|| আবদুর রহমান ফরহাদ ||
মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব। আল্লাহ তায়ালা সমস্ত সৃষ্টির জীবের মাঝে মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দান করেছেন এবং তাদের দান করেছেন অসংখ্য নেয়ামত। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে ভাষা। এই নেয়ামত শুধু মানবজাতিকে দান করা হয়েছে। ভাষার মাধ্যমে মানুষ জীবনের বড় বড় প্রয়োজন পূরণ করে এবং পরস্পরে যোগাযোগ রক্ষা করে। কুরআনের ভাষায়, “সীমাহীন মেহেরবান আল্লাহ। তিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।” [সূরা আর-রহমান]
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বহু জাতি ও গোত্রে সৃষ্টি করেছেন। এই সৃষ্টিবৈচিত্রের আবশ্যকীয় দাবি হচ্ছে, তাদের ভাষায় ভিন্নতা থাকবে। কিছু আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে ভাষার সংখ্যা ৩ হাজারের কাছাকাছি। আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে এগুলোর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তবে সমৃদ্ধি, গঠন, উপাদান, উপকরণ, বৈশিষ্ট্য ও ব্যাকরণ ইত্যাদির বিবেচনায় আরবি ভাষা অন্য সকল ভাষা থেকে শ্রেষ্ঠ ও অনন্য। এটি আসমানি বার্তার বাহক। এ ভাষায় রয়েছে এমন সব বৈশিষ্ট্য, যা অন্য কোনো ভাষায় পাওয়ায় দুষ্কর। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এর প্রাচীনত্ব। এটি আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও অপরিবর্তিত প্রাচীন ভাষা, যার লিখিত রূপ বিগত ১৫ শতাব্দী পর্যন্ত কোনো ধরনের বিকৃতি ছাড়াই টিকে আছে অপরদিকে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিস ইত্যাদি ভাষার বয়স সাত বা আটশ বছরের বেশি নয়। অথচ এগুলোর মাঝে এত বেশি
পরিবর্তন ঘটেছে যে, তিন-চারশ বছর আগের ভাষারূপ বর্তমানে বুঝতে যথেষ্ট বেগ পোহাতে হয়। শব্দভান্ডারের বিবেচনায়ও আরবি ভাষা অন্য সব ভাষা থেকে অধিক সমৃদ্ধ। এই ভাষার মোট শব্দসংখ্যা ৬৭ লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে ব্যবহার হয় ৫১ লাখের মতো। অন্যদিকে ফরাসি ভাষার শব্দসংখ্যা মাত্র ২৫ হাজার। ইংরেজি ভাষায় এক লাখ। বাঙলা ভাষায় দেড় লক্ষাধিক। এ পরিসংখ্যানটি অন্যসব ভাষা থেকে আরবি ভাষা সমৃদ্ধ হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আরবি ভাষা লেখা এবং পড়া খুবই সহজ। কারণ, এ ভাষার লিখিত ও পাঠ্যরূপ একই ধরনের। অথচ এক্ষেত্রে অন্যান্য ভাষা ব্যতিক্রম। তাছাড়া আরবি ভাষায় এমন কিছু বর্ণ আছে, যেগুলোর বিকল্প অন্য কোনো ভাষায় নেই।
আরবি ভাষার আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো শব্দের ব্যুৎপত্তি, যা আরবদের কথামালার সবচেয়ে অভিনব দিক। এর মাধ্যমে প্রাচীন সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য ও বিভিন্ন শিল্পের পরিভাষা ব্যাপৃত হয়েছে এবং তা আরবি ভাষাকে আধুনিক পরিভাষা প্রণয়নের সক্ষমতা দান করেছে। আরবি ভাষার সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ ভাষাকে কুরআনুল কারীমের জন্য নির্বাচন করেছেন। কুরআনের ভাষায়, “আমি এ কিতাব আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।” [সূরা ইউসুফ : ২]
আর এর মধ্য দিয়ে এই মহান ভাষা অমরত্ব লাভ করেছে এবং অন্য সকল ভাষার মাঝে শীর্ষ সম্মানের স্থান অর্জন করেছে। বর্তমানে আরবি ভাষা জাতিসঙ্গের ৬টি দাপ্তরিক ভাষার অন্যতম একটি। এছাড়াও এটি পৃথিবীর বহুদেশের রাষ্ট্রভাষা। মুসলমানের জন্য এই ভাষার শ্রেষ্ঠত্বের দিকগুলো জানা এবং তা শিক্ষা করা জরুরি। আর যাদের সুযোগ আছে, তাদের জন্য এ ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করা এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা সময়ের দাবি।
শিক্ষার্থী: উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য গবেষণা বিভাগ, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ।
এনএ/