ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইসরায়েলের অনবরত হামলায় ৩১ দিনে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১০ হাজার জনে। নিহতদের অর্ধেকেরই শিশু ও নারী। হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক এলাকায় টানা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গাজায় থাকা অল্পসংখ্যক বেকারি।
ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে গাজার শার্ক বেকারি। ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এলাকাটি লক্ষ্য করে ফেলে দেওয়া রুটির ব্যাগের সাথে রক্ত মিশে রয়েছে রক্ত। ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, গাজা শহরের নাসর স্ট্রিটে বৃহস্পতিবার হামলার ফলে কয়েক ডজন আহত ও নিহত হয়েছে। খবর আল জাজিরার
গাজা স্ট্রিপের পাঁচটি বেকারি সরাসরি ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং তাদের কাছাকাছি হামলায় অন্তত আটটি বেকারি এত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যে সেগুলো সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ এলাকায় ইসরায়েল কর্তৃক আরোপিত সম্পূর্ণ অবরোধ অব্যাহত থাকায় খাদ্য ফুরিয়ে আসছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রধান খাদ্য রুটি পাওয়া দিন দিন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাসিন্দারা এখন তাদের পরিবারের জন্য এক ব্যাগ রুটি পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করছে। কিছু এলাকায় ভোর হওয়ার আগেই সারি শুরু হয়।
গাজার বেকারি মালিক সমিতির প্রধান আবদেলনাসের আল-জারমি বলেন, জেনারেটরের জন্য জ্বালানী, বিদ্যুৎ এবং ব্যাকআপ সৌর শক্তির অভাবের কারণে বেকারিগুলো তাদের কার্যক্রম সীমিত করেছে। আটারও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
তিনি বলেন, 'জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কাছে ৩০ হাজার টন ময়দা ছিল যা ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণ করার কথা ছিল। বেকারিগুলো রুটি তৈরি করতে এবং লোকেদের সরবরাহ করার জন্য কিছু আটা নিয়েছিল।'
তিনি আরও বলেন, জ্বালানির অভাবে এবং টার্গেট হওয়ার ভয়ে বেশিরভাগ বেকারি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের মতে, গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের মাত্র দুই শতাংশ ৭ অক্টোবর থেকে বিতরণ করা হয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এখানকার প্রায় সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা জানেন না যে তাদের পরবর্তী খাবার কোথা থেকে আসবে।
আল-জার্মি বলেছেন যে, 'আমরা একটি নিরাপত্তা গ্যারান্টি চাই যাতে আমরা আমাদের বেকারিগুলিতে পরিষেবা আবার শুরু করতে পারি। কিন্তু এখন এটি একটি অসম্ভব পরিস্থিতি।'
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১০ হাজার ৫১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪ হাজার ৩২৪ জনই শিশু। নিহতের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২ হাজার ৮২৩ জন। এ ছাড়া ৬৪৯ জন বয়স্ক ফিলিস্তিনিও রয়েছেন নিহতদের তালিকায়। ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন ২৬ হাজারেরও বেশি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার বাইরে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে নিহত হয়েছে আরও অন্তত ১৬৩ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে আরও ২ হাজার ৪০০ জন। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর এখনো অন্তত ২ হাজার ৫৫০ জন নিখোঁজ রয়েছে। এদের মধ্যে আবার ১ হাজার ৩৫০ জনই শিশু।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মনে করেন, গাজায় নিহত মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাই বলে দিচ্ছে, সেখানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের স্পষ্ট কিছু ভুল রয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে গুতেরেস বলেন, ‘আপনি যখন গাজায় নিহত বেসামরিক মানুষের সংখ্যা দেখবেন, তখন সেখানে সামরিক অভিযানের স্পষ্ট কিছু ভুল দেখবেন।
এনএ/