|| সাআদুল্লাহ আফনান ||
আরবি ভাষা একটি জীবন্ত ও গতিশীল ভাষা। সর্বযুগে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় ভাষা। এর অবস্থান সমস্ত ভাষার শীর্ষে। যুগ যুগ ধরে এর চর্চা ও অনুশীলন চলমান। আবাল, বৃদ্ধা-বণিতা সবাই এতে অংশগ্রহণ করে চলেছে সমানভাবে। বিশেষভাবে নারীদের অংশগ্রহণ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তারা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেছেন, শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করে সুনাম কুড়িয়েছেন। তাদের রেখে যাওয়া অসামান্য কীর্তি ও অবদান হাজারো মানুষের ভাষা ও সাহিত্য সাধনায় প্রেরণা যোগায়।
ইসলাম জ্ঞানচর্চাকে সবার জন্য অপরিহার্য করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল শ্রেণির মানুষের জন্য পাঠদান প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেছেন। নারীশিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং পৃথক ব্যবস্থাপনায় পাঠদান করেছেন। তারা বিভিন্ন মজলিসে উপস্থিত হয়ে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বুৎপত্তি অর্জনের পাশাপাশি আরবি ভাষায়ও দক্ষতা অর্জন করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখনিসৃত বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষা আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
আয়েশা রা. বলেন, “আমি জুমার দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুতবা স্পষ্টভাবে শুনতে পেতাম। অথচ আমি মেয়েদের সর্বশেষ কাতারে থাকতাম।” [সহিহ বুখারী]
এই হাদীস থেকে বক্তব্য শ্রবণের বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যায়, যা আরবি সাহিত্যের বিশেষ পাঠ। এভাবে বিশেষ গুরুত্ব ও পরিচর্যার ফলে নারীশিক্ষার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। কাব্যরচনা ও সাহিত্যসাধনার ইতিহাস-উপাখ্যান রচিত হয়। কাব্যরচনায় যারা প্রসিদ্ধ ছিলেন, আয়েশা, খানসা, সাফিয়া, আতিকা, যায়নাব, উম্মে আইমান রা. তাদের অন্যতম। তবে খানসা রা. সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। শোকগাথা ও মর্সিয়া রচনায় তার সমকক্ষ কেউ ছিল না। ভাষাবিদ ও কাব্য সমালোচকদের মতে খানসা রা.-এর মতো কোনো নারী কবি জন্ম নেননি।
১৮৮৮ সালে বৈরুত থেকে তার কবিতার একটি বৃহৎ সংকলন প্রকাশিত হয়। আয়েশা রা.-এর ভাষাও ছিল সাবলীল ও প্রাঞ্জল। চমৎকার শব্দ গাঁথুনি ও শক্তিশালী বাক্যকাঠামো ভাষার মানকে করেছিল অনন্য। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল ‘ইফকে’র ঘটনা সম্বলিত হাদীস। যে সময় তিনি সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, মিথ্যা অপবাদের চাপা কষ্টে একবারে ভেঙ্গে পড়েছেন, বুক ভরা আশা নিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে আছেন; এতকিছুর পরও যখন আত্মসমর্থনের বর্ণনা দিচ্ছেন, তখন শব্দ চয়ন ও বাক্যগঠনে এতটুকু ত্রুটি দেখা যায়নি। তার সেই ঐতিহাসিক বর্ণনা আজো আরবি সাহিত্যের সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে।
প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন বিদূষী কবি, বাগ্মী বক্তা হওয়ার পাশাপাশি অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। খানসা ও আয়েশা রা. ছাড়াও নারীদের মাঝে অনেক কবি-সাহিত্যিক ছিলেন, যাদের যুগান্তকারী অবদান ইতিহাসের পরতে পরতে বিদ্যমান।
বিশ্বায়নের এ যুগে আর্ন্তজাতিক পরিম-লে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও দেশীয় পরিম-লে নারীদের অংশগ্রহণ এবং শিখন-শিক্ষণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নয়। তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরবি বিভাগে নারী শিক্ষিকার তীব্র সংকট। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ দায়িত্বশীলদের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যথাযথ ও অনুকূল পরিবেশে পাঠদান কার্যক্রমের মাধ্যমে একদল দক্ষ ও প্রাজ্ঞ আরবি শিক্ষিকা জাতিকে উপহার দেয়া সময়ের দাবি, যারা আরবি ভাষা পাঠদানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে নীতি ও নৈতিকতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের বীজ বপণ করবেন। সুশিক্ষার মাধ্যমে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করে দেশ ও জাতি বিনির্মাণে অবদান রাখবেন।
পরিশেষে প্রত্যাশা, স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে নারীদের পাশাপাশি সবার জন্য আরবি ভাষা শিক্ষার নয়া দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হবে, ২০২৪ ঈসায়ী আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস নতুনভাবে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগাবে এবং বিশ্বয়ানের যুগে বিশ্বব্যাপী হবে বাঙালী নারীদের আরবি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষার্থী : উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য গবেষণা বিভাগ, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ।
এনএ/