বোমা হামলার পাশাপাশি গাজায় ‘ক্ষুধাকেও’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর থেকে পৈশাচিক হামলার পাশাপাশি খাদ্য, খাবার পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল, ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ এই উপত্যকায়।
এই পরিস্থিতিতে গাজায় অবিলম্বে খাদ্য ও খাবার পানিসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম। সংগঠনটি ইসরায়েলের নাম উল্লেখ না করে বলেছে, গাজায় অনাহারকে ‘যুদ্ধাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর ভয়াবহ বিমান হামলা শুরু করার একই সময়ে সেখানে খাদ্য, খাবার পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। সেইসঙ্গে মিশরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে যাতে এসব জরুরি পণ্য উপত্যকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকরা নানারকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে।
চারদিক দিয়ে গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীকে অবরুদ্ধ করে রেখে সেখানে গত ১৯ দিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তেল আবিব। আর এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ বলে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমারা।
জাতিসংঘ গাজায় একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি ইসরায়েলকে গাজায় আরো ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিদিন গাজায় যেখানে কয়েকশ’ টন জরুরি পণ্য প্রয়োজন সেখানে গত ১৯ দিনে মাত্র ৭০টি ট্রাক প্রবেশ করেছে।
অক্সফাম বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা উপত্যকায় গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে প্রয়োজনের মাত্র ২ শতাংশ খাদ্য প্রবেশ করেছে। এটি বলেছে, খাদ্য সংকট থেকে গাজাবাসীকে রক্ষা করতে হলে প্রতিদিন শুধু খাদ্যবাহী ১০৪টি ট্রাককে উপত্যকায় প্রবেশ করতে দিতে হবে।
অক্সফামের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক স্যালি আবি খলিল বলেছেন, “পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে- মানবতা আজ কোথায়? গোটা বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ২৩ লাখ মানুষকে গণশাস্তি দেওয়া হচ্ছে। অনাহারকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার কোনো বৈধতা বা ন্যায্যতা থাকতে পারে না। বিশ্ব নেতারা মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন না। তাদের অবশ্যই দায়িত্ব রয়েছে এবং তা এখনই পালন করতে হবে।”
অক্সফাম যখন এ আহ্বান জানিয়েছে তখন গাজায় খাবার ও পানির তীব্র হাহাকার চলছে। আগে থেকেই নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা গাজাবাসীর অনেকের এখন অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটছে। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার অর্ধেকের বেশি অধিবাসী গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। সামান্য ত্রাণসহায়তায় নির্ভরশীল তারা। দাতব্য সংস্থাগুলোর দেওয়া খাবারের জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে গাজাজুড়ে। সংস্থাগুলো বলছে, তাদের কাছে যে খাবার আছে, তা দিয়ে এত সংখ্যক মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। সূত্র: আল জাজিরা