বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ।। ৩ পৌষ ১৪৩১ ।। ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬


আজ বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মহিউদ্দীন ফারুকী ||

আজ ১৮ই ডিসেম্বর। আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস। ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভার ২৮ তম অধিবেশনে আরবি ভাষাকে এর দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

২০১২ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক অন্যতম সংস্থা ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ১৯০ তম অধিবেশনে সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮ই ডিসেম্বরকে বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

২০১২ সাল থেকে ইউনেস্কোসহ আরব বিশ্বের সাথে সাথে অন্য অনেক দেশ এ দিবসটি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও সভা-সেমিনারের মাধ্যমে পালন করে থাকে। আরবি ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি, এর প্রচার-প্রসার এবং বিশ্বময় এ ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে দিবসটি অনন্য ভূমিকা পালন করে।

প্রতি বছর এ দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন আরবীয় সংস্থা ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে একটি স্লোগান বা আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “আরবি ভাষা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) : সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি উদ্ভাবনকে শক্তিশালীকরণ।” ২০১৩ সালে প্রথম এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করায় হয়। সে বছর যার শিরোনাম ছিল ‘মিডিয়া ও আরবি ভাষা’।

২০১৪ সালে ‘আরবি হরফ’। ২০১৫ সালে ‘আরবি ভাষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান’। ২০১৬ সালে এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘আরবি ভাষার প্রচার জোরদার করা’। ২০১৭ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা ও নতুন তথ্যপ্রযুক্তি’। ২০১৮ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা ও তারুণ্য’। ২০১৯ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’। ২০২০ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা একাডেমি, প্রয়োজন না বিলাসিতা?’। ২০২১ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা এবং সভ্যতার যোগযোগ’। ২০২২ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা ও আত্মপরিচয়’। ২০২৩ সালে ছিল ‘আরবি : কবিতা ও শিল্পের ভাষা’।

আজকের এ দিবসটি পালনে সৌদির সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বিশ্বের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ফ্যাকাল্টি এবং আরবি ভাষা ইনিস্টিটিউটে রয়েছে বিশেষ অুনষ্ঠান। মিসর আরবি ভাষা একাডেমি আয়োজন করেছে ‘আরবি ভাষা শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ শিরোনামে বিশেষ সেমিনার। বাংলাদেশে ২০১৪ সাল থেকে ‘মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ’ দিবসটি পালন করে আসছে। এ বছরও মারকায কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন আয়োজন ঘোষণা করেছে।

এছাড়া বিভিন্ন মাদরাসা, মারকায এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দিবসটি আয়োজনের মাধ্যমে সবার সামনে আরবি ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা ও শেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রত্যেক দেশে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস দিবসটি পালনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।

এবারের আরবি ভাষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের দাবি হচ্ছে, অন্যান্য ভাষা যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে, তেমনিভাবে এর মাধ্যমে যেন আরবি ভাষাও উপকৃত হতে পারে। ভাষা শিক্ষাদান, গবেষণা ও প্রচারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় যেন এআই-এর সহযোগিতা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা যায়। এছাড়াও এর মাধ্যমে যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষাবিষয়ক অনেক সমস্যার সমাধান, অনুবাদ, টেক্সট পাঠ ও বিশ্লেষণ করা যায়। আরবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঠিক রেখে এক্ষেত্রে ব্যাপক আবিস্কার এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার প্রতিও বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে এবারের আয়োজনে।

আরবি ভাষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি কতটুকু ফলপ্রসু হবে, তা নিয়ে আরবি ভাষাবিদদের মাঝে মতবিনিময় চলছে। আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠান। অন্যদিকে আরবি ভাষার শেষ কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অক্ষম হওয়ার বিষয়ে প্রায় সকলেই সহমত পোষণ করেছেন।

যাইহোক, ১৮ই ডিসেম্বর আরবি ভাষা দিবস হলেও আরবি সব সময়ের জন্য আমাদের কাছে সমান গুরুত্বের। আরবি আমাদের দ্বীন-ইসলামের ভাষা। কুরআনের ভাষা। আমাদের প্রিয় নবীর ভাষা। তাই দিবস পালন আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং সবসময় গুরুত্বের সাথে আমাদের সকলকেই আরবি ভাষার প্রচার-প্রসারে ভূমিকা রাখতে হবে। এ ভাষার খেদমতে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনীয় সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সাধারণ মুসলিমদেরকে কুরআনে কারীম শেখানোর মাধ্যমে আরবি ভাষার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আলেম সমাজকে কাজ করতে হবে। তালিবুল ইলমদেরকে উচ্চতর আরবি ভাষা শিখতে এবং এ ভাষায় গভীরতা অর্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শুধু কুরআনে কারীম ও ইবাদতের ভাষা হিসেবেই নয়; বরং জীবন্ত ও ব্যবহারিক ভাষা হিসেবেও আরবি ভাষা এবং আরবি শব্দের ব্যাপক প্রচারে সচেষ্ট হতে হবে। আরবি ভাষার প্রচারে আরবি মাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। সার্বিক উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কুরআনের ভাষা আরবি প্রতিটি হৃদয়ে স্থান করে নিক। এ ভাষা ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে, সব প্রতিষ্ঠানে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে স্কুল ও মাদরাসার সিলেবাসে অধিক পরিমাণে অন্তুর্ভূক্ত হোক আরবি বিষয়াদি। আরবির ভালোবাসায় জেগে উঠুক প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি প্রাণ।

লেখক: আরবি ভাষা শিক্ষক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ

এনএ/


সম্পর্কিত খবর