বোমা হামলায় বিধ্বস্ত গাজার এক বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমার মাথার ওপরে থাকা ছাদে যতই বোমা ফেলুক, তবু আমি পালাবো না। ওরা যতই বোমা ফেলুক, মাতৃভূমি ছাড়বো না—এখানেই থাকবো।
৪২ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইব্রাহিম গাজার উত্তরাঞ্চলের শহর গাজা সিটিতে অবস্থান নিয়েছেন। সেখান ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে তিনি জানান, নিজের জন্মভূমি ছেড়ে পালাবেন না তিনি।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যেতে বললেও মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মত অনেকেই তাদের জন্মভূমি ছেড়ে কোথাও যেতে চাইছেন না। মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, তার বাড়ি ছিল গাজার জাবালিয়া এলাকায়। গত রবিবার ওই এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে তিনি তার স্ত্রী ও চার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে শেখ রাদওয়ান এলাকায় যান। সেখানে গিয়েও জানতে পারেন ওই স্থানেও ইসরায়েলি বাহিনী রকেট হামলা করতে যাচ্ছে। পরে গাজা সিটির শহরতলীর এ বাসাটিতে সপরিবারের আশ্রয় নেন তিনি।
তবে একেবারে গাজা ছেড়ে যেতে চান না ইব্রাহিম। তিনি মনে করছেন, উত্তর গাজা ছাড়া একেবারেই যুক্তিসঙ্গত হবে না। ‘আমাদের দক্ষিণের দিকে যেতে বলছে। কিন্তু আমরা সেখানে কোথায় যাবো?’
তিনি আশঙ্কা করছেন, দক্ষিণ গাজায় সরে গেলে পরে তাদের পুরনো বাসস্থানে আর ফিরতে পারবেন না। আট দিন ধরে এখানে কোনো খাবার বা পানি নেই। গাজা সিটিতেই আরেকটি বাড়িতে পাঁচ সন্তান নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী আবো জামিল।
তিনি বলেন, আট দিন ধরে এখানে কোনো খাবার বা পানি নেই। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি জ্বালানি ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে। তবে তিনিও গাজা ছাড়তে চান না—খাবার, পানি ছাড়া জীবন কাটাতে হলেও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ওই অঞ্চলেই থাকতে চান। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠজনের বয়স মাত্র চার বছর।
জামিল বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তারা আমাদের বাড়িতে হামলা করলেও আমরা এখানেই থাকবো। পরিবার নিয়ে পালিয়ে কোথায় যাবো?’
এদিকে তার মত গাজার উত্তরাঞ্চলের অনেক মানুষই মনে করেন গাজার ভেতরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোটাছুটি করা অর্থহীন। নিজেদের ঘর ছেড়ে সরে গেলে আর কখনোই সেখানে ফিরতে পারবেন না। এছাড়া বড় একটা অংশ শরণার্থীর জীবন কাটাতে কাটাতে ক্লান্ত। এখন নিজেদের ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়েছেন—আমৃত্যু লড়বেন। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল হামাস। এরমধ্যেই ফিলিস্তিনির অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালে চালানো হয় ভয়াবহ হামলা। ওই হামলায় একসঙ্গে ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এম আই/