গত বছর রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল করপোরেট বিশ্ব। ডিজনি, অ্যাডিডাস থেকে শুরু করে ব্যাংক অব আমেরিকা, টয়োটার মতো সংস্থাগুলো আর্থিক ও নৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়েছিল ইউক্রেনীয়দের প্রতি। সংহতি জানাতে ইউক্রেনের পতাকার লেপেল বুকে লাগান অ্যাপলের টিম কুক, সিটি গ্রুপের জেন ফ্রেজারসহ বড় বড় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা।
বৃহৎ তেল কোম্পানি এক্সনমোবিল, গৃহস্থালী পণ্যের ব্র্যান্ড ইউনিলিভারসহ বহু সংস্থাই স্পষ্ট ভাষায় মস্কোর আগ্রাসনের নিন্দা জানায়। রাশিয়ায় ব্যবসা বন্ধ বা সীমিত করার ঘোষণা দেয় এক হাজারেরও বেশি কোম্পানি।
সেই তুলনায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের বিষয়ে একপ্রকার নীরবতাই পালন করছে বিশ্বের বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গলা ফাটানো অনেক ব্র্যান্ডই মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
যারা মুখ খুলেছে, তারাও কেবল ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বা হামাসের নিন্দা জানিয়েছে। সেখানে গাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিদের কথা অনুপস্থিত। এদের মধ্যে রয়েছে মাইক্রোসফট, গুগল, হিউলেট প্যাকার্ড, জেপি মরগান, গোল্ডম্যান স্যাশের মতো খ্যাতনামা সংস্থাগুলো।
অথচ, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় প্রায় তিন হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার এক-তৃতীয়াংশই নিষ্পাপ শিশু। খাবার নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই- কল্পনাতীত মানবেতর পরিস্থিতিতে সময় কাটাচ্ছে গাজার ২৩ লাখ মানুষ। কিন্তু তাদের বিষয়ে করপোরেট বিশ্বে টু শব্দ নেই।
কেন এই নীরবতা?
ক্যাম্পেইন এশিয়ার সম্পাদক রাহাত কাপুরের মতে, ঐতিহাসিক জটিলতা এবং সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলোর কারণে কোম্পানিগুলো এই সংঘাতে নিজের নাম জড়ানোর বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক ক্ষেত্রে কার্যকরী ব্র্যান্ডগুলোর অবস্থান প্রায়ই তীব্র প্রতিক্রিয়া, খ্যাতির অসামান্য ক্ষতি এবং রাতারাতি গ্রাহক হারানোর ঝুঁকিতে থাকে। এগুলো পুনরুদ্ধার অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন দেখানো পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। কারণ এ অঞ্চলের অনেক দেশই হামাসকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে বর্ণনা করে।
সিডনির বিজনেস স্কুল ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির ডিন কার্ল রোডস বলেন, অপারেশন সোর্ডস অব আয়রন নামে ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে শত শত ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, যাদের মধ্যে অনেক শিশু ছিল। কিন্তু পশ্চিমা করপোরেশনগুলোর কাছ থেকে এ বিষয়ে লক্ষণীয় কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাদের ক্রিয়াকলাপ সত্যিকারের মানবিকতার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বলে মনে হয়।
অক্সফোর্ডের সেড বিজনেস স্কুলের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফেলিপ থমাজ বলেছেন, কোম্পানিগুলোর সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারের ধারণাগুলো প্রায়ই মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও মূল্যবোধের মধ্যে পড়ে। আমরা ব্র্যান্ডগুলোকে নিজেদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করি… তাই তাদের জন্য বিশ্ব সম্পর্কে আপনার মতামত প্রতিফলিত করতে চাওয়া যুক্তিসঙ্গত।
থমাজের মতে, যুদ্ধের সময় ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। সে কারণে ব্র্যান্ডগুলো প্রায়ই সহিংসতার নিন্দা জানানোর মতো সাধারণ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে থাকতে পছন্দ করে অথবা কিছুই বলে না।
সূত্র: আল-জাজিরা।
এনএ/