|| মুহাম্মদ রাশেদ মুখতার ||
২৪ এর জুলাই-আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা বাস করছি সত্যিকার স্বাধীন বাংলাদেশে। বিজয়ের ৫৩ বছর পর এবার জনগণ পূর্ণ মুক্ত-স্বাধীন থেকে ১৬ ডিসেম্ব বিজয় দিবস উদযাপন করছে। তাই এ নতুন বাংলাদেশকে ঘিরে আমাদের আছে বর্ণিল স্বপ্ন। আমাদের দেশ হবে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ। থাকবে না দারিদ্র-হাহাকার। রাত কাটাবে না কেউ অনাহারে। অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত হবে সবার জন্যে। থাকবে না কোনো জুলুম-নির্যাতন। আমরা দেখব স্বপ্নের বাংলাদেশ, যা তার পূর্ণ ভাবমূর্তি নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের প্রয়োজন মৌলিক দুটি উপাদান। তা হল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি। আর এই উভয় ক্ষেত্রেই আরবি ভাষার আছে শক্তিশালী ভূমিকা ও অবদান। বাংলাদেশ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান উৎস হল বৈদেশিক আয়। বর্তমানে পুরো বিশ্বে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধা কর্মরত। তাদের অধিকাংশ আছেন মধপ্রাচ্যের বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে। হোটেল-রেস্তোরা, দোকান-শপিংমল ও ড্রাইভিংয়ের মতো গণসংযোগমূলক ত্রিশেরও অধিক সেক্টরে তারা নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আছে কাজের প্রতি আগ্রহ, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। কিন্তু আরবি যোগাযোগের ভাষা জানা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। যেমন, ক্রেতার সামনে পণ্যের আকর্ষণীয় বর্ণনা দিতে না পারা। কলকারখানা ও নিমার্ণ সেক্টরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নাম নিয়ে সমস্যায় পড়া। কোম্পানির কর্মকর্তা ও মালিক শ্রেণির সঙ্গে সরাসরি কন্ট্রাক্ট করতে না পারা ইত্যাদি। যে কারণে দক্ষতা হিসেবে যথাযথ কর্মস্থল ও কাক্সিক্ষত স্যালারি পাচ্ছেন না অনেকে। প্রতি বছর বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের একটা মোটা অংক আসে রেমিট্যান্স থেকে। সুতরাং আমাদের জনশক্তি আরবি যোগাযোগের ভাষায় পারদর্শী হলে এই আয় অনায়েসে কয়েক গুণ বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। অপর যে বিষয়টি আমাদের প্রয়োজন; বরং প্রধান ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি। যারা কখনো রাষ্ট্রের মাল আত্মসাৎ করবে না। কারো ওপর জুলুম করবে না। পরোপকারে পাবে আত্মিক প্রশান্তি। চোখ বন্ধ করেই বলা যায়, আমাদের সোনার বাংলাদেশে যদি দুর্নীতি না থাকত, তাহলে দেশ আরো একশ বছর এগিয়ে যেত। আর এই মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করতে আরবি ভাষা জোরালো ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ।
কারণ, এ দেশের অধিকাংশ জনগণের ধর্মীয় গ্রন্থের ভাষা আরবি। তাই দেশের উন্নতির জন্য আরবি ভাষার উৎকর্ষ খুবই প্রয়োজন। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় শিক্ষা সিলেবাসে আরবি ভাষাকে পুনরায় অন্তর্ভূক্ত করা বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্ত আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অভূতপূর্ব সফলতা বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ। তবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে দরকার দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের। এক্ষেত্রে মাদরাসায় পাঠ সম্পন্নকারী আরবিতে পারদর্শী আলেমগণকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
আমরা আশা রাখি, বর্তমান ও পরবর্তী সরকার জাতীয় শিক্ষা সিলেবাসে আরবি ভাষার প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করবে এবং দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে জনমনের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
শিক্ষার্থী: উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য গবেষণা বিভাগ, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ।
এনএ/