|| জহিরুল ইসলাম ||
দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস পরিচালিত ‘তুফান আল আকসা’ অভিযানকে ইসরায়েল পতনের পটভূমি বলে মন্তব্য করেছেন হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি বলেন, হামাস তুফান আল আকসা অভিযানের মাধ্যমে যুগান্তকারী ইতিহাস রচনা করেছে। এই অভিযান ফিলিস্তিনে ইসরাইলের পতনকে নিশ্চিত করবে। এ সময় ইসরায়েলের চলমান বর্বরতাকে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেন।
বক্তব্য প্রদানকালে হানিয়াহ বলেন, শত্রুপক্ষের কাপুরুষ সেনাবাহিনী আমাদের দুঃসাহসী যোদ্ধাদের মোকাবেলায় পেরে উঠেনি। এজন্য তারা গণহত্যার কলঙ্কিত পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, তাদের গণহত্যা অপমান ও পরাজয়কে তরান্বিত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরায়েল বাহিনী যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তার বিরুদ্ধে হামাস কৌশলগত লড়াই অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইসরায়েল কর্তৃক গাজার জনগণকে ‘সিনাই’ পর্বতে বাস্তুচ্যুত করতে চাওয়ার বিষয়ে হানিয়া বলেন, গাজার জনগণের শেকড় তাদের এই ভূমিতেই প্রোথিত। তারা জন্মভূমিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে। তারা কখনোই। এই ভূমি ছেড়ে যাবে না বা দেশত্যাগ করবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শত্রুদের বলছি যে, আপনাদের ওপর আমাদের আকস্মিক আক্রমণ ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের মুক্তি এবং আপনাদের পতন ও পরাজয় খুব সন্নিকটে।তাই আমাদের দেশত্যাগের কোনোও সম্ভাবনা নেই। আমাদের দেশে থাকার সিদ্ধান্ত আমাদের। আপনারা থাকতে পারবেন কিনা—সেই সিদ্ধান্তও আমরা দেব।’
হামাস বেসামরিক নাগরিক এবং শিশুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে — এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে হানিয়া বলেন, ‘হামাস বেসামরিক, প্রাপ্তবয়স্ক বা শিশুদের ওপর হামলা করে না। এটা ইসরায়েলি মিডিয়ার নির্জলা মিথ্যাচার। ইসরায়েলি মিডিয়ার এমন বিভ্রান্তিকর উপস্থানার মুখে আমাদের হাত থেকে রাইফেল ফেলে দেব না।’
যেসব দেশ ও দেশের মানুষ ফিলিস্তিনের প্রতি ঐক্য ও সংহতি প্রকাশ করছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সেসব দেশ ও মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হামাসপ্রধান বলেন, যারা আমাদের সমর্থন করছেন, আমি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং তাদেরকে আপন মতের ওপর অবিচল থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আমাদের জনগণকে বলেছি, আপনারা যুদ্ধ চালিয়ে যান। যে পর্যন্ত ফিলিস্তিন ও আল আকসা স্বাধীন না হবে, বাস্তুহারা জনগণ তাদের বাড়িঘরে ফিরে না আসবে, আপনারা যুদ্ধ থেকে বিরতি নেবেন না।
এর আগে, হানিয়াহ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে পাঠানো এক চিঠিতে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীকে অবিলম্বে এই অপরাধ বন্ধ করতে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জোর তাগিদ দেন।
উল্লেখ্য যে, গত শনিবার ভোরে হামাস এবং ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনগণ ইসরায়েলের দীর্ঘকালের নির্যাতন বিশেষত তীর্থ ভূমি জেরুজালেম ও আল আকসা দখলদারিত্বের প্রতিরোধে তুফান আল আকসা অভিযান শুরু করে।
অপরদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অপারেশন আয়রন সোর্ডস শুরু করে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের ওপর নৃশংস হত্যাকান্ড অব্যাহত রেখেছে ২০০৬ সাল থেকে।
কেএল/