়ঙ্গগুলো ব্যবহার করা হতো।
তবে এগুলো যে হামাসও ব্যবহার করছে তার প্রথম প্রমাণ মেলে ২০০১ সালে। ওই সময় সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে চালানো বিস্ফোরণে একটি ইসরায়েলি সামরিক পোস্ট উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সুড়ঙ্গ নিয়ে ইসরায়েলিদের টনক নড়ে আরো পাঁচ বছর পর। তখন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা একটি সুড়ঙ্গ থেকে ওপরে উঠে এসে ইসরায়েলি সৈনিক গিলাদ শালিতকে অপহরণ করেছিল।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত গোষ্ঠী হামাস ২০০৭ সালে নির্বাচনে জিতে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।
ইসরায়েল এর প্রতিক্রিয়ায় উপত্যকাটির ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে। তখন সুড়ঙ্গগুলো অবরোধ এড়িয়ে গাজায় খাদ্য, পণ্য ও অস্ত্র আনার একমাত্র উপায়ে পরিণত হয়।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা থেকে ছাড় পাচ্ছে না হাসপাতালগুলোও। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, হাসপাতালগুলোর নিচেই রয়েছে হামাসের সুড়ঙ্গ। সেখানে আছে তাদের ঘাঁটি ও অস্ত্রশস্ত্র। হামাস এ দাবি অস্বীকার করে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান থেকে চালানো হামলা সুড়ঙ্গের কেন্দ্রস্থল ধ্বংসের মতো যথেষ্ট গভীরে পৌঁছাতে পারবে না। এ জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে সুড়ঙ্গের সব প্রবেশ ও বের হওয়ার পথের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। এটি হবে অত্যন্ত দীর্ঘ ও বিপজ্জনক অভিযান।
কিংস কলেজ লন্ডনের প্রতিরক্ষা অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, ‘এই পুরো প্রক্রিয়ায় অনেক সময় প্রয়োজন এবং এটা ভীষণ বিপজ্জনক।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ইসরায়েল সুড়ঙ্গে প্রবেশের চেষ্টা করবে না।
জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো রিচার্ড আউটজেনের ধারণা, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি সম্মিলিত পদ্ধতি প্রয়োগ করবে। এর মধ্যে থাকবে জিম্মি উদ্ধার ও হামাস নেতা আটকে কিছু সুড়ঙ্গে সীমিত অভিযান, নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে কিছু টানেল বিস্ফোরক দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এসব কাজ সময়সাপেক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হাতের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
সূত্র : আলজাজিরা
এনএ/