বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ।। ৩ পৌষ ১৪৩১ ।। ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬


চিরন্তন ভাষা আরবি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| জহুরুল ইসলাম ||

আরবি ভাষাকে আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠতম মর্যাদা দান করেছেন। সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম ও সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ আল কুরআনের ভাষা হিসেবে মনোনিত হয়ে আরবি ভাষা এই শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রায় আড়াই হাজার ভাষার মধ্যে প্রতিনিয়তই কিছু ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে এবং কিছু ভাষা লাভ করছে নবজীবন। এটাই ভাষার ধর্ম।

ভাষাজগতের এই নিয়ম মেনে অনেক প্রতাপশালী ভাষাই একসময় কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে এবং ভাষার ব্যবহারিক অঙ্গন থেকে সটকে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে শাস্ত্রের পাতায়। উপমহাদেশে দীর্ঘকাল দাপট নিয়ে চলা সংস্কৃত ভাষা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু কোন বাধা-বিপত্তি ছাড়াই আরবি ভাষা যে কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে, এতে প্রশ্ন তোলার কোন অবকাশ নেই। কারণ, কুরআনকে হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা এই ভাষাকে সংরক্ষণের দায়িত্বও নিজ যিম্মায় নিয়ে নিয়েছেন। কুরআন যতদিন পৃথিবীর বুকে থাকবে, আরবি ভাষাও থাকবে। কুরআনের তেলাওয়াত, চর্চা, হেদায়েত গ্রহণ ও অনুধাবনের চেষ্টার মধ্যে দিয়ে মানুষ এই ভাষাকে চিরকাল জীবিত রাখবে।

ইতিহাসে আরবি ভাষার উপযোগিতা নিয়ে সময়ে সময়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে আধুনিক যুগে আরববিশ্বে জাগরণের পর পৃথিবীর সঙ্গে চিন্তা, সভ্যতা ও জ্ঞানের আদান-প্রদান করতে গিয়ে আরবরা তাদের ভাষায় বর্ণনার সঙ্কট অনুভব করে। আরবি ভাষা আধুনিক যুগে ভাষাভাষীদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি না এ নিয়ে কথা ওঠে। কিন্তু এ ভাষা তো বন্ধ্যা নয়। এতে রয়েছে যে কোন সময় যে কোন ভূখন্ডের মানুষের মনের ভাব ব্যক্তকরণের ক্ষমতা। মিশরের বিখ্যাত কবি হাফেয ইবরাহিম আরবি ভাষার জবানে পংক্তি রচনা করেছেন-

“আমি তো এক মহাসাগর; আমার ভেতরে লুকানো অগণিত মণি-মানিক্য/(যারা আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলে,) তারা কি ডুবুরির কাছে কখনো জানতে চেয়েছে আমার হীরা-জহরতের

কথা?”

ইতিহাসের এই বাঁকে এসে আরবি ভাষাবিদরা আরবির সম্ভাবনাকে বের করে আনার চেষ্টা শুরু করলেন এবং প্রমাণ করলেন,আরবির ব্যবহারযোগ্যতা কোনো সময়ের সঙ্গে বাঁধা নয়। বরং কালের উৎকর্ষে সভ্যতা যেখানেই গিয়ে দাঁড়াক, আরবি ভাষা, সেই সভ্যতাকে নির্দ্বিধায় রূপায়ণ করতে পারবে নিজ শব্দ- বাক্যে। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ কথা বলে আরবিতে। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে যোগাযোগের পথ হচ্ছে আরবি। আরবির এই ব্যাপকতা ও বিস্তৃতির কারণে ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ আরবিকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং ২০১২ সালে এই দিনকে বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

আমরা মুসলমান। আরবি চর্চা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সুদীর্ঘকাল ধরে পৃথিবীর মুসলমানরা এই চর্চার ধারা জিঁইয়ে রেখেছে এবং আগামীতেও তা স্বমহিমায় অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আরবিকে আমরা চর্চা করে যাব কুরআনের প্রয়োজনে, ইবাদতের প্রয়োজনে। সর্বোপরি আমাদের দ্বীন ও ঈমানের প্রয়োজনে।

শিক্ষক: আরবি ভাষা ও সাহিত্য মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ